“সব দোষ বিরোধী দলের আর পুলিশের”

151

শাহাদাৎ স্বাধীন

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যাওয়া ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোশ্যাল মিডিয়ার বার্তা আদান-প্রদানের মাধ্যমে ‘স্ক্রিম অব ফ্রাস্টেশন’ বা ‘হতাশার চিৎকার’-এর পাশাপাশি এখন কিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন।

শেখ হাসিনার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাদেরও কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ভারতীয় গণমাধ্যমে বক্তব্য দেন।

এসব বক্তব্যে যেসব অসঙ্গতি ও অপতথ্য থাকে তা যেমন আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতাকর্মীর জন্য হতাশাজনক, বাংলাদেশের জনগণের প্রতিও অবমাননাকর।

বাংলাদেশের অনেক গণমাধ্যম এসব বক্তব্যের হুবহু অনুবাদ প্রকাশ করে দায়িত্ব শেষ করছে। অথচ শেখ হাসিনার দাবি করা বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করা এবং সঠিক তথ্য ও প্রমাণ তুলে ধরা তাদের দায়িত্ব হওয়া উচিত ছিল।

গত ১৫-১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থায় শেখ হাসিনার নীতি ছিল, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একই কথা বারবার বলা। এটি করতে গিয়ে তিনি সত্য থেকে বিচ্যুত হতেন। লেখক হুমায়ুন আজাদও বলেছিলেন, ‘সত্য একবার বলতে হয়, সত্য বারবার বললে মিথ্যার মতো শোনায়। মিথ্যা বারবার বলতে হয়, মিথ্যা বারবার বললে সত্য বলে মনে হয়।’ দিল্লিতে বসে শেখ হাসিনা সেই তাঁর আগের নীতি এখনো অবলম্বন করছেন।

দেশে একটি রক্তস্নাত গণ-অভ্যুত্থানের মাত্র ১৫ মাস হতে চলেছে, অথচ সেই গণ-অভ্যুত্থানের রাজনৈতিক শক্তি, ছাত্রদের শক্তি, নাগরিক সমাজ ও কলমসৈনিকেরা নানা দলে-উপদলে বিভক্ত হয়ে গেছেন। যে সাধারণ মানুষ জীবন বাজি রেখে রাজপথে নেমেছিল, তাদের অনেকের প্রত্যাশা ফিকে হয়ে গেছে। কৃষক, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের কণ্ঠস্বর ও ন্যায্য দাবির প্রতি যেমন কর্ণপাত করা হয়নি, তেমনি উপেক্ষিত হয়েছে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ বিনির্মাণের প্রত্যয়।

গণ-অভ্যুত্থানের নারী কণ্ঠ যেমন অদৃশ্য হয়ে গেছে, তেমনি গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী সময়ে একটি বিশেষ মতাদর্শকেই বিশেষ আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে। ফলে ৩ আগস্টের শহীদ মিনার কিংবা ৫ আগস্টের সকালের যে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধে ছিল জাতি, তা আজ নানা দলে-উপদলে বিভক্ত। গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বা স্পিরিট বিনির্মাণের পক্ষে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও চিন্তাচেতনার বিকাশে জাতি হিসেবে আমাদের কাজ এখনো খুবই অল্প।

এ দুর্বলতার সুযোগে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা নানা মিথ্যার ফুলঝুরি নিয়ে আবার হাজির হচ্ছেন। দ্য ইনডিপেনডেন্ট, এএফপি, রয়টার্স–এর সঙ্গে সাক্ষাৎকার শেষ করে তিনি এবার দ্য উইক–এ একটি নিবন্ধ লিখেছেন। সম্প্রতি দিল্লি থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক পত্রিকাটিতে ‘অতীতেও আমি অনির্বাচিত রাজনীতিবিদদের মোকাবিলা করেছি’ শিরোনামে শেখ হাসিনার নিবন্ধটি প্রকাশ পেয়েছে। তাঁর এই লেখা যেন ‘বাঘ আর বোকা কৃষকের গল্পের’ পুনরাবৃত্তি। তিনি ভাবছেন, দেশের মানুষ বোকা কৃষক।

শেখ হাসিনার নিবন্ধটিতে অপতথ্যের অনেক উপাদান আছে। কারণ, তিনি অনেক অসত্য তথ্যকে এমনভাবে সাজিয়েছেন যেন তা সত্য মনে হয়; আর সত্যকে এমনভাবে গোপন করেছেন যেন তার কোনো অস্তিত্বই ছিল না।

শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থানকে ‘বিদেশি ষড়যন্ত্র’ বলে বর্ণনা করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের মানুষের ১৫ বছর ধরে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের সংগ্রাম, জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে ১ হাজার ৪০০ জনের প্রাণহানি (জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন অনুযায়ী) এবং ২০ হাজার মানুষের আহত হওয়াকে অসম্মান ও অমর্যাদা করেছেন।

সম্প্রতি দিল্লি থেকে প্রকাশিত দ্য উইক ম্যাগাজিনে ‘অতীতেও আমি অনির্বাচিত রাজনীতিবিদদের মোকাবিলা করেছি’ শিরোনামে শেখ হাসিনার নিবন্ধটি প্রকাশ পেয়েছে।ছবি: সংগৃহীত

১৯৭১ সালের পরাজিত শক্তিরা বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধকে ‘মুসলিম ভাইকে আলাদা করার গভীর ষড়যন্ত্র’ হিসেবে তুলে ৩০ লাখ শহীদের আত্মদানকে ছোট করতে চায়; শেখ হাসিনা যেন ভিন্নভাবে তাদের একটি রূপ ধারণ করেছেন। নিবন্ধে শেখ হাসিনা তাঁর শাসনামলকে ‘স্বর্ণযুগ’ হিসেবে বলে উপস্থাপন করে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে জবাবদিহিহীন এলিটদের ‘অনির্বাচিত’ সরকার হিসেবে বর্ননা করেছেন।

কিন্তু কেমন ছিল শেখ হাসিনার দীর্ঘ ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনামলের স্বর্ণযুগ? তিনি অসংখ্য গুম, খুন ও হেফাজতে মৃত্যু ঘটিয়েছেন; বিরোধী দল ও মতকে নির্যাতন, দমন–পীড়নের ব্যবস্থা তৈরি করেছেন। আয়নাঘরের মতো নিকৃষ্ট বন্দিশালা বানিয়েছেন।

বাংলাদেশি মানবাধিকার গবেষকদের মাধ্যমে নথিভুক্ত তথ্য ও সুইডেনভিত্তিক নেত্র নিউজের বিশ্লেষণ অনুসারে, ২০০৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী অন্তত ২ হাজার ৫৯৭ জনকে বিচারবহির্ভূত ও হেফাজতে নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করেছে। (নেত্র নিউজ, ১৩ নভেম্বর ২০২৩)।

শেখ হাসিনা তাঁর কলামে স্বীকার করেছেন, ২০১৪ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল অংশগ্রহণ না করায় তা অংশগ্রহণমূলক ছিল না। তিনি এ দায় ২০১৪ সালের বিরোধী দলের সহিংসতার ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন। অথচ দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো সংকটে পড়ে তাঁর সরকার একতরফাভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করায়।

মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের প্রতিবেদনকে উদ্ধৃতি করে প্রচারিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে ২ হাজার ৬৯৯টি বিচারবহির্ভূত হত্যা ও ৬৭৭টি জোরপূর্বক গুমের ঘটনা ঘটেছে। (দৈনিক বণিক বার্তা, ১২ আগস্ট ২০২৪)

শেখ হাসিনার শাসনামলে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের নামে সাংবাদিক, অ্যাকটিভিস্ট ও নাগরিক সমাজের কণ্ঠরোধ করা হয়েছে, যা বর্ণনাতীত। ২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের পাঁচ বছর সময়ে এই আইনের অধীন সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, অধিকারকর্মীসহ ৪ হাজার ৫২০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে এবং তাঁদের মধ্যে ১ হাজার ৫৪৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। (দৈনিক প্রথম আলো, ৩০ এপ্রিল ২০২৪)। এই আইনে লেখক মুশতাক আহমেদ তাঁর ফেসবুক পোস্টের কারণে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, কারাগারের হেফাজতে তাঁর মৃত্যু ঘটে।

শেখ হাসিনা যে বর্তমান সরকারকে অনির্বাচিত সরকার বলছেন, তা টেকনিক্যালি সঠিক, তবে এই সরকার বিশেষ পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ মতামতের ভিত্তিতে গঠিত হয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানের অংশগ্রহণকারীদের মতানৈক্যের ভিত্তিতে এবং সংস্কার ও একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচন আয়োজনের জন্য তা গঠন করা হয়েছে। আর এটি গণ-অভ্যুত্থানের সরকার। গণ-অভ্যুত্থান বা বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতা আসা সরকারকে নির্বাচিত বা অনির্বাচিত বলাই তো অপ্রাসঙ্গিক।

করেছেন, ২০১৪ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল অংশগ্রহণ না করায় তা অংশগ্রহণমূলক ছিল না। তিনি এ দায় ২০১৪ সালের বিরোধী দলের সহিংসতার ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন। অথচ দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো সংকটে পড়ে তাঁর সরকার একতরফাভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করায়।

বিরোধী দলকে দমন–পীড়নের মাধ্যমে রাজনৈতিক অধিকার হরণ করেছে হাসিনা সরকার। তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে তাঁর অধীন নির্বাচনের মাধ্যমে ডামি প্রার্থী দিয়ে একদলীয় শাসনব্যবস্থা তৈরি করেছিলেন। ২০১৮ সালে তাঁকে বিশ্বাস করে বিরোধী দল ভোটে গেলে তাঁর সরকার রাতেই ভোটের ব্যালট বাক্স ভরে রাখে।

বিরোধী দল দমনে তিনি কঠোর ছিলেন তা বোঝা যায় এক পরিসংখ্যান থেকে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭১টি মামলা রয়েছে। এসব মামলার আসামির সংখ্যা ৪০ লাখের ওপরে। (দৈনিক প্রথম আলো, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩)।

অভূতপূর্ব গণজাগরণে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিজয় উদ্‌যাপন। ৫ আগস্ট ২০২৪, সংসদ ভবন এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

‘আমার পিতা সব করেছেন, আমি সব করেছি’—এই আত্মমুগ্ধতার চক্র থেকে শেখ হাসিনা এখনো বের হতে পারেননি। তার নিবন্ধের পুরোটা জুড়ে এর প্রতিফলন আছে। তিনি নিজেকে এখানে আবার ভুক্তভোগী হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।

জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে জাতিসংঘের হিসাবে প্রায় ১ হাজার ৪০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, যেখানে শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ নির্দেশ ছিল, যা ফাঁস হওয়া ফোনালাপে স্পষ্ট হয়েছে এবং সাবেক আইজিপিও রাজসাক্ষী হিসেবে স্বীকার করেছেন।

১ হাজার ৪০০ মানুষের প্রাণহানি, যার মধ্যে ১০ থেকে ১২ শতাংশ ছিল শিশু, এমন নৃশংসতাকে তুচ্ছজ্ঞান করে নিজেকে ‘ভিকটিম’ বা ভুক্তভোগী হিসেবে প্রচার করা একধরনের ভিক্টিমহুড পলিটিকস। শেখ হাসিনা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ঘুরিয়ে দিতে চান, অথচ তাঁকে কৃতকর্মের জন্য আইনের মুখোমুখি হতে হবে।

নিবন্ধে শেখ হাসিনার ভাষায়, ২০২৪ সালের গ্রীষ্মের বিক্ষোভের পর থেকে অপ্রয়োজনীয়ভাবে হারিয়ে যাওয়া প্রত্যেক বাংলাদেশির জীবনের জন্য তিনি শোকাহত। পরক্ষণেই তিনি জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দমনে যেখানে তাঁর সরকার প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করেছে, তাঁর রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীরা অস্ত্র হাতে মাঠে ছিলেন, নিরস্ত্র জনতার ওপর গুলি চালিয়েছেন, তার দায় ‘নিরাপত্তা বাহিনীর কিছু সদস্যের ভুল সিদ্ধান্তের ওপর চাপিয়েছেন’।

অথচ শেখ হাসিনা তাঁর প্রত্যক্ষ নির্দেশে চলা এ হত্যাকাণ্ড চলাকালে দেশের জনগণের প্রতি সহমর্মিতা জানানো বা নিহত ব্যক্তিদের প্রতি শোকপ্রকাশের বদলে মেট্রোরেলের কাচ ভাঙা দেখতে গিয়ে কেঁদেছেন।

শেখ হাসিনা নিবন্ধজুড়ে তাঁর সরকারের উন্নয়ন বাহাস করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, তাঁর সরকার প্রত্যেক বাংলাদেশিকে উন্নত গণপরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও ঘরে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। কিন্তু এগুলোর পেছনে যে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে, তা এড়িয়ে গেছেন তিনি।

ঢাকা শহরের গণপরিবহনের পরিস্থিতি তো আমরা জানিই। প্রশ্নপত্র ফাঁস, জিপিএ–৫ ও পাসের হার বাড়িয়ে দেওয়া, নিয়োগ বাণিজ্যসহ শিক্ষাখাতে যে অরাজকতা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছিল, তা–ও কখনো ভুলবার নয়। সরকারের সমালোচনার কারণে আবরার ফাহাদকে চরম নির্যাতন করে হত্যাই করা হলো। আরও বহু নিপীড়নের ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

বিদ্যুৎ খাতে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে লুটপাটের সুযোগ করে দেওয়ার বিষয়টিও প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে। রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের মতো পরিবেশবিরোধী প্রকল্প তিনি বাতিল করেননি। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও তাঁর ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে উঠেছে।

শেখ হাসিনা তাঁর এমপি–মন্ত্রী–নেতা ও ঘনিষ্ট ব্যবসায়ী গোষ্ঠীকে একের পর এক ব্যাংক লুটপাটের সুযোগ করে দিয়েছিলেন। তাঁদের অর্থপাচারের ঘটনা আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় পর্যন্ত তোলপাড় তুলেছে।

শেখ হাসিনা দাবি করেছেন, তিনি একটি ধর্মনিরপেক্ষ সমাজব্যবস্থা গড়েছেন, যেখানে সব ধর্মের মানুষ আইনের অধীন সমানভাবে আচরণ পাবে, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। তাঁর সরকারের সময়ে ২০১২ সালে রামুতে বৌদ্ধমন্দিরের হামলা ও ভাঙচুরের বিচার তিনি সম্পন্ন করেননি। শুধু রামু নয়, নাসিরনগর, কুমিল্লা, রংপুরসহ অনেক জায়গায় সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে।

২০২১ সালে তাঁর সরকারের সময়ে ১৯টি জেলার দুর্গামণ্ডপ ও মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগসহ সহিংসতার ৫৩টি ঘটনা ঘটে। (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, ২৬ ডিসেম্বর ২০২১)। তাঁর সরকার সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। ২০২১ সালের এসব ঘটনায় ৫৪টি মামলা হয়, কিন্তু ২০২৩ সালের প্রতিবেদন অনুসারে ৪২টির কার্যক্রম শুরু হয়নি। (দৈনিক প্রথম আলো, ১৮ অক্টোবর ২০২৩)।

এসব সাম্প্রদায়িক হামলায় তাঁদের দলের অনেকের সম্পৃক্ত থাকারও অভিযোগ আছে। ফলে তিনি নিজেকে ধর্মনিরপেক্ষতা ঠিকাদার হিসেবে উপস্থাপন করছেন, যা আসলে অসংগতিপূর্ণ। (সূত্র : প্রথম আলো)