না.গঞ্জ-৪ আসনে শাহআলম-কাসেমী-জব্বারের মাঝে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা

169

স্টাফ রিপোর্টার :
মাঠ না ছেড়ে যেকোনো মূল্যে নির্বাচন করার চূড়ান্ত স্বিদ্ধান্ত নিয়েছেন ফতুল্লার বিশিষ্ট শিল্পপতি শাহআলম। তিনি বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন। বিএনপি যদি তাকে মনোনয়ন না দিয়ে কোনো শরীক দলকে আসনটি ছেড়ে দেয়া তাহলেও নির্বাচন করবেন তিনি এবং প্রয়োজনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন তার অনুসারীরা। ফলে তিনি এখন আটঘাট বেধে মাঠে নামছেন বলে জানা গেছে। আর তিনি যদি নির্বাচন করেন তাহলে জোটের সম্ভাব্য প্রার্থী মনির হোসাইন কাসেমী এবং জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মাওলানা আবদুল জব্বার বিরাট চ্যালেঞ্জে পড়বেন বলে ধারনা করা হচ্ছে।
এদিকে এরই মাঝে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের রাজনীতিতে অনেটাই বদলে গেছে হিসাব নিকাস। এই আসনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের প্রার্থী হিসাবে জমিয়ত নেতা মনির হোসাইন কাসেমীর মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিৎ বলেই জানা গেছে। এরই মাঝে তার পক্ষে কিছুটা জনমতও গড়ে উঠেছে। কারন আসনটিতে বিএনপির ভোট বেশি। তাই অনেকের ধারনা ছিলো মনির হোসাইন কাসেমী পাবেন জোটের মনোনয়ন এবং তিনি ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে নির্বাচন করবেন। কিন্তু গত ২৩ অক্টোবর সরকার নতুন নির্বাচনী বিধিমালা প্রনয়ন করে আরপিও সংশোধন করেছে এবং নয়া বিধি অনুযায়ী জোট করলেও দলগুলিকে তাদের নিজ নিজ দলের প্রতিক নিয়ে নির্বাচন করতে হবে। ফলে সেই হিসাবে মনির হোসাইন কাসেমীর দল হলো জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এবং এই দলের প্রতিক হলো খেজুর গাছ। তাই মনির হোসাইন কাসেমী জোটের মনোনয়ন পেলেও তাকে নির্বাচন করতে হবে খেজুর গাছ প্রতিক নিয়ে। কারন এই খেজুর গাছই হলো তাদের দলীয় প্রতিক। ফলে গত বৃহস্পতিবার এই ঘোষনা দেয়ার পর থেকে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে একেবারে পাল্টে গেছে চিত্র। কারন তাকে বিএনপির নতেৃত্বাধীন জোটের মনোনয়ন দিলে আসনটিতে ধানের শীষ প্রতিক থাকছে না। যার ফলে খেজুর গাছের সাথে জামায়াতের দাড়িপাল্লা এবং অন্নান্য প্রতিকের লড়াই হবে।
এদিকে এই আসনে এই মুহুর্তে বিএনপি নেতা আলহাজ¦ মোহাম্মদ শাহআলমের ব্যাপক জনপ্রিয়তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সাধারন ভোটাররা মনে করেন আলহাজ¦ মোহাম্মদ শাহ আলম বিএনপির মনোনয়ন পেলে তিনি বিপুল ভোটে জয়ী হবেন। কারন তার সব ধরনের ইমেজ খুবই পজিটিভ। সমাজে তিনি একজন ভালো মানুষ হিসাবে পরিচিত এবং ফতুল্লার বিশিষ্ট শিল্পপতি। তাই তিনি মনোনয়ন পেলে এলাকার উন্নয়ন হবে বলে সাধারন মানুষের ধারনা। এছাড়া বিগত বহু বছর ধরে তিনি ফতুল্লার মানুষের সুখে-দু:খে পাশে দাড়িয়েছেন। মানুষ যেকোনো ধরেনর বিপদে পরে তার স্মরনাপন্ন হলে তিনি সাধ্য মতো সহযোগীতা করেছেন। তাই তিনি আগেই ঘোষনা করেছেন তিনি বিজয়ী হলে অবহেলিত ফতুল্লাকে পরিকল্পিত উন্নয়ন করবেন। তাই তিনি বিএনপির মনোনয়ন চাইছেন। তবে তার সমর্থকরা মনে করেন দল যদি তাকে মনোনয়ন নাও দেয় তার পরেও তিনি স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন।
এদিকে এই সময়ে এসে দুই কারনে মনির হোসাইন কাসেমীকে বিএনপি আসনটির মনোনয়ন নাও দিতে পারে। কারন,
১) তিনি ধানের শীষ প্রতিক পাচ্ছে না। ধানের শীষ একটি জনপ্রিয় প্রতিক। তাই তিনি যতি ধানের শীষ না পান তাহলে বিএনপির অন্ধ সমর্থকরাও তাকে ভোট নাও দিগতে পারেন। কারন আরো পরিস্কার ভাবে বুঝা যাবে তিনি বিএনপির কোনো প্রার্থী নন। প্রতিক হিসাবে খেজুর গাছ একেবারেই দূর্বল প্রতিক। তাই এই আসনে বিএনপির কোনো শক্ত প্রার্থী স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে সেই প্রার্থী জিতে যেতে পারেন। বিশেষ করে শিল্পপতি শাহাআলম যদি স্বতন্ত্র প্রার্থী হন তাহলে তিনি জিতে যাবেন। এছাড়া জামায়াত নেতা মাওলানা আবদুল জবব্বার দাড়ি পাল্লা নিয়ে নির্বাচন করলে তিনিও জিতে যেতে পারেন। তাই এসব বিবেচনায় শেষ পর্যন্ত বিএনপির নিশ্চিৎ আসন এবং শক্ত ঘাটি নারায়ণগঞ্জ-৪ এ জমিয়ত নেতা কাসেমী মনোনয়ন নাও পেতে পারেন।
২) জনপ্রিয়তার দিক থেকেও তিনি জনগনকে ঝাকুনি দেয়ার মতো কোনো নেতা নন। ইসলামী দল তথা কওমি মাদ্রাস ছাড়া আসনটির জনগনের সঙ্গে তার তেমন কোনো সম্পর্ক নেই। তাই এখন পর্যন্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একজন প্রার্থী হিসাবে তার তেমন কোনো জনপ্রিয়তা নেই। তার নিজের গ্রাম কিছুটা জনপ্রিয়তা লক্ষ করা গেলেও আসনটির সাতটি ইউনিয়নের জনগনের সাথে তার তেমন কোনো সম্পর্ক নেই। এরই মাঝে সমাজের বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে তিনি তেমন কোনো জনপ্রিয় প্রার্থী নন। কারন এই আসনে যে ইসলামী ভোট রয়েছে সেই ভোটের বেশি ভাগই জামায়াত এবং চরমোনাই সমর্থক। কিন্তু জামায়াত এবং চরমোনাই জোট করলে ইসলামী ভোটের বেশির ভাগ তারাই পাবেন।
তাই এই দুই কারনে শেষ পর্যন্ত মনির হোসেন কাসেমী বিএনপি জোটের মনোনয়ন পান কিনা এটা নিয়ে বিরাট সংসয় দেখা দিয়েছে।
অপরদিকে আসনটিতে বিএনপি নেতা আলহাজ¦ মুহম্মদ শাহআলম বেশ আটঘাট বেধে মাঠে নামার স্বিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি আগামী ১ নভেম্বর থেকে মাঠে নামবেন বলে জানিয়েছেন। সর্বশেষ তার স্বিদ্ধান্ত হলো এবার তিনি নির্বাচন করবেন এবং বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের জনপ্রিয় প্রার্থী হিসাবে তিনিই পাবেন বিএনপির মনোনয়ন এই বিশ্বাস নিয়েই তিনি মাঠে নামছেন। কিন্তু তারপরেও কোনো কারনে বিএনপি যদি তাকে মনোনয়ন না দিয়ে মনির হোসাইন কাসেমীকে দেয় তাহলে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন বলে তার অনুসারীরা জানিয়েছেন। আর সেই ক্ষেত্রে শাহ আলমের সাথে জামায়াতের মাওলানা আবদুল জব্বার এবং জমিয়তের মনির হোসাই কাসেমীর ত্রিমুখী লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।