নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ:
দিন যতই যাচ্ছে ততই ঘনিয়ে আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সব দলের অংশগ্রহনে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হলে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে বলে আসনটিতে এমন ধারণা করা হচ্ছে।
দলটি থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন পাঁচজন। এরা হলেন এই আসনের সাবেক এমপি আলহাজ্ব মুহম্মদ গিয়াস উদ্দিন, বিএনপি থেকে পদত্যাগী নেতা আলহাজ্ব মোহাম্মদ শাহআলম, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মামুন মাহমুদ, ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার মনিরুল ইসলাম এবং ইসলামী ঐক্যজোট নেতা মনির হোসেন কাশেমী।
এই পাঁচ নেতার মাঝে আলহাজ্ব মুহম্মদ গিয়াস উদ্দিন ২০০১ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে এই আসনের এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি যে এবারও মনোনয়ন চাইবেন এটা একেবারেই নিশ্চিত বলে দাবি তার ঘনিষ্ঠজনদের। এরই মাঝে তিনি বেশ জোরালো ভাবে মাঠে নেমেছেন এবং সরকারের বিরুদ্ধে জোরালো বক্তব্য রেখে এই আসনের জনগনকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছেন। তার দলের নেতাকর্মীদেরও ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছেন তিনি। আগামী নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নকে টার্গেট করেই তিনি মাঠে নেমেছেন বলে দাবি তাদের।
এদিকে ২০০৬ সালের নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন আলহাজ্ব মোহাম্মদ শাহআলম। তিনি সারাহ বেগম কবরীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজীত হয়েছিলেন। কিন্তু বিগত নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার পরও অংশ নেননি তিনি। তার জায়গায় এসেছিলেন হেফাজতে ইসলামের নেতা মনির হোসেন কাশেমী।
পরে শাহআলম দল থেকে পদত্যাগ করেন এবং তিনি বলেন তিনি আর রাজনীতি করবেন না। তবে এই আসনের সাধারন মানুষ মনে করেন এটা শাহআলমের একটি কৌশল। তিনি বড় ব্যবসায়ী। সরকারের রোষানল থেকে বাঁচতে তিনি দল ছেড়েছেন বলে অনেকে মনে করেন। তাই আগামী নির্বাচন যদি অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যায় তাহলে আবারও তিনি যে বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন এতে কারোই কোনো সন্দেহ নেই।
শাহআলম অনুসারীদের মতে, প্রয়োজনে মোটা অংকের টাকা দিয়ে বিএনপির মনোনয়ন আনবেন শাহআলম। তাই তিনি দল ত্যাগ করলেও অনুসারীদেরকে টাকা পয়সা দিয়ে ঠিকই চাঙ্গা রাখছেন। ফলে তিনিও যে মনোনয়ন চাইবেন এটাও প্রায় নিশ্চিত।
অপরদিকে, এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন চাইতে পারেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মামুন মাহমুদ। তার বাড়ি সিদ্ধিরগঞ্জ। দলে তার তেমন কোনো গ্রহনযোগ্যতা না থাকলেও পরপর দুই বার দলের বড় পদে আসিন হয়েছেন তিনি। জানা গেছে, কিছু টাকাওয়ালা নেতা আর সরকারী দলের এক প্রভাবশালী নেতার আশির্বাদে রয়েছেন তিনি। তাদের কারনেই তিনি দুইবার বিএনপির সাধারন সম্পাদক বা সদস্য সচিবের পদটি বাগিয়ে নিয়েছেন বলেও দাবি তৃণমূলের নেতাকর্মীদের। একই কায়দায় আগামী নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন বাগিয়ে আনলেও কারো অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না বলেই মনে করেন অনেকে।
ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার মনিরুল ইসলাম এই দলের একজন সিনিয়র নেতা এবং শিক্ষিত ব্যাক্তি। সেই জাগো দল থেকে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত তিনি। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের রাজনীতিতে তিনি একজন পরিচিত ব্যাক্তিত্ব। ফতুল্লার রাজনীতিতে মাঠ পর্যায়ে তার বেশ গ্রহনযোগ্যতা রয়েছে। তাই তিনিও এবার বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।
আসন্ন নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক চাইবেন এমন সর্বশেষ ব্যক্তিটি হলেন মনির হোসেন কাশেমী। এই কাশেমী গত নির্বাচনে হঠাৎ বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে যান। মনোনয়ন পাওয়ার আগে এই ব্যাক্তিকে কেউ চিনতোই না। ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীদের দাবি, এই মনির হোসেন কাশেমীর না আছে কোনো পরিচিতি বা না আছে কোনো সাংগঠনিক আস্তিত্ব। তাই এমন একজন মানুষ নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের মনোনয়ন পাওয়ার সাথে সাথেই তার পরাজয়ের বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায়।
তখন অনেকে প্রশ্ন তুলেছিলেন এমন একজন ব্যাক্তিকে বিএনপির মতো দল মনোনয়ন দিলো কি ভাবে? তিনি মনোনয়ন পেয়ে এক মিনিটও মাঠে দাড়াতে পারেননি। বরং নির্বাচনের মাঠ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন বলেও দাবি বিএনপি নেতাকর্মীদের। অথচ এই ব্যাক্তি আবারও বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে। তাই তিনি যদি ধানের শীষ চান তাহলে এ পর্যন্ত জনপ্রিয় এই প্রতীকটির দাবিদার এই আসনে পাঁচজন।
তবে এই পাঁজননের মাঝে সবচেয়ে জনপ্রিয় কে সেটা এখন দিবালোকের মতো পরিস্কার। কিন্তু বিএনপি এখন আর জনপ্রিয়তা দেখে না বলেই অনেকে মনে করেন। যে বেশি টাকা দিতে পারবে সেই পেয়ে যেতে পারেন এই দলের মনোনয়ন। তাই আগামী নির্বাচনে এই আসনে কি ঘটে সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরো কয়েক মাস। নির্বাচনে যদি সব দলের অংশগ্রহনে সুষ্ঠু হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয় তাহলে এখানে যে মনোনয়ন নিয়ে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে এতে কারোই কোনো সন্দেহ নেই।