নারায়ণগঞ্জ থেকে শুরু হবে ডিজিটাল ম্যাপ তৈরির কার্যক্রম – ভূমিমন্ত্রী

99
নারায়ণগঞ্জ থেকে শুরু হবে ডিজিটাল ম্যাপ তৈরির কার্যক্রম - ভূমিমন্ত্রী

নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ:

আগামী ১লা জুলাই থেকে বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভে এর ডিজিটাল ম্যাপ তৈরির কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ডিজিটাল জরিপের লক্ষ্য হচ্ছে, ‘১ ব্যক্তি, ১ খতিয়ান ও ১ দাগ’ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। এর বাস্তবায়ন ঘটলে ভূমি বিষয়ক নাগরিকদের হয়রানি এবং মামলা-মোকদ্দমার পরিমাণ অনেকাংশে কমবে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আজ বুধবার (১৫ মে) সকালে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ডিজিটাল ভূমি জরিপ ও ভূমি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম’ বিষয়ক এক সেমিনারে একথা বলেন তিনি।

ভূমিমন্ত্রী বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় স্মার্ট ভূমি ব্যবস্থাপনা ও বাংলাদেশ ডিজিটাল জরিপের সফল বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশে একটি ন্যায্য ভূমি ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তারই ধারাবাহিকতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট ভূমি ব্যবস্থাপনা ও ডিজিটাল জরিপ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছেন। এই কাজে সহযোগীতা করতে আমরা একটি স্মার্ট ভুমি ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন করতে চাই।

ভূমিমন্ত্রী এসময় আশা প্রকাশ করে বলেন, আগামী জুলাই থেকে নারায়ণগঞ্জসহ দেশের ছয়টি এলাকায় বাংলাদেশ ডিজিটাল জরিপের আওতায় ম্যাপ প্রস্তুতকরণ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে, যা দ্রুত সফলভাবে শেষ হবে। যোগাযোগ ও প্রচারণা কার্যক্রমের মাধ্যমে বিডিএস অপারেশনে নাগরিকদের ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। এ প্রকল্পের আওতায় ৬৩৪ মৌজায় ৯০৩ বর্গকিলোমিটার জরিপ করা হবে। পাইলটিং প্রকল্প হবে নবীগঞ্জ মৌজায় ১ লা জুলাই থেকে। অক্টোবর থেকে ডিটেইলস জরিপ শুরু হবে।

তিনি আরও বলেন, জমির মালিকদেরকে আন্তরিক হতে হবে, দেশের সকল নাগরিককে এই জরিপের বিষয়ে সচেতন হতে হবে। ভুমির মালিক যিনি, সেই ভুমি রক্ষা করার দায়িত্ব তারই। একটি সুন্দর ও ফ্রেশ ভুমি ব্যবস্থাপনা প্রণয়ন করতে চাই আমরা। ভূমি সম্পর্কিত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সততার সাথে কাজ করতে আহবান জানান তিনি। একইসাথে বলেন, এই আহবানের ব্যতয় ঘটলে কঠিন ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ কাজে যদি কোনো ত্রুটি ঘটে এবং সেটি যদি প্রমাণিত হয় তাহলে, যিনি অনিয়ম করবেন তার বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেয়ার হুশিয়ারী দেন মন্ত্রী।

ভুমি সচিব খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে এতে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভুমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (গ্রেড-১) আনিস মাহমুদ। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক, সেমিনার বিষয়ক সচিত্র উপস্থাপনা করেন অতিরিক্ত সচিব ও ইডিএলএমএস প্রকল্প পরিচালক জহিরুল হক।

সভাপতির বক্তব্যে খলিলুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০১৪ সালে প্রদত্ত ৩১টি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনার অন্যতম বাস্তবায়ন হিসেবে ভূমিসেবা ডিজিটালাইজেশন ও বাংলাদেশ ডিজিটাল জরিপ (বিডিএস) কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে ভূমি সম্পর্কিত লেনদেন অনলাইনে সম্পন্ন হওয়ায় দুর্নীতির আশঙ্কা অনেকাংশে কমে এসেছে।

তিনি আরও বলেন, সবার আন্তরিকতক থাকলে সবচেয়ে চমৎকার একটি জরিপ করা সম্ভব এখানে। রেকর্ড এবং জরিপ কার্যক্রমটি সঠিক ও সুষ্ঠুভাবে করতে হবে। মন্ত্রী মহোদয় এদিকে জোর দিয়েছেন, এক্ষেত্রে সহযোগীতার জন্য পেয়েছি কোরিয়াকে। বিশ্বাস করি, বাংলাদেশে যখন ডিজিটাল জরিপ শেষ হবে, এটাই হবে সর্বশেষ জরিপ। এরপর আর কোনো জরিপ হবে না। মন্ত্রী মহোদয়ের নেতৃত্বে ভুমি মন্ত্রণালয় এগিয়ে যাচ্ছে। ভুমি মালিকদের সেবার লক্ষ্যে ভুমি সহায়তা কেন্দ্র করারও চিন্তা করছি। কোনো প্রকার দুর্নীতি, কোনো প্রকার অনিয়ম করলে ছাড় দেয়া হবে না। অনিয়ম হলে আমাদের জানাবেন, আমরা ব্যবস্থা নিবো। যদি আমরা খুব ভালোভাবে এই জরিপটি করতে পারি, তাহলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যুগ যুগ ধরে জমি নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা থেকে রেহাই পাবে।

অতিরিক্ত সচিব জহিরুল হক বলেন, ৩৮৩ কোটি ৫০ লক্ষ টাকায়, কোরিয়ান সহায়তায় এই ডিজিটাল ভুমি জরিপ হবে। নারায়ণগঞ্জবাসী ভাগ্যবান, কেননা সিএস জরিপ শুরু হয়েছিলো চট্টগ্রামে ১৮৮৮ সালে। আর বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল ভুমি জরিপ শুরু হবে নারায়ণঞ্জের বন্দর উপজেলার নবীগঞ্জ মৌজা থেকে। জরিপের লক্ষ ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, ডিজিটাল পদ্ধতিতে জরিপ করে ডিজিটাল খতিয়ান ও মৌজা ম্যাপ নির্ণয় করা। উন্নত তথ্য সেবা ভুমি মালিকদের কাছে পৌছে দেয়া। পৃথিবীতে কোরিয়া প্রথম ডিজিটাল ভুমি জরিপ করে, তাই তাদের সাথে নিয়ে এই জরিপ করবো। তাদের কাছ থেকে আমরা শিখবোও। জরিপ যথাযথভাবে করতে পারলে প্রধান বৈশিষ্ট্য ও সুবিধা হলো ম্যাপ সংশোধন। যখনই জমি ক্রয় করা হবে তখনই সব জায়গায় সংশোধন হযে যাবে।

স্বাগত বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, সরকারী ১ ইঞ্চি জায়গাও কোনো ব্যক্তির নামে রেকর্ড হবে না। ভুমি অপরাধ আইন দেখিয়ে অনেক জবরদখল কারীদের হাত থেকে জমি উদ্ধার করেছি। যারা জমির মালিক, কিন্তু এখানে থাকেন না, তাদের জমি যেন অন্য কারো নামে রেকর্ড না হয় সেদিকে সর্বাত্মক লক্ষ রাখা হবে।

প্রসঙ্গত, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনসহ চট্টগ্রাম, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন, মানিকগঞ্জ পৌরসভা এবং ধামরাই ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ইডিএলএমএস প্রকল্পের (এস্টাব্লিশমেন্ট অব ডিজিটাল ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম প্রকল্প) মাধ্যমে বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। জিএনএসএস, টোটাল সার্ভে সিস্টেম, ড্রোন, ওরাকল ডাটা ও জিআইএস সফটওয়্যারসহ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে দক্ষিণ কোরীয় সহায়তায় ইডিএলএমএস প্রকল্পের মাধ্যমে বর্তমানে বিডিএস পরিচালনা করা হচ্ছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা সেমিনারে বলেন, বিডিএস অপারেশনে কয়েকটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা হবে। জরিপের সময় যদি সিলিং বহির্ভূত জমি পাওয়া যায়, তাহলে অতিরিক্ত জমি খাস খতিয়ানে এনে বাকি জমি ব্যক্তির নামে রেকর্ড করা হবে। আর সরকারি জমির ক্ষেত্রে দেওয়ানি আদালতের রায় অনুযায়ী কাজ করা হবে। তাছাড়া বিডিএস-এর আওতায় তৈরিকৃত ডিজিটাল ম্যাপে ক্লিক করলেই জমির সব তথ্য পাওয়া যাবে। এছাড়াও রেকর্ড সংশোধন করলে ডিজিটালি ম্যাপ পার্টিশন হয়ে যাবে বলে জানান প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

ডিএলআরএস পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল কাদের শেখ, ডিএলআরএস পরিচালক মোঃ মোমিনুর রশীদ, ঢাকার জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার মো: মিজানুর রহমানসহ ভূমি মন্ত্রণালয়, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর ও ইডিএলএমএস প্রকল্প এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ এবং দক্ষিণ কোরিয়া হতে আগত প্রকল্পের সহযোগী সংস্থার কর্মকর্তাগণ সভায় উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাইসহ সিটি কর্পোরেশন কাউন্সিলরবৃব্দ, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, সুধীজন, অংশীজন, গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ প্রমুখ।

উল্লেখ্য, অন্য আরেকটি প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের আরও ৩২টি উপজেলায় বিডিএস অপারেশন শুরু করা হবে।