রফিকুল ইসলাম জীবন, নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ :
এবার বিভাগীয় শহরগুলিতে জনসভার ডাক দিয়েছে বিএনপি। আর এসব জনসভাকে ঘিরে দলটির ভেতরে স্থানীয় পর্যায়ে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। আজ থেকে শুরু হচ্ছে এই সমাবেশ। আজ চট্টগ্রাম বিভাগে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর আগামী ১০ ডিসেম্বর রাজধানী ঢাকায় হবে বিএনপির শেষ বিভাগীয় সমাবেশ।
আর এসব সমাবেশের মধ্য দিয়ে সারা দেশের জনগনকে জাগিয়ে তুলতে চায় বিএনপি। এরই মাঝে বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান ঘোষনা দিয়েছেন যে, দশ ডিসেম্বরের পর থেকে দেশ চলবে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে। ফলে তার এই বক্তব্য নিয়ে রাজনীতিতে ব্যাপক তোলপাড় চলছে।
এদিকে, চলমান আন্দোলন থেকে কোনো মতেই থামানো যাচ্ছে না বিএনপিকে। যতো দিন যাচ্ছে ততোই বিএনপির মিছিল ও জনসভাগুলিতে সাধারন মানুষের উপস্থিতি বাড়ছে। তাই বিএনপির নেতাকর্মীরা মনে করেন, দেশের জনগন আর শিকলবন্দী থাকতে চায় না। মানুষ এবার মুক্তি চায়।
তাদের মতে, আওয়ামীলীগ জোর করে রাস্ট্র ক্ষমতায় এসে উন্নয়নের নামে লুটপাটের রামরাজত্ব কায়েম করেছে। আর এ কারনেই দেশের সাধারন মানুষের মাঝে এখন হাহাকার বিরাজ করছে।
তারা মনে করেন, সরকারের দূর্ণীতির কারনেই দেশে দ্রব্যমূল্য বাড়ছে। ডলার সংকট সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। এতে সীমাহীন ভাবে বেড়েছে জ¦ালানির মূল্য। জ¦ালানী ও ডলারের মূল্য বাড়ার কারনে বেড়েছে খাদ্যমূল্য সহ সব কিছুর মূল্য। ফলে দেশের জনগনের মাঝে সরকারের জনপ্রিয়তা এখন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। আর স্বাভাবিক কারনেই বিক্ষুব্দ মানুষ এখন বিএনপির পতাকাতলে সমবেত হচ্ছে। তাই সরকার এবার জোর করে আর কতোদিন টিকে থাকবে সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
ধারনা করা হচ্ছে, আগামী বছরের শুরু থেকেই দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির নেতৃত্বে আন্দোলন আরো জোরালো হয়ে উঠবে। এটা বুঝতে পারছে সরকারও। তাই সরকার বিএনপিকে কিভাবে দমানো যায় সেই পথ খুঁজছে।
অপরদিকে, বিএনপির আন্দোলন থামানোর জন্য এরই মাঝে অতীতের মতো খড়গহস্ত হয়েছে পুলিশ। সরাসরি গুলি করে দলটির মাঠের কর্মীদের হত্যা করা হয়েছে। ভোলায় ছাত্রদলের দুইজন, নারায়ণগঞ্জে যুবদলের একজন এবং মুন্সীগঞ্জে যুবদলের একজনকে হত্যা করা হয়েছে।
অনেকে ধারণা করছেন, এভাবে গুলি করে বিএনপির কর্মী হত্যা করে সরকার বিএনপিকে ভয় দেখাতে চেয়েছে। কিন্তু এভাবে একের পর এক কর্মী হত্যার পর বিএনপির নেতাকর্মীরা ভয় পাওয়াতো দূরের কথা তাদের মিছিল আরো বড় হয়েছে। নেতাকর্মীরা আরো অধিক হারে মাঠে নেমেছে। তারা এখন স্লোগান দিচ্ছে ‘গুলি করে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না’। তাই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠেছে।
বিএনপির নেতাকর্মীরা মনে করেন, মূলত বেশ কয়েকটি কারনে সারা দেশে এখন আন্দোলন দানা বেধে উঠছে। বিষয়টি এখন সরকার বনাম জনগনের বিষয় হয়ে উঠেছে। মোটা দাগে যে কয়টি কারনে সরকারের উপর জনগণ বিক্ষুব্দ হয়ে উঠেছে তার মাঝে অন্যতম হলো ১) দ্রব্যমূল্য, ২) দূর্ণীতি লুটপাট ৩) আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি ৪) জনগনের ভোটের অধিকার সহ সকল প্রকারের অধিকার হরন ৫) আইনশৃংখলা বাহিনী এবং সরকারী দলের নেতাকর্মীদের ঔদ্ধত্বপূর্ণ আচরন। এছাড়া আরো বহু কারন রয়েছে বলে বিএনপি নেতাকর্মীরা।
তবে, এই পাঁচ কারনে দেশের সর্বস্তরের সাধারন মানুষের মাঝে সরকারের প্রতি ক্ষোভ আরো বাড়ছে। সরকার কোনো মতেই দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়াকে থামাতে পারছে না। উন্নয়নের নামে লুটপাট চলছেতো চলছেই। মিডিয়ায় হাজার হাজার কোটি টাকা পাঁচারের খবর ফলাও করে প্রচার হচ্ছে। তাই আগামী দিনগুলিতে বিএনপির কর্মসূচিগুলিতে সাধারন মানুষ আরো অধিক হারে যোগ দেবে বলে ধারনা করছে বিএনপির নেতাকর্মীরা।
এসব কারনে সরকারের দমনপীড়ন সত্বেও বিএনপির মিছিল দিনে দিনে আরো বড় হচ্ছে। ফলে সারা দেশেই চাঙ্গা হয়ে উঠেছে বিএনপির নেতাকর্মীরা।