নারায়ণগঞ্জে দুদকের গণশুনানি অনুষ্ঠিত, ৫ অভিযোগের তদন্তের সিদ্ধান্ত...

২৮ দপ্তরের বিরুদ্ধে ৫৫ অভিযোগ সেবাপ্রার্থীদের

44
নারায়ণগঞ্জে দুদকের গণশুনানি অনুষ্ঠিত

নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ:

“রুখবো দুর্নীতি, গড়বো দেশ, হবে সোনার বাংলাদেশ” এ শ্লোগানকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জে দুর্নীতি দমন কমিশনের গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। গণশুনানিতে সরকারী-বেসরকারী ২৮ টি দপ্তরের বিরুদ্ধে সেবাপ্রাপ্তিতে হয়রানির শিকার, ঘুষ দিতে বাধ্য করাসহ নানা অভিযোগ করেন ৫৫জন সেবাগ্রহীতা। এছাড়া, একজন সাবেক কানুনগো’র বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্যচিত্র সহ একটি অভিযোগ করা হয়। এসব অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য দুদকের যাচাই-বাছাই কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (০৬ জুন) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলে এ গণশুনানি। জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির ব্যবস্থাপনায়, জেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় এবং দুর্নীতি দমন কমিশন নারায়ণগঞ্জের উদ্যোগে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে এ গণশুনানির আয়োজন করা হয়।

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার (তদন্ত) মোঃ জহুরুল হক।

৫৫ অভিযোগের মধ্যে সবচেয়ে বেশী অভিযোগ করা হয় ভুমি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের বিরুদ্ধে। এই দপ্তরের একজন ইউনিয়ন ভুমি কর্তার বিরুদ্ধে সরাসরি ২০ হাজার টাকা ঘুষ চাওয়াসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ১২ জন সেবাগ্রহিতা নানা অনিয়মের কথা উল্লেখ অভিযোগ করেন। তথ্য ও প্রমাণসহ বিদ্যুৎ বিভাগের বিরুদ্ধে ভৌতিক বিল দেয়ার অভিযোগ করেন নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জীবন। এছাড়াও বিদ্যুৎ বিভাগের বিরুদ্ধে আরও ২টি, তিতাস গ্যাস অফিসের বিরুদ্ধে ২টি, নির্বাচন অফিসের বিরুদ্ধে ৫টি, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের আওতাধীন ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ও ২০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে ২টি, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২জন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ২টি, সমবায় সমিতি ও সমবায় অফিস, পিটিআই (প্রাইমারী ট্রেনিং ইনস্টিটিউট), পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন ড্রেজার, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, রাজউক, সদর সাব রেজিষ্ট্রি অফিস, উপজেলা আনসার ও ভিডিপি, একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জেলা কারাগার, একজন ডাক্তার, সিআইডির একজন পুলিশ সদস্য, বেসরকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠান পপুলার লাইফ ইন্সুরেন্সের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী সেবাপ্রার্থীরা। এছাড়া, আরও কয়েকটি দপ্তরে সেবা না পাওয়ার অভিযোগ করেন সেবাপ্রার্থীরা।

এসকল অভিযোগের মধ্যে ৫টি অভিযোগের তাৎক্ষণিক সমাধান করাসহ বাকী অভিযোগগুলো নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করে আগামী ৩ থেকে ৭ দিনের সময় বেধে দেয় কমিশন। এ সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহন করে সেই বিষয়ে দুদকে পুর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রেরণ করতেও বলে দুদক। একইসাথে ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল, বিদ্যুৎ বিভাগ, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন দপ্তরের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ শুনে এসব দপ্তরকে ভৎসনা করে কমিশন। একইসাথে এসকল দপ্তরকে সততা, ন্যায় ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করতে বলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার (তদন্ত) মোঃ জহুরুল হক।

এসময় তিনি বলেন, কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অনিয়মের অভিযোগ থাকলে আপনারা (সাধারণ জনগন) সরাসরি দুদকে অভিযোগ করেন। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ যদি নারায়ণগঞ্জ দুদক অফিস না নেয়, তাহলে সরাসরি আমাদের (দুদকের প্রধান কার্যালয়) জানান। এছাড়াও, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রতি বুধবার একটি গণশুনানি হয়, সেদিনও আপনারা যে কোনো দপ্তরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারেন। যারা অভিযোগ করেছেন তাদের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব কমিশনের। অভিযোগকারীরা যদি অভিযুক্ত সংগঠন দ্বারা কোনো হেনস্তার শিকার হয় তাহলে সেই দপ্তরের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গণশুনানিতে জেলার বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী, আধা সরকারি ও স্বায়ত্ত শাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাসহ সেবাপ্রার্থী ও অভিযোগকারীগণ উপস্থিত ছিলেন।