নেতাকর্মীদের দাবি, মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড. সাখাওয়াত ও সদস্য সচিব টিপুর গোয়ার্তুমির কারণে...

ক্ষুদ্র পরিসরে জনসমাবেশ হওয়ায় মির্জা আব্বাসের ক্ষোভ

29
ক্ষুদ্র পরিসরে জনসমাবেশ হওয়ায় মির্জা আব্বাসের ক্ষোভ

নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ:

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত জনসমাবেশের জায়গা দেখে অত্যন্ত ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। চাষাড়ায় শহীদ মিনারের মতো ছোট জায়গায় জনসমাবেশ আয়োজন করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আয়োজকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমার সামনে উপস্থিত ভাই ও বোনেরা আপনার একটু অস্থির অবস্থার মধ্যে আছেন বুঝতে পারছি। জায়গাটা খুব ছোটো হয়ে গেছে, খুবই ছোটো হয়ে গেছে জায়গাটা। কেন আপনারা তো পারতেন রাস্তার দিকে জনসমাবেশটা করতে, করতে পারলেন না। শুনেন আগামীতে নারায়ণগঞ্জের কোনো মিটিং এই শহীদ মিনারে হবে না।

তিনি বলেন, মিটিং যদি করতে হয় আমরা অন্য কোথাও করবো। এই ছোট পরিসরে বিএনপির মিটিং হয়না। বিএনপি একটি দল, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দল। এই দলের প্রতিষ্ঠা করেছেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। এই দল চালাচ্ছেন এখন আমাদের নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব। সেই দলের এতো ছোট জায়গায় কখনো জায়গা হওয়ার কথা না। আমি আরও অনেক মিটিং করেছি, আরও হয়তো করবো ইনশাআল্লাহ। আমাদের নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় আজকে সভা করেছে। তারা কেউ আজকে এতো ছোট জায়গায় সভা করে নাই।

উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অধিনস্থ আদালত এবং সরকারের অবজ্ঞা, গায়েবী মামলায় নির্বিচারে গ্রেফতার, মিথ্যা মামলা ও পুলিশি হয়রানী, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের লোড শেডিং, আওয়ামী সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদে এবং ১০ দফা বাস্তবায়নের দাবীতে আয়োজিত জনসমাবেশে তিনি এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

গতকাল শুক্রবার (১৯ মে) বিকেলে কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির উদ্যোগের চাষাড়ায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এই জনসমাবেশের আয়োজন করা হয়।

বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ চেয়েছিলো আরো বড় পরিসরে এই জনসমাবেশের আয়োজন করতে। এ লক্ষ্যে তারা মহানগর বিএনপির নেতৃবৃন্দের সাথে বেশ কয়েকবার আলোচনা করে। কিন্তু, মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপুর গোয়ার্তুমির কারণে অবশেষে শহীদ মিনারের মতো ছোট পরিসরে এ জনসমাবেশের আয়োজন করা হয়।

মির্জা আব্বাসের ক্ষোভের সাথে সুর মিলিয়ে সমাবেশে উপস্থিত জেলার আওতাভুক্ত বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা দৈনিক শীতলক্ষাকে বলেন, জেলা বিএনপির আহবায়ক গিয়াস উদ্দিনের ডাকে সাড়া দিয়ে জেলার আওতাধীন সকল উপজেলা-থানা, ইউনিয়ন-ওয়ার্ড ও ইউনিট কমিটি থেকে বিশাল বিশাল মিছিল নিয়ে বিপুল সংখ্যক লোক আসে আজকের এই জনসমাবেশে। কিন্তু সমাবেশস্থল অত্যন্ত ছোট হওয়ায় শহীদ মিনারের ভেতরের চেয়ে বাইরে ও আশেপাশের রাস্তায় লোক ছিলো কয়েকগুন বেশী। এমনকি শহীদ মিনারের পেছনের সড়ক পূর্ণ হয়ে প্রেসক্লাব পর্যন্ত ব্যাপক লোক সমাগম হয়। মির্জা আব্বাস সাহেবের মতো আমরাও জানতে চাই কার স্বার্থে এতো ছোট পরিসরে তথা শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এতো বড় একটি জনসমাবেশের আয়োজন করা হলো।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা আব্বাস বলেন, আমি আপনাদের অনুরোধ করবো, যদি বিএনপি করেন, যদি দেশকে ভালোবাসেন, দেশের মানুষকে ভালোবাসেন তাহলে আগামীতে আপনাদের নিজেদের মধ্যে ঐক্যটা ঠিক রেখে আগামীতে আমরা শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করবো। নিজেদের বিরুদ্ধে নয়, একথাটা মাথায় রাখতে হবে।

তিনি বলেন, আজকে এই দেশের যে অবস্থা, এই দেশকে রক্ষা করার জন্য একটা মাত্র কাজ আমাদের সামনে আছে। সেটা হলো এই লুটেরা সরকারকে বিদায় করতে হবে, এই লুটেরা সরকারকে রেখে দেশের কোনো উন্নয়ন কোনোদিন সম্ভব না। মানুষের পেটে ক্ষুধা রেখে ২টা ব্রীজ করলেই দেশের উন্নয়ন হয় না। মানুষের পেটে যদি ভাত না থাকে উন্নয়ন দিয়ে কি হবে? আগে পেটে ভাত, পরে উন্নয়ন। তারপরও উন্নয়নের প্রয়োজন আছে, কিন্তু সেই উন্নয়ন করতে গিয়ে যদি আপনার পকেট ভারী করে ফেলেন, দেশের উন্নয়নের চেয়ে নিজের পকেটের বেশী উন্নয়ন হয়, আত্মীয় স্বজনের উন্নয়ন হয়, টাকা সব খেয়ে ফেলেন, তাহলে সেই উন্নয়ন আমাদের প্রয়োজন হয়।

তিনি আরও বলেন, একটা রাস্তা বা ব্রীজ করতে পাশের দেশে লাগে ৯ হাজার ডলার, কিন্তু আমাদের দেশে লাগে ৩০ হাজার ডলার। এটা কি ফাইজলামি নাকি, এটা মগের মুল্লুক, লুটপাট করে খেয়ে ফেলছে সব। আজকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাবৃন্দ একে অপরের বিরুদ্ধে লেগে আছে, এ বলে তুই বেশী খাইসোস, ও বলে তুই বেশী খাইসোস।

সরকারী দল ও ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এখনো সময় আছে দেশের মানুষের চোখের ভাষা, মুখের ভাষা, দেহের ভাষা বুঝতে চেষ্টা করেন। তা নাহলে পালানোর পথ খুঁজে পাবেন না। ওবায়দুল কাদের সাহেব যা টাকা কামাইসেন তা নিয়ে কিন্তু পালানোর পথ পাবেন না। শুনেন যদি আপোষে যান তো যাইতে পারেন, কিন্তু জোর করে যদি আমরা নামাই তাহলে পালাতে পারবেন না। আমরা না, এই দেশের জনগন আপনাদের বিচারের কাঠগড়ায় তুলবে। যারা গুম-খুন হয়েছে তাদের বাপ-মা, স্বজনরা আপনাদের ছেড়ে কথা বলবে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, দেশপ্রেমকে বুকে ধারণ করে ৭১ সালে যেভাবে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, এই দেশকে বাঁচাতে হলে ঠিক সেরকম মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে, আন্দোলন করতে হবে। যারা মুক্তিযুদ্ধে যেতে পারেন নাই তাদের মধ্যে একটি দু:খ আছে, তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, এই সামনে যে আসছে এই লড়াইয়ে মুক্তিযুদ্ধ করতে হবে। নেত্রী বাঁচানোর মুক্তিযুদ্ধ, দেশকে বাঁচানোর মুক্তিযুদ্ধ, নিজেকে বাঁচানোর মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে হবে।

সবশেষে তিনি হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, জাকির খান, মান্নান, টিটু, খোকা, জিকুসহ সকল নেতাকর্মীকে ইনশাআল্লাহ জেল থেকে আমরা মুক্ত করবো, আমরা আর এই সরকারের কাছে মুক্তি চাই না। আমরা নিজেরাই তাদেরকে মুক্ত করবো।

মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খানের সভাপতিত্বে এ জনসমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির আহবায়ক মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান, বর্তমান সদস্য সচিব গোলাম ফারুক খোকন, যুগ্ম আহবায়ক মাশুকুল ইসলাম রাজীব, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. টিপু, যুগ্ম আহবায়ক এড. জাকির হোসেন, এড. হুমায়ন কবির, মনির হোসেন খান, রিপন, মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক সাগর প্রধান, মোয়াজ্জেম হোসেন মন্টি, জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি প্রমুখ।