এক ভিন্ন ধাচের আন্দোলন নিয়ে রাজপথ কাপাচ্ছে বিএনপি...

কোনো কিছু করেই আর থামানো যাচ্ছে না জনস্রোত

86
কোনো কিছু করেই আর থামানো যাচ্ছে না জনস্রোত

নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ:

দেশের মানুষের ভোটের অধিকার আদায় করার জন্য মাঠে নেমেছে বিএনপি। দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন উর্ধ্বগতি এবং টানা চৌদ্দ বছর ধরে ব্যাপক দূর্ণীতি লুটপাটের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে দলটি। মানুষের কথা বলার অধিকার আদায় এবং গণমাধ্যমের অধিকার আদায় করার জন্য আন্দোলন করছে তারা। সারা দেশে গ্রামগঞ্জে, পাড়া মহল্লায় সর্বস্তরের সাধারন মানুষের উপর যে জুলুম অত্যাচার চলছে তার বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে জিয়াউর রহমান কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত দলটি।

তাই বিএনপি এবার এক ভিন্ন ধাচের আন্দোলন শুরু করেছে বলে মনে করে সাধারণ জনগন। সারা দেশে এই দলের নেতাকর্মীরাতো বটেই বরং সাধারন মানুষও ফুসে উঠেছে স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে। তাই এই লড়াইয়ে এবার বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে বিএনপি এমনটাই মনে করে দলটির নেতাকর্মীরা। ফলে বিএনপি এখন যে ধরনের আন্দোলন করছে তা বাংলাদেশের ইতিহাসে অভুতপূর্ব।

ফরিদপুর সহ সবগুলো বিভাগীয় জনসভায় হাজার হাজার নেতা কর্মী রাজপথে রাত কাটিয়েছেন। বিএনপির সমাবেশগুলিতে সরকারের তরফ থেকে অঘোষিত হরতাল ঢাকা হচ্ছে। সমাবেশের দুই দিন আগে থেকেই সকল প্রকারের যানবাহন বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। ফলে বিএনপির প্রত্যেকটি বিভাগীয় সমাবেশেই এমন দৃশ্যের অবতারনা হচ্ছে।

বিভাগের দূরের জেলাগুলো থেকে দুই/তিন দিন আগে থেকেই মানুষ চলে আসছে। তারা সঙ্গে করে শুকনো খাবার তথা চিড়া-মুড়ি নিয়ে আসছে। পরিবহন ধর্মঘটের নামে বাস ট্রাক সহ সকল প্রকারের যানবাহন বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। যার ফলে মাইলের পর মাইল পায়ে হেটেও সমাবেশে গিয়েছে মানুষ। এতে দিনে দিনে বিএনপির নেতাকর্মীরা আরো চাঙ্গা হচ্ছে। দলের জন্য তারা ত্যাগ শিকার করছে। আর তাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে দেশের সাধারন মানুষও।

ফলে পরিস্কার বুঝা যাচ্ছে যে, দেশের মানুষ একটি পরিবর্তনের জন্য মাঠে নামতে শুরু করেছে। আগামী দিনগুলিতে বিএনপির মিটিং মিছিলে জনসমাগম আরো বাড়বে বলেই মনে করেন দেশের রাজনৈতিক সচেতন সাধারন মানুষ।

এদিকে, গত ১১ নভেম্বর শুক্রবার আওয়ামী যুবলীগও রাজধানীতে একটি শোডাউন করেছে। আর এই শোডাউনে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নিজে। আড়াই বছর পর প্রধানমন্ত্রী নিজে মাঠে নামলেন। যুবলীগের এই সমাবেশে সারা দেশের নেতাকর্মীরা যোগ দিয়েছেন। ফলে বিশাল শোডাউন করেছে যুবলীগ। কিন্তু পার্থক্য হলো যুবলীগের এই সমাবেশে কেউ বাধা দেয়নি। বরং প্রশাসন সহযোগীতা করেছে। সারা দেশ থেকে তারা আরামে রাজধানীতে এসেছে। তাদেরকে খাবার এবং টাকা পয়সা দেয়া হয়েছে বলে জোর আলোচনা রয়েছে।

তাই শনিবারে ফরিদপুর বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের সাথে আগের দিন রাজধানীতে যুবলীগের সমাবেশের বিরাট পার্থক্য রয়েছে। তাই দুটি সমাবেশে মানুষের বিরাট উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও বিএনপির সমাবেশে মানুষ যোগ দিচ্ছে ঝুকি নিয়ে। পথে পথে পুলিশ তাদের অনেককে গ্রেফতার করেছে এবং সরকারী দলের লোকেরা তাদেরকে মারধোর করছে।

এর আগে, বরিশালের সমাবেশে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনের গাড়ি বহরে হামলা করে বিশটির বেশি গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে। ওই গাড়ি বহরে থাকা বহু নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়েছে। অনেককে হাসপাতালে যেতে হয়েছে। পথে ঘাটে এমন হামলার কথা জেনেও পায়ে হেটে, ট্রলারে চড়ে হাজার হাজার মানুষ এই সমাবেশে যোগ দিয়েছে। বিএনপির প্রত্যেকটি সমাবেশেই এভাবে যোগ দিচ্ছে মানুষ। তাই এরই মাঝে দেশের রাজনীতিতে একটি বিরাট পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে।

অপরদিকে, কেনো এভাবে সারা দেশে বিএনপি ঘুরে দাড়াতে সক্ষম হলো এই প্রশ্নের উত্তরে অনেকেই বলেন, মূলত তিন কারনে দেশের অধিকাংশ মানুষ বর্তমান সরকারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ১) দেশে সীমাহীন ভাবে বেড়ে গেছে দ্রব্যমূল্য। বহু মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে এখন দ্রব্যমূল্য। ২) সারা দেশে এখন অর্থনৈতিক সংকট বিরাজ করছে। সাধারন মানুষের আয় কমেছে কিন্তু ব্যায় বেড়েছে। অনিশ্চয়তার মাঝে পতিত হয়েছে সারা দেশের সাধারন মানুষের জীবন। ৩) সাধারন মানুষ ভোট দিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থী নির্বাচন করতে চাইছে। মানুষ মনে করেন তাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। তাই এই অধিকার ফিরে পাওয়া উচিৎ। মূলত এই তিন কারনে মানুষ মাঠে নেমে এসেছে এবং বিএনপির সমাবেশগুলিতে জনসমাগম বাড়ছে। আগামী দিনগুলিতে এই জনসমাগম আরো বাড়বে বলেই দেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকগন মনে করেন।