না.গঞ্জ থেকে শুরু হচ্ছে বিএনপির আদালত কেন্দ্রীক কর্মসূচি

90

# অবৈধ সরকার এবার বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে নির্বাচনে পার পেতে চাইছে : এডভোকেট সাখাওয়াত

# বিচারকরা গর্ব করে বলেন তারা কে কোথায় কখন ছাত্রলীগ করেছেন : এডভোকেট বারী ভুইয়া

নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ:

আজ নারায়ণগঞ্জ থেকে শুরু হচ্ছে বিএনপির আদালত কেন্দ্রীক আন্দোলন কর্মসূচি। বিএনপির আইনজীবী নেতারা জানিয়েছেন সরকার এবার প্রশাসনের পাশাপাশি বিচার বিভাগকে ব্যাবহার করে কারচুপির নির্বাচন করতে চাইছে। তাই সারা দেশে বিএনপির আইনজীবীরা বাধ্য হয়ে আদালত কেন্দ্রীক আন্দোলন শুরু করতে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসাবে নারায়ণগঞ্জ থেকে আজ প্রথম কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। গতকাল এ প্রতিনিধিকে এসব তথ্য জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক এডভোকেট সাখাওয়াৎ হোসেন খান এবং ফতুল্লা থানা বিএনপির সাধারন সম্পাদক এডভোকেট বারী ভুইয়া। তরা নারায়ণগঞ্জের সর্ব স্থরের আইনজীবীদেরকে আজ ভোটের অধিকার আদায়ের এই আন্দোলনে যোগ দেয়ার আহবান জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ বারের সাবেক সভাপতি ও মহানগর বিএনপির আহবায়ক এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন বর্তমান অবৈধ ফ্যাসিষ্ট সরকার রাস্ট্র ক্ষমতা আকড়ে থাকার জন্য এবার আরো বেপরোয়া আচরন শুরু করেছে। সরকার বিচারকদের ব্যাবহার করে অন্যায় রায় দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের কারাগারে ঢুকিয়ে আরো একটি সাজানো নির্বাচন করার পায়তারা করছে। সরকারের এই অন্যায় এবং অবৈধ নির্দেশ পালন করতে গিয়ে বিচারকরা এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের জামিন দিচ্ছে না এবং গায়েবী মামলাগুলো দ্রুত শেষ করে সাজা দেয়ার পায়তারায় লিপ্ত রয়েছে।

মূলত এ কারনেই বিএনপি এবার এই কর্মসূচি ঘোষনা করেছে। নারায়ণগঞ্জ থেকেই প্রথম কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। আমরা নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে আদালত পর্যন্ত পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করবো। আমাদের আজকের এই কর্মসূচিতে যোগ দিতে ঢাকা থেকে সকল সিনিয়র আইনজীবীরা আসবেন। আমরা দেশের মানুষের ভোটের অধিকার আদায় করার জন্য আজকের কর্মসূচিতে যোগ দিতে নারায়ণগঞ্জের সকল আইনজীবীদের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।

অপরদিকে এ বিষয়ে একই রকম প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির অপর সাবেক সভাপতি ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সাধারন সম্পাদক এডভোকেট বারী ভুইয়া। তিনি বলেন সরকার রাজধানী এবং রাজধানীর আশপাশের জেলাগুলিতে যে সকল বিচারক নিয়োগ দিয়েছে তারা অধিকাংশই আওয়ামী লীগ তথা ছাত্রলীগের রাজনীতির সথে জরিত ছিলো। তারা এটা নিয়ে কোনো রকম রাকঢাক না রেখে প্রকাশ্যেই বলেন তারা কে কোথায় কতো সালে ছাত্রলীগের কোন পদে ছিলেন। এখন তাদের মাধ্যমে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের সাজা দিয়ে কারাগারে বন্দী করে রেখে এবারও বৈতরনী পার হতে চাচ্ছে এই অবৈধ সরকার। মূলত সরকারের নির্দেশেই এরা এখন বিরোধী দলের নেতাকর্মীদেরকে কোনো রকম জামিন দিচ্ছে না এবং মাত্র পনেরো দিন পর পর মামলাগুলির তারিখ ফেলছে। এসব দলীয় বিচারকরা যেনতেনভাবে বিনা অপরাধে গায়েবী মামলায় বিএনপি সহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদেরকে সাজা দিতে চাইছে। তাই বিএনপি বাধ্য হয়ে আদালত কেন্দ্রীক এই কর্মসূচি ঘোষনা করেছে। আমরা দলমত নির্বিশেষে সকল আইনজীবীদের প্রতি আজকের কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে দেশের গণমানুষের মুক্তির আন্দোলনে শামিল হওয়ার জন্য আহবান জানাচ্ছি।

এদিকে সর্বশেষ গত রোববার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের গাড়ি ভাঙচুরের একটি মামলায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ আট নেতার বিচারকার্যক্রম শুরু হয়েছে। ১৩ বছর আগের এই মামলায় মির্জা ফখরুল এবং দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলালসহ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত।

গত সোমবার অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় আদালতকেন্দ্রিক কর্মসূচির বিষয়ে আলোচনা হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। তবে এ বিষয়ে আইনজীবীদের সক্রিয় করে তাদের মাধ্যমেই কর্মসূচি গ্রহণের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে ওই সূত্র। এর লক্ষ্য, আদালত অঙ্গনে আইনজীবীদের সক্রিয় করা, সেই সঙ্গে কর্মসূচি দিয়ে ‘আদালত-পরিস্থিতি’ সব মহলের নজরে আনা।
বিএনপির সঙ্গে সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনে যুক্ত বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে। এর উদ্দেশ্য আরেকটি নীলনকশার নির্বাচনের রাস্তা পরিষ্কার করা।

প্রসঙ্গত বাংলাদেশের বিচার বিভাগ ক্রমে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে দেশে ও বিদেশে। বাংলাদেশিদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতিতে বিচারকদেরও রাখা হয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে বিশ্বনেতা ও নোবেলজয়ীদের বিবৃতিতেও আদালতকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

বিএনপির প্রধান খালেদা জিয়া ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামসহ সব জ্যেষ্ঠ নেতাই অসংখ্য মামলার আসামি। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৬টি, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ৫০টি, মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধে ৯৪টি মামলা হয়েছে। প্রতি মাসেই মির্জা ফখরুলকে মামলার হাজিরা দিতে আদালতে যেতে হয়।

দলে সর্বোচ্চ ৪৫১টি মামলা হয়েছে কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খানের বিরুদ্ধে। সপ্তাহের তিন-চার দিন তাঁকে আদালতে হাজিরা দিতে হয়। হাবীব-ঊন-নবী খান প্রথম আলোকে বলেন, যেদিন আদালতে যেতে হয় না, সেই দিনকে ঈদ মনে হয় তাঁর।

সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক আদেশে পুরোনো সব রাজনৈতিক মামলা দ্রুত শেষ করতে পুলিশের প্রতি নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর পেছনে বিএনপির আন্দোলন বানচাল করা এবং সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে দূরে সরানোর ‘দুরভিসন্ধি’ রয়েছে বলে অভিযোগ করছেন বিএনপির নেতারা। ইতিমধ্যে সেই দুরভিসন্ধির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলেও মনে করেন তাঁরা।

রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে। এর উদ্দেশ্য আরেকটি নীলনকশার নির্বাচনের রাস্তা পরিষ্কার করা।

গত মাসেই যুবদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকারসহ ১৭ জনের দুই বছরের সাজার রায় হয়েছে ২০১৩ সালের এক মামলায়। এর আগে গত ৩০ মে হাইকোর্ট সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে করা দুর্নীতির পৃথক দুই মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদের ৯ বছর, কেন্দ্রীয় নেতা আমানউল্লাহ আমানের ১৩ বছর সাজার রায় বহাল রাখেন।
এ ছাড়া দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, কেন্দ্রীয় নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, হাবীব-ঊন-নবী খান, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী, সুলতান সালাহউদ্দিনসহ কয়েক ডজন নেতার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে। তাঁদের প্রায় সবাই আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছেন।

দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের অগ্নিসংযোগ ও নাশকতার মামলাগুলোর বিচারকার্যক্রম দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। কিছু মামলার বিচারকাজ প্রায় শেষের দিকে। এসব মামলায় দলের নীতিনির্ধারণী পর্ষদ থেকে শুরু করে মধ্যম সারি ও মাঠপর্যায়ের সংগঠক অনেক নেতাই আসামি।

বিএনপির কেন্দ্রীয় আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল অভিযোগ করেন, ‘সরাসরি আইন মন্ত্রণালয় থেকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ এবং নির্দেশ করা হচ্ছে। সবকিছুই করা হচ্ছে আগামী নির্বাচন সামনে নিয়ে। এর লক্ষ্য বিরোধীদের স্তব্ধ করা।

এদিকে বিএনপির নেতারা বলছেন, পুরোনো মামলাগুলোর পাশাপাশি নেতা-কর্মীদের কাছে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে নতুন করে দায়ের হওয়া ‘গায়েবি’ মামলাগুলো। দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর জানিয়েছে, গত ২৮ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৪০ দিনে সারা দেশে নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ৩৩৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ১৪ হাজার ১৩০ জনকে।

এর মধ্যে ১ হাজার ৬৯০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০০৯ সাল থেকে সারা দেশে দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ১ লাখ ৪১ হাজার ৬৩৩টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৪৯ লাখ ২৬ হাজার ৪৯২ জনকে আসামি করা হয়।

বিএনপির উচ্চপর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই মুহূর্তে তাঁরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ‘পক্ষপাতমূলক’ বিচার নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। তাঁদের আশঙ্কা, সরকার আদালতকে ব্যবহার করে তড়িঘড়ি করে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মামলার বিচারকাজ শেষ করে সাজার রায় ঘোষণা করবে। যাতে তাঁরা নির্বাচনে প্রার্থী হতে না পারেন।

সম্প্রতি ঢাকায় এক সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন অভিযোগ করেছেন। যদিও আইন মন্ত্রণালয় ও সরকারের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হচ্ছে। তবে বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা কিছুদিন থেকে আদালতকেন্দ্রিক কর্মসূচির কথা ভাবছেন।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের বিচার বিভাগ ক্রমে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে দেশে ও বিদেশে। বাংলাদেশিদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতিতে বিচারকদেরও রাখা হয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে বিশ্বনেতা ও নোবেলজয়ীদের বিবৃতিতেও আদালতকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।’ তিনি বলেন, এর বিরুদ্ধে প্রবল জনমত সৃষ্টি হয়েছে। এটি ক্রমে শক্তিশালী অবস্থায় যাচ্ছে। আন্দোলন চলমান আছে। যখন যে কর্মসূচির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে, তখন সে কর্মসূচিই দেওয়া হবে।