নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ:
বিএনপির ডাকা সকাল সন্ধ্যা হরতালকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে। এতে পুলিশের একজন সদস্য আহত হওয়ার পাশাপাশি ২০ জন গুলিবিদ্ধসহ বিএনপির অন্তত ৬০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। অপরদিকে, সিটি কর্পোরেশনের ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকসহ বিএনপির ১৪ নেতাকর্মী গ্রেফতারের খবর পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, হরতালের সমর্থনে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে সকাল ৮টায় মিছিলের জন্য জড়ো হতে থাকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। এসময় মিছিল নিয়ে বের হলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এসময় পুলিশকে লক্ষ্য ইটপাটকেল ছুড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাবার বুলেট ছোড়ে ও টিয়াল শেল নিক্ষেপ করে। প্রায় আধা ঘন্টার এই সংঘর্ষে বিএনপির অন্তত ১০ জন নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে জানা গেছে।
সকাল ৯টার দিকে হরতালের সমর্থনে মিশনপাড়া এলাকায় মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রাহিদ ইশতিয়াকের নেতৃত্বে মিছিল বের করে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা। মিছিলের খবরে পুলিশ ধাওয়া দিলে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ইটপাটকেল ছুড়ে ও সড়কে অগ্নিসংযোগ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে পুলিশ। এসময় ছাত্রদল নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
সাড়ে ৯টার দিকেই ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোডের ভুইগড়ে হরতালের সমর্থনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে মিছিল করে জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। মিছিল করে সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেন তারা এবং টায়ারে অগ্নিসংযোগ করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
বেলা ১১টার দিকে মিশনপাড়া মোড়ে উৎসব পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বত্তরা এবং বন্ধু পরিবহনের একটি বাসে ভাংচুর চালানো হয়। এসময় উৎসব বাসের ৬টি সিট পুড়ে যায়, স্থানীয়দের সহযোগীতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে এসে আগুন নেভানোসহ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
এদিকে, সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত আড়াইহাজারে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। হরতালের সমর্থনে আড়াইহাজার উপজেলার পাঁচরুখী এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম আজাদের নেতৃত্বে মহাসড়ক অবরোধ করে মিছিল বের করে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। এসময় পুলিশের সঙ্গে কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে প্রায় ঘন্টাখানেক এই মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিলো। এসময় পুলিশের ছোড়া গুলিতে ১৫জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৫০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে দাবি বিএনপির।
একইসময়ে সোনারগাঁ উপজেলার মোগরাপাড়া এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে টায়ার পুড়িয়ে আগুন জ¦ালিয়ে অবরোধের চেষ্টা করে সোনারগাঁ বিএনপির নেতাকর্মীরা। পুলিশ তাদের ধাওয়া দিয়ে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়।
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকায় সকালে সড়ক অবরোধ করে মিছিল করলে পুলিশ সিটি কর্পোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন, ২নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোক্তার হোসেন, সহ-সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম, ফারুক, ইসমাইলসহ ৭জনকে আটক করেছে বলে দাবি বিএনপির।
এদিকে, স্থানীয় আওয়ামীলীগ কার্যালয় ভাংচুর ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় বন্দর থানায় দায়েরকৃত মামলায় বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বিএনপির ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলো, বন্দর থানাধীণ ২০নং ওয়ার্ডের উত্তর বেপারী পাড়া এলাকা মৃত আবুল হোসেন মিয়ার ছেলে শামীম হাসান (৪০), মদনপুর চানপুর এলাকার আবুল কালাম মিয়ার ছেলে দিপু (২৮), রেললাইন উত্তর পাড়া এলাকার মৃত রাশেদুল ইসলামের ছেলে মাসুম (৩৭), তিনগাঁ এলাকার মৃত ওয়াজউদ্দিন মিয়ার ছেলে মোখলেসুর রহমান (৫৮), দাসেরগাঁও এলাকার আলী আহাম্মদ মিয়ার ছেলে শাহীন (৪০), কাইতাখালি এলাকার সিরাজুল ইসলামের ছেলে সোহেল মাহমুদ (৩২), লক্ষণখোলা এলাকার মৃত আব্দুল আউয়াল মিয়ার ছেলে আরিফুর রহমান (৫৩)।
মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুর রহমান সাগর বলেন, আমাদের সাধারণ সম্পাদক রাহিদ ইসতিয়াকের নেতৃত্বে শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ ধাওয়া দিয়েছে ও গুলি করেছে। রাহিদ হাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছে।
মহানগর যুবদলের আহবায়ক মনিরুল ইসলাম সজল বলেন, বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছে। পুলিশ অতর্কিত গুলি ছুড়ে আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে।
মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, গতকালকের (২৮ অক্টোবর) মহাসমাবেশ দেখে আওয়ামীলীগ সরকার, পুলিশ বাহিনী, ছাত্রলীগ-যুবলীগের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তাদের পায়ের তলায় মাটি নেই, তাই তারা মিথ্যা প্রপাগান্ডা ছড়িয়েছে। আওয়ামীলীগ পুলিশকে ব্যবহার করে এবং যুবলীগ-ছাত্রলীগ মিলে সন্ত্রাসী কায়দায় গুলি করে বিএনপির মহাসমাবেশকে পণ্ড করেছে। মহাসমাবেশকে পণ্ড করার প্রতিবাদে আজকের হরতালে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করার লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হতে থাকি। গাড়ি পোড়ানো বা ভাংচুরের আমাদের কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছিলো না, আমরা শান্তিপূর্ণ মিছিল করার লক্ষ্যে সকাল ৮টার সময় দিয়েছিলাম। আমাদের নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকলে ৮টার পূর্বেই পুলিশ আমাদের নেতাকর্মীদের উপর নির্বিচারে গুলি করে ১০জনকে আহত করেছে।
তিনি বলেন, মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রাহিদ ইসতিয়াক, যুবদল নেতা সুজন সম্রাট, ওয়াদুদ সাগরসহ ১০জনকে আহত করেছে। পুলিশ আমাদেরকে রাস্তায় দাড়াতে দেয় নাই। তারপরে আমরা হরতালের সমর্থনে শহরে মিছিল করেছি। পরে আমরা শুনতে পারলাম মিশনপাড়ায় একটি বাসে আগুন দেয়া হয়েছে। আমাদের মিছিল শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়ে যাওয়ার পর আমাদেরকে বেকায়দায় ফেলার জন্য আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা গাড়িতে আগুন লাগিয়েছে। এ ধরনের সন্ত্রাসী ও ন্যাক্কারজনক ঘটনার আমরা তীব্র নিন্দা জানাই।
পুলিশের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, পুলিশকে আহবান করবো, আপনারা কোনো দলের না, এইভাবে ব্যবহৃত হবেন না। যদি ব্যবহৃত হতে থাকেন, এই দল চিরস্থায়ী ক্ষমতায় থাকবে না, তখন আপনারা বিচারের সম্মুখীন হবেন, প্রশ্নের সম্মুখীন হবে এটুকু মনে রাখতে হবে। আপনারা কোনো দলের না, কোনো ব্যক্তির না, আপনারা দেশের ২০ কোটি মানুষের। আপনাদের আচরণ সন্ত্রাসী আকারের হওয়া উচিত না, আপনাদের আচরণ দেশের প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীর মতোই হওয়া উচিত।
এর আগে, সকাল ১০টার দিকে চাষাড়ায় গণমাধ্যমের সাথে আলাপকালে জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, জনগনের জানমাল নিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা করা হলে আমরা সর্বাত্মক আইনগত ব্যবস্থা নিবো। এখন পর্যন্ত আমাদের একজন পুলিশ সদস্য সামান্য আহত হয়েছে। আমরা তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিচ্ছি।