সিদ্ধিরগঞ্জে পকেট কমিটি গঠনে ব্যর্থ মামুন মাহমুদ...

বঞ্চিত নেতাকর্মীদের হামলায় সম্মেলন পন্ড

98
বঞ্চিত নেতাকর্মীদের হামলায় সম্মেলন পন্ড

নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ :

এবার সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির পকেট কমিটি গঠনের লক্ষ্যে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মামুন মাহমুদ যে সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন, দলের বঞ্চিত ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের হামলায় সেই সম্মেলন পন্ড হয়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে দফায় দফায় হামলা, ককটেল বিস্ফোরণ ও সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে এই সম্মেলন পন্ড হয়ে গেছে। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০ টায় সিদ্ধিরগঞ্জের গ্র্যান্ডতাজ পার্টি সেন্টারে এ সম্মেলন হবার কথা ছিল।

হামলা ও সংঘর্ষে জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক মনিরুল ইসলাম রবিসহ কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছে। সংঘর্ষে পার্টি সেন্টারটির প্রধান ফটক, চেয়ার টেবিল ব্যাপক ভাংচুর করা হয়। গোটা সিদ্ধিরগঞ্জ থানার বঞ্চিত নেতাকর্মীরা সম্মিলিত ভাবে এই হামলা চালিয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে সম্মেলন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল বিএনপির সহ সাংগঠনিক এডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ) বেনজীর আহমেদ টিটু। কিন্তু তারা আসার আগেই সম্মেলন পন্ড হয়ে যাওয়ায় তারা মাঝপথ থেকে ফিরে গেছেন।

জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক মনিরুল ইসলাম রবি ও সদস্য সচিব মামুন মাহমুদ সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকার বাসিন্দা। সম্মেলনে জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবি নেতাকর্মীদের রোষানলে পরে পিটুনির শিকার হন এবং মামুন মাহমুদ পালিয়ে যান।

সম্মেলনে আসা সাধারণ নেতা-কর্মীরা জানায়, দীর্ঘদিন যাবত সিদ্ধিগঞ্জ থানা বিএনপির কোন কমিটি নেই। কয়েকদিন পর পর পরিবর্তন হওয়া এবং একাধিক আহ্বায়ক কমিটি দিয়েই বিচ্ছিন্নভাবে চলছিলো সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির কার্য্যক্রম। ফলে বর্তমান জেলা বিএনপি সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কমিটির উদ্যোগ নেয়। যার সম্মেলন হওয়ার কথা ছিলো গতকাল শুক্রবার।

সকাল সাড়ে ৯ টায় জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদের সমর্থক থানা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজের নেতৃত্বে একটি মিছিল সম্মেলনস্থলে স্লোগান নিয়ে প্রবেশ করার পরপরই বিক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীরা হামলা চালায় বলে জানায় সম্মেলনে আসা সাধারণ নেতা-কর্মীরা।

হামলাকারীদের লাঠি-সোটা, লোহার রডের আঘাতে জেলা বিএনপির ভাপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবি, থানা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল হাই রাজু, সদস্য সচিব শাহ আলম, যুগ্ম-আহ্বায়ক রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজসহ ১৫ নেতাকর্মী আহত হয়। এতে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে সম্মেলনস্থলে আসা মামুন মাহমুদের সমর্থকরা। এসময় তারা দিকবিদিক ছুটাছুটি করতে থাকে। আতংক ছড়িয়ে পড়ে ঘটনাস্থলের চারপাশে।

জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক মনিরুল ইসলাম রবি জানায়, একটি মহলের অতর্কিত হামলার কারণে সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে। পরিস্থিত বর্তমানে শান্ত রয়েছে।

জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মামুন মাহমুদ জানায়, ওরা গত নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করেছে, আ’লীগ ঘেঁষা। পরিকল্পিতভাবে সম্মেলনকে পন্ড করতে আ’লীগের ছত্রছায়ায় সন্ত্রাসী কায়দায় লাঠি-সোটা ও রড দিয়ে বিএনপির সাধারণ নেতা-কর্মীদের উপর হামলা করা হয়েছে।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সদস্য ও নাসিক কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন জানান, এখানে নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত দলীয় পদ পদবি থেকে। কোন কর্মসূচি থাকলেও নেতাকর্মীদের জানানো হয় না। গতকাল থানা বিএনপির সম্মেলনের ব্যাপারেও নেতাকর্মীদের কাউকে জানানো হয়নি। এতে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ করতে গিয়ে নেতা-কর্মীরা সম্মেলন পন্ড করে দেয়।

তিনি আরো বলেন এই পবিত্র রমজান মাসে দলের পরিক্ষিত নেতাকর্মীদের না জানিয়ে মামুন মাহমুদ তার অনুগত বহিরাগত ব্যক্তিদের নিয়ে এই সম্মেলন করার চেষ্ঠা করেছেন। আপনারা সকলেই জানেন আমি নিজেও দলের জন্য দিনের পর দিন কিভাবে জেল খেটেছি। অথচ আমাকেও কিছু জানানো হয়নি। আমরা জানতে পেরেছি মামুন মাহমুদ নিজে দলের জেলা বিএনপির সভাপতি হওয়ার টার্গেট নিয়ে তিনি সিদ্ধিরগঞ্জ সহ থানায় থানায় পকেট কমিটি গঠন করছেন। কিছু অনুগত ব্যক্তি এবং বহিরাগতদের সঙ্গে নিয়ে এই সম্মেলন করার চেষ্টা করেছিলেন মামুন মাহমদু। তাই বিক্ষুদ্ধ নেতা কর্মীরা এটা হতে দেননি। তারা এই পকেট কমিটি গঠন প্রক্রিয়া পন্ড করে দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মশিউর রহমান জানান, এটি তাদের অভ্যন্তরীণ একটি প্রোগ্রাম ছিল। সেখানে নিজেদের মধ্যে সমস্যা থাকতে পারে। এখন পর্যন্ত আমরা কোনো অভিযোগ পাইনি।