এগিয়ে চলছে লিংক রোড প্রশস্তকরণের কাজ, ভোগান্তি লাঘব হবে নারায়ণগঞ্জবাসীর...

উন্নয়নে আরো একধাপ এগিয়ে গেলেন শামীম ওসমান

39
উন্নয়নে আরো একধাপ এগিয়ে গেলেন শামীম ওসমান

নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ:

নারায়ণগঞ্জবাসীর দীর্ঘদিনের ভোগান্তি লাঘবে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড থেকে চাষাড়া পর্যন্ত আট কিলোমিটার সড়কের ৬ লেনে উন্নীতকরণের কাজ। দৃষ্টিনন্দন ঢাকা-মাওয়া হাইওয়ে এক্সপ্রেসওয়ের আদলে গড়ে তোলা হবে সড়কটিকে। সড়কটিতে থাকবে যানবাহন চলাচলের ৬টি লেন, নিরবিচ্ছিন্নভাবে যাতায়াতের লক্ষে থাকবে ৩টি ওভারব্রীজ ও ২টি আন্ডারপাস। সৌন্দর্যবর্ধনের লক্ষ্যে যুক্ত করা হয়েছে ৯টি লেক এবং সড়কটি মাঝে প্রায় ৬০ ফুট প্রশস্তের বাগান করা হবে, যা সড়কটিকে আরও দৃষ্টিনন্দন করে তুলবে।

এছাড়া, সড়কের উভয় পাশেই থাকবে এলইডি লাইট, নির্মাণ করা হচ্ছে আরসিসি ঢালাই ড্রেন ও মানুষের হাটার জন্য ওয়াকওয়ে। আধুনিকতার ছোয়ায় নির্মাণাধীন এ কাজ শেষ হলে দীর্ঘদিনের যানজটের কবল থেকে মুক্তি পাবে নারায়ণগঞ্জবাসী, ফলে কাজের গতি আরও কয়েকগুন বাড়বে বললেন এ সড়ক ব্যবহারকারীরা।

এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন চলাচলকারী বন্ধন পরিবহনের গাড়িচালিক হানিফ মিয়া বলেন, সড়কটির কাজ শেষ হলে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের মানুষের অনেক সুবিধা হবে। লিংক রোডে আর যানজট থাকবে না এবং ঢাকা যাওয়া আসা করতে সময় কম লাগবে।

উৎসব পরিবহনের একজন গাড়ি চালক বলেন, কাজ শুরুর পর যানজট বেড়েছিলো, যা এখন অনেকাংশেই কম। আর কাজ শেষ হলে আমরা আরও সুবিধা ভোগ করতে পারবো। ঢাকা যাওয়া-আসা সহজ হবে।

শিবু মার্কেট এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা আমিন মিয়া বলেন, রাস্তা বড় হচ্ছে তা নি:সন্দেহে আমাদের জন্য ভালো। তবে কাজটা আরও দ্রুত শেষ করা দরকার। যাতে করে জনগনের ভোগান্তি পোহাতে না হয়।

জানা গেছে, সড়ক ও জনপদ বিভাগের তত্ত্বাবধায়নে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের ব্যায় ধরা হয়েছিলো ৩৬৫ কোটি টাকা। পরবর্তীতে সময় ও ব্যায় বাড়িয়ে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৪৬০ কোটি টাকা। সড়কটির ৬ লেনে উন্নীতকরণ কাজ শেষ হলে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন, সদর উপজেলা ও বন্দর উপজেলার প্রায় দশ লাখ লোকের যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হবে।

সড়ক ও জনপথ নারায়ণগঞ্জ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শিবু মার্কেট, জালকুড়ি ও ভুইগড়ে ৩টি আন্ডারপাস নির্মাণ করা হবে। যাত্রী ওঠা-নামার জন্য যানবাহন যেন থামতে পারে সেজন্য বাস-বে নির্মাণ করা হবে। দ্রুতগতির যানবাহনের জন্য ২টি ডেডিকেটেড লেন ও ধীরগতির যানবাহনের জন্য সাড়ে পাঁচ মিটার চওড়া করে উভয়পার্শ্বে সার্ভিস লেন থাকবে। সড়কের পাশ দিয়ে মানুষের পায়ে হেটে চলাচলের জন্য ফুটপাথ থাকবে। জনগণের পারাপারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থান সাইনবোর্ড ও নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হবে। সড়কে যেন পানি না জমে তার জন্য আরসিসি ইউ ড্রেন, সসার ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে।

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিঙ্করোডে বিশাল বিশাল গাড়ির যাতায়াত দেখলেই বোঝা যায় সড়কটির প্রশস্তকরণ কতটা জরুরী। যতই দিন যাচ্ছে, ততই বাড়ছে গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনের সংখ্যা। তাই লিঙ্করোডটির প্রশস্তকরণ, সৌন্দর্যবর্ধন ও আকর্ষণীয় করার যে কাজ চলমান তা চলতি বছরের মধ্যে শেষ হবে বলে জানায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর।

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড ৬ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. সাখাওয়াত হোসেন শামীম বলেন, নারায়ণগঞ্জের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং ঢাকা-নারায়ণগঞ্জে যাতায়াতের জন্য যানজটমুক্ত একটা রাস্তা হবে এটা। এখানে ২টা ডেডিকেটেড লেন এবং ২টা সার্ভিস লেন হচ্ছে। সৌন্দর্যবর্ধনের লক্ষ্যে এখানে লাইটিং করা হবে বলেও জানান তিনি। আশা করি শীঘ্রই সড়কটির কাজ শেষ করতে পারবো।

নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কের দুপাশে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়া, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়, জেলা কারাগার, পাসপোর্ট অফিস, আয়কর অফিসসহ প্রায় সকল সরকারী দপ্তরের কার্যালয়। ফলে জেলার অন্যান্য উপজেলার মানুষও প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে। আগে সড়কটিতে তীব্র যানজট লেগে থাকার কারণে নষ্ট হতো মানুষের কর্মঘন্টা। তবে কাজ শুরুর পর ইতিমধ্যেই এর সুফল ভোগ করতে শুরু করেছে নারায়ণগঞ্জবাসী। কাজ শেষ হলে শতভাগ সুফল ভোগ করবে তারা, ফলে কমবে যাতায়াতের ভোগান্তি।

জানা গেছে, এ সড়ক দিয়েই চাল-ডাল, তেল-লবনসহ ১৯টি নিত্যপণ্য বোঝাই মালবাহী গাড়ি, সিমেন্টের ট্রাক, গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানের কাচামালবাহী অসংখ্য পরিবহন যাতায়াত করে। ৬ লেনে উন্নীত হলে এর সুবিধা ভোগ করবে গোটা জেলার সকল স্তরের মানুষ। সড়কটির প্রস্থ পূর্বে ৫০ ফুট থাকলেও কাজ শেষ হলে এটি হবে প্রায় ১৪০ ফুট চওড়া।

সড়কটি অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক মো. মঞ্জুরুল হাফিজ। তিনি বলেন, চালের বাজার থেকে শুরু করে অন্যান্য পণ্যের জন্য নারায়ণগঞ্জ শহরটি সবচেয়ে ব্যস্ততম একটি মার্কেট। এখানে প্রচুর ট্রাক চলাচল করে, তাই সড়কটি প্রশস্ত হলে নারায়ণগঞ্জবাসীর ভোগান্তি কমবে। এছাড়া সড়কটি প্রশস্ত হলে নারায়ণগঞ্জের গুরুত্বও অনেক বেশী বেড়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।