নগরীতে পূজা পরিষদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

22

 

 সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা সফল ও সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে নগরীতে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকালে শহরের গলাচিপা রামকানাই মন্দিরে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে এ মত মতবিনিময় সভা ।

মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদের সাথে ভার্চুয়াল মিটিং করে কঠোর দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। কোনো জেলা বা মহানগরে যদি দুর্গোৎসব চলাকালীন সময়ে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে তাহলে সে জেলা বা মহানগর কমিটিকে জবাবদিহি করতে হবে বলে হুঁশিয়ারিও জানিয়েছেন তিনি। আমাদের মাঝে চলে এসেছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। নারায়ণগঞ্জে যাতে পরিপূর্ণ নিরাপত্তা এবং আনন্দ উৎসাহের মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসব পালিত হয়, তার জন্য অতন্দ্র প্রহরী হয়ে আমরা আপনাদের পাশে থাকব।

এডভোকেট সাখাওয়াত উপস্থিত হিন্দু নেতৃবৃন্দের দাবির প্রেক্ষিতে বলেন, যে সকল হিন্দু নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে গত ৫ আগস্টের পরে মামলা হয়েছে, আমি প্রশাসনের সাথে কথা বলবো যাতে দুর্গাপূজার আগে তাদেরকে গ্রেফতার বা হয়রানি করা না হয়। সিদ্ধিরগঞ্জের লক্ষ্মীনারায়ন কটন মিল মন্দিরে পূজা আয়োজন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা খুব শীঘ্রই সমাধান করা হবে বলেও আশ্বাস প্রদান করেন অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত।

তিনি আরো বলেন, বিগত দিনগুলোতে একটি শব্দ মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরি করে রেখেছিলো সেই শব্দটি হচ্ছে ধর্মীয় সংখ্যালঘু। গত ৫ আগস্টের পর থেকে এই শব্দটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এখন কেউ ধর্মীয় সংখ্যালঘু না। আমরা সবাই সমান, সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। মুসলমান হিসেবে আমার এই দেশে যতটুকু অধিকার, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান সকলের সমান অধিকার। এদেশে আমরা সবাই বাংলাদেশী হিসেবে বসবাস করবো।

দুর্গাপূজার মন্ডপগুলোতে হিন্দি সিনেমার গান না বাজিয়ে বিভিন্ন ধর্মীয় সংগীত বাজানোর আহ্বান জানিয়ে অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত বলেন, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সাথে দুর্গোৎসব পালন করবেন। মন্ডপগুলোতে ধর্মীয় গান বাজাবেন, হিন্দি বা বাংলা সিনেমার গান বাজানো থেকে বিরত থাকবেন।

তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী। এখানে সকল ধর্মীয় অনুষ্ঠান জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালনের হাজার বছরের ঐতিহ্য রয়েছে। এবারও আমরা শারদীয় দুর্গোৎসবে সেই ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবো। সকল সনাতন ধর্মাবলম্বী ভাইবোনদের সহযোগিতায় ও সকল রাজনৈতিক দল এবং প্রশাসনকে সাথে নিয়ে আমরা উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গাপূজা আয়োজনে বদ্ধপরিকর।

কেউ কোনো গুজবে কান দিবেন না, গুজব প্রচার করবেন না। যদি কোথাও কোনো সমস্যা দেখা দেয় তাহলে আপনারা মন্দির কমিটি, পূজা উদযাপন পরিষদ এবং প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করবেন। সবাইকে শারদীয় দুর্গোৎসবের আগাম শুভেচ্ছা।

প্রধান বক্তার বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি’র সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু’র বলেন, নারায়ণগঞ্জের দুটি সন্ত্রাসী পরিবার রয়েছে। নারায়ণগঞ্জকে লালন পালন করে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় এবং ব্যবসায়ীদেরকে জিম্মি করতে চায় ও নারায়ণগঞ্জের ভিতরে দ্বিধা বিভক্তি তৈরি করতে চায়। তারা সেদিন হত্যার উদ্দেশ্যে আমাকে আক্রমণ করেছে।আমি আহত হয়ে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতাল থেকেও আপনাদের ভালবাসা ও শ্রদ্ধাবোধের টানে দায়িত্ববোধ থেকে আজকের এই অনুষ্ঠানের ছুটে এসেছি। ডাক্তার আমার কে নিষেধ করেছে তারপরও আমি ভেবেছি না রাষ্ট্রের যেমন দায়িত্ব আছে তেমনি দলের প্রতি আমার দায়িত্ব থেকে কিন্তু সম্প্রাদায়ের ভাইদের পাশে দাঁড়ানো আমার নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে।

নি আরও বলেন, আমি শুধু একটি কথাই বলতে চাই ১৯৭১ সালের পরে কারা হিন্দু সম্প্রদায় জায়গা সম্পত্তি দখল করেছে। আর কারা হিন্দু সম্প্রদায়কে দাবিয়ে রাখতে চেয়েছিল তা আপনারা একটু বিবেক দিয়ে চিন্তা করবেন। একটি কথা বলতে চাই শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তার ১৯ দফা কর্মসূচির মাধ্যমে বলে গিয়েছিলেন ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবার স্বার্থ সংগ্রহ করতে হবে। আর আমরা বলতে যায় ধর্ম যার যার উৎসব ও রাষ্ট্র সবার। অতএব আপনারা নির্বিচারে দূর্গা উৎসব পালন করবেন।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ও ইসলামে মূল্যবোধের শক্তিগুলো আপনাদের পাশে আছে এবং থাকবে। আমরা আমাদের রক্তের বিনিময় হল বাংলাদেশে কোন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগবে সেটা আমরা হতে দেবো না। গত পাঁচই আগস্ট নিহত ছাত্র-জনতার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বলতে চাই আমরা যেমন আপনাদের উৎসবে পাহারা দিব ঠিক তেমনি আপনারও আমাদের উৎসবগুলোতে পাহারা।

কারণ ৫ই আগস্ট এরপরে একটি গোষ্ঠী হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন মন্দিরে হামলা হবে বলে উস্কানি দিয়েছিল। কিন্তু বিএনপির সহ ইসলামিক দলগুলো আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আপনাদের মন্দির ও বাড়ি গুলো পাহারা দিয়েছি কোনরকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এখন আবার ওই গুষ্টি মুসলমানদের ভিতরে দাঙ্গা লাগানোর জন্য মুসলমানদের বিভিন্ন মাজার ও দরবার শরীফে হামলা করছে। এগুলো কিন্তু পাহারার দায়িত্ব আপনাদেরও রয়েছে।

আমরা যেমন আপনাদের পাশে আছি এবং থাকবো ঠিক একইভাবে আপনারও আমাদের পাশে থাকবেন। আমরা আপনাদের সাথে থেকেই প্রতিটি উৎসব সুন্দরভাবে পালন করতে চায় এবং সব ধরনের সহযোগিতা করতে চাই। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান মুসলমানদের ঐক্যের দেশ। বাংলাদেশ কোন ব্যক্তি ও গোষ্ঠী দেশ নয়। এ দেশবিশ কোটি মানুষের দেশ। একটি গোষ্ঠী চায় বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক নষ্ট হোক।

আমরা ভারতের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করতে চাই না আমরা ভারতের  সাথে বন্ধুত্বস্বরূপ সম্পর্ক রাখতে চাই। কিন্তু সেটা হলো সমবন্টন হারে। আমরা বন্ধুত্ব সম্পর্ক রাখতে চাই কোন প্রভু হিসাবে না।

নারায়ণগঞ্জে কোন হিন্দু সম্প্রদায়ের উপরে আমরা ফুলের টোকাও রাগতে দিবো না। হিন্দু ভাইদের বাড়ি ও মন্দির আমরা দারোয়ানের মতন পাহারা দিব। আমরা চাই দুর্গা উৎসব থেকে শুরু করে যেকোনো উৎসব আপনারা নির্বিচারে পালন করবেন। আপনারা কোন গোষ্ঠী কথায় কান দিবেন না।

আমরা চাই হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিস্টান সবাই মিলেমিশে একসাথে বসবাস করতে। এদেশ যেমন হিন্দুদের এদেশ তেমনি বৌদ্ধদের এদেশ তেমনি মুসলমানদের। নারায়ণগঞ্জ একটি অসম্প্রদায়িক জেলা। আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে চাই।

নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপন উপস্থিত নেতৃবৃন্দের সামনে আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপনে বিভিন্ন সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতাগুলো তুলে ধরেন এবং আশু নিরাময়ের জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

এ সময় তিনি সাত্তিক  পূজা আয়োজনের জন্য সকলের নিকট আহ্বান জানান। অতীতের মতো এবারও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য এবং আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজা পালিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন শিখন সরকার এবং সকলকে আগাম শারদীয় শুভেচ্ছা জানান। এ সময় উপস্থিত নেতৃবৃন্দকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে মিষ্টিমুখ করানো হয়।

নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সাংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্ধা শংকর কুমার দে’র সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক শিখণ সরকার শিপন, মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বিষ্ণুপদ সাহা ও সাধারণ সম্পাদক সুশীল দাসের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান, প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু।

আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের উপদেষ্টা প্রবীর কুমার সাহা, হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের সম্মানিত সাবেক ট্রাস্টি ও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের উপদেষ্টা পরিতোষ কান্তি সাহা, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এড. সরকার হুমায়ূন কবির, সাধারণ সম্পাদক এড. এইচ এম আনোয়ার প্রধান, মহানগর ইসলামী আন্দোলনের সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ, নারায়ণগঞ্জ সদর থানা বিএনপির সভাপতি মাসুদ রানা, মহানগর বিএনপির নেতা সরকার আলম, জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি প্রদীপ কুমার দাস, মহানগর হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি লিটন চন্দ্র পাল, নারায়ণগঞ্জ মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সহ সভাপতি সাংবাদিক উত্তম সাহা, হিমাদ্রি সাহা হিমু, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সহ-সভাপতি তিলোত্তমা দাস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল বিশ্বাস, সোনারগাঁ উপজেলার সভাপতি লোকনাথ দত্ত, সিদ্ধিরগঞ্জের সভাপতি শিশির ঘোষ অমর, সাধারণ সম্পাদক খোকন বর্মন, ফতুল্লা থানার সভাপতি প্রদীপ মন্ডল, রূপগঞ্জ উপজেলার সভাপতি গনেশ পাল, আড়াইহাজারে সভাপতি হারাধন চন্দ্র দে, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের দপ্তর সম্পাদক অভিরাজ সেন সজল, মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক কৃষ্ণ আচার্যসহ প্রমূখ।