স্রোতে আরসিসি রাস্তা ভেঙ্গে পানির নিচে

147

নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ:

নারায়ণগঞ্জের ধলেশ্বরী নদীর পানির স্রোতে বক্তাবলীর আরসিসি রাস্তা ভেঙ্গে কৃষি জমি তলিয়ে গেছে। তলিয়ে গেছে কিছু ঘর-বাড়িও। ফলে যানচলাচল পুরোপুরি বন্ধ, এমনকি এলাকাবাসীর চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। তাছাড়া নদীর পানির তীব্র চাপ ও স্রোতের কারণে এলাকায় পানি প্রবেশ করায় বন্যা আতঙ্কে রয়েছে এলাকাবাসী। মঙ্গলবার (২১ জুন) ফতুল্লার বক্তাবলী ইউনিয়নের চর বক্তাবলী এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে এমন দৃশ্য।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তা ভেঙে যাওয়া সড়কের দুই দিকের মানুষের চলাচল বন্ধ রয়েছে। জনগনের চলাচলের সুবিধার্থে স্থানীয় চেয়ারম্যান শওকত আলী সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষণিক ভাবে বাঁশ কাঠ দিয়ে সাঁকো তৈরি করার ব্যবস্থা করছেন বলে জানায় স্থানীয়রা।

এদিকে মঙ্গলবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, ধলেশ্বরী নদী ঘেঁষা এলাকা বক্তাবলী ইউনিয়নের চর বক্তাবলী। এলাকাবাসীর সুবিধার্থে নদী ঘেঁষা এ গ্রামে একটা রাস্তা তৈরি করেন স্থানীয় চেয়ারম্যান শওকত আলী। কৃষি জমির জন্য পানি আদান প্রদানের স্বার্থে কালভার্ট তৈরি করে নির্মাণ করা হয় রাস্তাটি।

আর নদীর পাড় হতে ড্রেনের ব্যবস্থা করা হয়। ড্রেন দিয়ে নদী থেকে পানি আসা যাওয়া করা হয়। কিন্তু মাটি তলিয়ে ড্রেন দিয়ে পানি আসা যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানায় এলাকাবাসী। ফলে ধলেশ্বরী নদীর তীব্রচাপ ও স্রোতে আরসিসি রাস্তা ভেঙ্গে গিয়ে কৃষি জমি তলিয়ে গেছে। রাস্তা ভেঙে এলাকাবাসীর চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে চরম ভোগান্তির শিকার হয় এলাকার জনগন।

চরবক্তাবলি এলাকার যেই অংশে রাস্তাটি ভেঙ্গেছে, তার প্রায় ১০০ ফুট দুর দিয়ে বয়ে গেছে ধলেশ্বরী নদী। বন্যার প্রভাবে বক্তাবলীর কোল ঘেঁষে বয়ে যাওয়া ধলেশ্বরী নদীও ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। পানির উচ্চতা বেড়ে আশপাশের নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকছে। ভেঙ্গে যাওয়া আরসিসি ঢালাইয়ের সড়ক দিয়ে বর্তমানে তীব্র স্রোতে ঢুকছে নদীর বানের পানি। যদিও তা শাখা খাল হয়ে বেড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন কেউ কেউ।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত ৪ দিন আগে মধ্য রাতে হঠাৎ নদীর পানির তীব্র চাপে সড়কের ওই অংশটি ভেঙ্গে যায়। সড়কটি যেই স্থানে ভেঙ্গেছে তার নীচেই ড্রেন নির্মান করা হয়েছিল নদীর পানি স্বাচ্ছন্দে আসা যাওয়ার লক্ষ্যে। তবে, ওই ড্রেনটি বেশকিছুদিন ধরে আটকে ছিল। তাই নদীর পানি চাপ ও স্রোতে আরসিসি রাস্তাটাই ভেঙ্গে গেছে।

আর ধলেশ্বরী নদীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, পানির উচ্চতা ও স্রোত ক্রমশই বাড়ছে। নদীর পশ্চিম পাড়ের বিভিন্ন জায়গায় ভাঙ্গন দেখা যাচ্ছে। এতে যেকোন সময়ে নদীর পাড় ভাঙ্গন ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে; এমন শঙ্কায় আছেন স্থানীয়রা।

এদিকে রাস্তা ভেঙে কৃষি জমি এবং বসত বাড়িতে পানি উঠে যাওয়ার ঘটনার সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল ছুটে যান স্থানীয় চেয়ারম্যান এম শওকত আলী। পরিদর্শন করে তিনি জানান, জনগণের সুবিধার্থে ভেঙ্গে যাওয়া রাস্তাটি জরুরী ভিত্তিতে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে সাঁকো তৈরি করার কাজ শুরু করা হয়েছে। আশা করি আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে জনগণ এই রাস্তা দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে চলাচল করতে পারবে।

তবে রাস্তা পুন:নির্মাণ না করা পর্যন্ত গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকবে। রাস্তা নির্মাণ করার পর ফের গাড়ি চলাচল করতে পারবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে দ্রুত রাস্তা মেরামতের ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর আগে এই এলাকায় মানুষ চারিদিকে বসত ঘর নির্মান করে এবং তাদের সুবিধার্থে এখানে উঁচু রাস্তা নির্মান করা হয়। যেই স্থানে সড়কটি ভেঙ্গেছে, সেখানে পানি আসা যাওয়ার জন্য একটি ড্রেন লাইন করে দেয়া হয়েছিল। ড্রেনটি হয়তো কোন ভাবে আটকে গিয়েছিল। তাই বন্যার পানির চাপ এবং স্রোতের কারণে রাস্তাটা ভেঙ্গে পানি ঢুকে গেছে।’

রাস্তা টিকিয়ে রাখতে হলে করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন,‘ এই রাস্তা টিকিয়ে রাখতে হলে এখানে কয়েকটি প্রশস্ত কালভার্ট তৈরী করা প্রয়োজন। কালভার্ট তৈরী করা হলে নির্বিঘ্নে পানি আসা যাওয়া করতে পারবে। তখন রাস্তা আর ভাঙ্গবে না। আমি কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করবো, এই বক্তাবলী এলাকার স্বার্থে এ রাস্তায় যেন একাধিক কালভার্ট নির্মাণ করা হয়। তাহলে নির্মাণকৃত রাস্তাটিকে টিকিয়ে রাখা যাবে।