এক সেন্টুতেই টালমাটাল কুতুবপুরের রাজনীতি!

261
এক সেন্টুতেই টালমাটাল কুতুবপুরের রাজনীতি!

নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ:

কুতুবপুর ইউনিয়ন বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এখন জটিল সমীকরন চলছে। বিশেষ করে মনিরুল আলম সেন্টুকে নিয়ে উভয় দলের নেতারা বেশ জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখী হচ্ছেন বলে জানা গেছে। সেন্টু যে সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের একজন প্রিয় মানুষ এটা প্রমাণিত।

এছাড়া কুতুবপুরে সেন্টুর মতো জনপ্রিয় কোনো আওয়ামী লীগ নেতা না থাকায় এমপি শামীম ওসমানও বার বার তাকে বেঁছে নিয়েছেন। কিন্তু সেন্টুকে ছাড়তে চাইছেন না স্থানীয় বিএনপি নেতারাও। আর বিএনপির সাথে দীর্ঘদিন ঘর সংসার করার কারনে এই দলের নেতাকর্মীদের প্রতি মায়া কাটাতেও পারছেন না সেন্টু এমনটাই দাবি বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের।

এদিকে কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের চেয়ারটি দখলে রাখতে গিয়ে বার বার নানা কৌশল অবলম্বন করতে হচ্ছে বর্তমান চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টুকে। এর আগে দুইবার তাকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করতে হয়েছে। আর এবার তিনি নৌকা প্রতিক নিয়ে নির্বাচন করেছেন।

তবে নৌকা নিয়ে নির্বাচন করলেও তার মন পরে থাকছে বিএনপিতেই এমনটাই দাবি বিএনপি নেতাকর্মীদের। তাদের মতে, বিএনপির একেবারে তৃণমূল পর্যায় থেকে উঠে আসা নেতা সেন্টু। সেই তরুন বয়সে ছাত্র দলের রাজনীতির মধ্য দিয়ে বিএনপির রাজনীতিতে জড়ায় সে। এজন্য বিএনপিকে একেবারেই ভুলতে পারছেনা সেন্টু।

বিএনপির ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে মনিরুল আলম সেন্টু।

কুতুবপুরের আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা মনে করেন, এবার নৌকা প্রতিক নিয়ে জয়ী হওয়াটাও ছিলো কুতুবুপরের চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টুর আরো একটি নির্বাচনী কৌশল। তার প্রমাণ মিলেছে কুতুবপুর বিএনপির ঈদ পূনর্মিলনী অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার মধ্য দিয়ে।

বিএনপির ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন ফতুল্লা থানা বিএনপির সদস্য সচিব শহীদুল ইসলাম টিটু। অনুষ্ঠানে বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মাঝে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি লুৎফর রহমান খোকা এবং হাজী মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহ এতে উপস্থিত ছিলেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহলের মতে, এটা দিবালোকের মতোই পরিস্কার যে, আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতিক নৌকা নিয়ে জয়ী হলেও মনিরুল আলম সেন্টুর মন পরে রয়েছে বিএনপিতেই। তারা আরও বলেন, যেমনিভাবে মানুষ কোনোদিন তার শিকড় ভুলতে পারেনা, তেমনিভাবে সেন্টুও কোনোদিন বিএনপিকে ভুলতে পারবেনা।

তবে বিএনপির এই ঈদ পূনমির্লনী অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নানা রকম প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। সেন্টুর পক্ষ নিয়ে বিএনপি নেতা হাজী মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহ ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, চেয়ারম্যান সাহেব ইউনিয়ন পরিষদের একটি কাজের উদ্বোধন করতে যাচ্ছিলেন। পথে তাদের সঙ্গে দেখা। তখন তারা চেয়ারম্যান সাহেবকে অনুরোধ করেন তাদের সঙ্গে খেতে। ফলে চেয়ারম্যান সাহেব রাজী হয়ে যান এবং তাদের সঙ্গে খাওয়া দাওয়া করেন।

এদিকে, শহীদ উল্লাহর এমন বক্তব্যের পরেও ভার্চুয়াল মাধ্যম সহ নারায়ণগঞ্জ আ:লীগ-বিএনপিতে চলছে চেয়ারম্যান সেন্টুর সমালোচনা। তাদের বক্তব্য হলো সেন্টু এটা মোটেও ঠিক করেননি। তিনি এক সাথে আওয়ামী লীগ বিএনপি দুই দল করবেন এটা হতে পারে না।

তবে সেন্টুর ঘনিষ্ঠদের অনেকে লিখেছেন, সেন্টু যখন এলাকার চেয়ারম্যান তখন তিনি সকলের চেয়ারম্যান। তাই বিএনপির অনুষ্ঠানে গিয়ে তিনি ঠিকই করেছেন। তাকে দাওয়াত করা হলে তার সব দলের অনুষ্ঠানেই যাওয়া উচিৎ।

কিন্তু এর জবাবে অন্যরা বলেন এটা ঠিক নয়। কেননা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আর প্রেসিডেন্টও সকলের প্রধানমন্ত্রী আর প্রেসিডেন্ট। কিন্তু তারা যদি বিএনপির নেতাকর্মীদের তাদের অনুষ্ঠানে দাওয়াত করেন তাহলে তারা কি যাবেন?

সর্বোপরি নৌকা প্রতিক নিয়ে চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়ে বিএনপির ঈদ পুনর্মিলনীতে যোগ দিয়ে নতুন করে সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন মনিরুল আলম সেন্টু। তবে বাস্তবতা হলো এবার কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতিক নিয়ে জয়ী হওয়ায় সেন্টু এখন আওয়ামী লীগের এমনটাই দাবি বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মীদের। তাদের মতে, যে চেয়ারের লোভে দল পাল্টেছে সেন্টু, সেই চেয়ার নিয়েই থাকুক সে, বিএনপির কোনো সদস্য পদেও তাকে দেখতে চাননা তারা।

তবে, এখনো আওয়ামীলীগের কোনো পদ-পদবী পাননি সেন্টু। ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন হয়েছে আরো অনেক আগে। সেই কমিটিতে নেই মনিরুল আলম সেন্টু। আর কুতুবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটি এখনো গঠনই হয়নি। বিপরীতে এক সময় তিনি ফতুল্লা থানা বিএনপি এবং যুবদলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন।

আরো আগেই এক শিল্পপতির প্রচেষ্টার ফলে তাকে বিএনপি থেকে বাদ দিয়ে দেয়া হয়। এখন সেন্টু এবং শিল্পপতি দুইজনের একজনও বিএনপিতে নেই। ফলে সাংগঠনিক ভাবে মনিরুল আলম সেন্টু এখন বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ কোনো দলেই নেই।
এদিকে ফতুল্লার জনগনের মাঝে তাকে নিয়ে আরো একটি বড় প্রশ্ন রয়েছে। আর সেটা হলো তিনি যদি আওয়ামী লীগে কোনো পদ পান তাহলে কোন পদ পাবেন? কারন আওয়ামী লীগ যদি তাকে ইউনিয়ন পর্যায়ের কোনো কমিটিতে স্থান দেয় তাহলে তার মর্যাদাহানী হবে। কারন তিনি এক সময় বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন এবং তিনি ওই দলের দাপুটে নেতা ছিলেন। তিনি একাধারে থানা বিএনপির সাধারন সম্পাদক এবং থানা যুবদলের সভাপতি পদে ছিলেন। যদিও শেষ পর্যন্ত তিনি শিল্পপতির টাকার কাছে হেরে যান।

তবে, নৌকা নিয়ে নির্বাচন করেও তিনি সুখে নেই। যতোদূর জানা যায় কুতুবপুরের আওয়ামী লীগ নেতারা তাকে মেনে নিতে পারছেন না। আবার বিএনপির সাথে মিশলেও তাকে কথা শুনতে হচ্ছে। তাই এক সময়কার জনপ্রিয় এই বিএনপি নেতার আগামী দিনগুলি যে খুব একটা সুখকর হবে না সেটা সহজেই অনুমেয়। কারন নৌকা প্রতিক নিয়ে নির্বাচন করলেও বিএনপির একটি বড় অংশের নেতাকর্মীদের মাঝে তার গ্রহনযোগ্যতা রয়েছে। বিপরীতে তার আজকের এই অবস্থানের কারনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও তাকে খুব একটা ভালো চোখে দেখবে না।