যেকোনো মূল্যে গিয়াস উদ্দিনকে ঠেকাতে চান শামীম ওসমান

125
না.গঞ্জ-৪ আসনে শামীম ও গিয়াস অনুসারীদের লড়াইয়ের প্রস্তুতি

নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ:

নারায়ণগঞ্জ জেলায় এই মুহুর্তে দলকে চাঙ্গা করতে পারেন এমন নেতা রয়েছেন একজনই। আর তিনি হলেন সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মুহম্মদ গিয়াস উদ্দিন। কিন্তু তাকে ঠেকাতে দলের ভেতর বাহিরে তৎপর রয়েছে একটি বড় চক্র। দলের ভেতর থেকে যেমন কাজী মনির, মামুন মাহমুদ আর মনিরুল ইসলাম রবি প্রমুখ তাকে নেতৃত্বে আসতে দিতে চান না। তেমনি দলের বাহিরে থেকে দল ত্যাগী ধন্যাঢ্য ব্যবসায়ী নেতা আলহাজ¦ শাহআলম সহ আরো অনেকে চাননা সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন জেলা বিএনপির নেতৃত্বে আসুক।

এছাড়া নারায়ণগঞ্জ-৪ আমনের বর্তমান এমপি একেএম শামীম ওসমানতো একেবারেই চান না গিয়াস উদ্দিন জেলা বিএনপির নেতৃত্বে চলে আসুক। কারন তিনি আগামী নির্বাচনে গিয়াস উদ্দিনের মুখোমুখী হতে চান না। কারন বিনা ভোটে হোক আর যেভাবেই হোক শামীম ওসমান তিনবার নির্বাচন করে হেরেছেন একবার। সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিনের কাছেই তিনি বিপুল ভোটে হেরেছিলেন। তাই বিএনপির ভেতরে শামীম ওসমানের যে এজেন্টরা রয়েছেন তাদের মাধ্যমে এই এমপি গিয়াস উদ্দিনকে ঠেকিয়ে রাখতে চান।

এছাড়া তার নির্দেশে গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে নানা কিসিমের মামলা দিয়ে হয়রানীতো রয়েছেই। তাই বিএনপির অনেক নেতাকর্মী মনে করেন শামীম ওসমানও যেকোনো মূল্যে বিএনপিকে ঠেকিয়ে রাখতে চান। যার ফলে গিয়াস উদ্দিনও এক পা এগুলে মানসন্মান হারানোর ভয়ে দুই পা পিছান।

অপরদিকে, দলের আরো দুই প্রভাবশালী নেতা হলেন রুপগঞ্জের মোস্তাফজুর রহমান ভুইয়া দীপু এবং আড়াইহাজারের নজরুল ইসলাম আজাদ। তারাও গিয়াস উদ্দিনকে জেলা বিএনপির নেতৃত্বে বসাতে জোরালো কোনো ভূমিকা নিচ্ছেন না। তারা নিজেরা চান কেবল এমপি হতে। অবশ্য এই দুইজনের মাঝে নজরুল ইসলাম আজাদ কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। তার জেলা বিএনপির নেৃতত্বে আসার এমনিতেও কোনো প্রয়োজন নেই।

ফলে এসব কিছু মিলিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির নেতৃত্বে এখন হযবরল অবস্থা বিরাজ করছে। তাই নারায়ণগঞ্জের রাজনৈকি পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, সামনে যে সংসদ নির্বাচন রয়েছে আর এবারে এই নির্বাচনকে সামনে রেখে চলমান যে আন্দোলন সংগ্রাম চলছে তাতে নেতৃত্ব দেয়ার মতো যোগ্যতা সম্পন্ন নেতার ভিষন অভাব দেখা দিয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপিতে। তাই নারায়ণগঞ্জ জেলায় বিএনপির রাজনীতিতে এখন নেতৃত্ব সংকট বেশ প্রবল আকার ধারন করেছে।

পরিস্থিতি এখন যেখানে গিয়ে ঠেকেছে যে, জেলার তৃতীয় সারির নেতারা এখন বিএনপিকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ভারপ্রাপ্ত আহবায় মনিরুল ইসলাম রবি আর সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদ সারা জেলায় বিএনপিকে নেতৃত্ব দেয়ার মতো কোনো যোগ্যতাই রাখেন না বলে মনে করেন এই দলের অনেক নেতা কর্মী সমর্থক।

এর আগে মামুন মাহমুদ টানা পাঁচ বছরের বেশি জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক ছিলেন। কিন্তু এই পাঁচ বছরে তিনি জেলা ব্যাপী দলকে শক্তিশালী করার পরিবর্তে আরো দূর্বল করেছেন। আর মনিরুল ইসলাম রবিরতো একজন কর্মীও নেই। তিনি ওয়ানম্যান-শো রাজনীতিবীদ। এক সময় তিনি সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তবে শাহআলম বিএনপির রাজনীতিতে আসার পর তিনি শাহআলমের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন এবং জেলা বিএনপির রাজনীতিতে পদ বাগিয়ে নেন। সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন যখন এমপি ছিলেন তখন এই রবি গিয়াস উদ্দিনের সাথে থেকে রাজনীতি করেছেন। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ জেলায় বিএনপিকে নেতৃত্ব দেয়ার মতো যোগ্যতা যে তার নেই এটা মানেন সকলেই।

এদিকে যেমনই হোক এডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের এক ধরনের ধার ভার দুটোই ছিলো। কিন্ত তিনি নৈতিক ভাবে তেমন শক্তিশালী ছিলেন না। তাই বিগত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তিনি তার নিজের দলের স্বিদ্ধান্তকে অমান্য করে অংশগ্রহন করেন। এতে তত্ত্বাবদায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি যে আন্দোলন করে আসছে তাতে বেশ বড় ধরনের ক্ষতি হয়। আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপির আন্দোলনের বিরুদ্ধে কথা বলার সুযোগ পায়।

বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগ জনগনের ভোটের অধিকার হরন করে দিনের ভোট রাতে করলেও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন তারা সুষ্ঠু করে। এতে জনপ্রিয় আইভীর কাছে বিপুল ভোটে হেরে যান তৈমুর। আর নির্বাচনের আগেই তৈমুরকে দল থেকে বাদ দেয়া হয়। যার ফলে তিনি মাইনাস হওয়ার পর একেবারেই নেতৃত্বশুন্য হয়ে পরে জেলা বিএনপি।

ফলে এই মুহুর্তে জেলা বিএনপির অবস্থা আরো নাজুক বলেই জানা গেছে। তবে অনেকে মনে করেন, এই মুহুর্তে কেবল মাত্র গিয়াস উদ্দিনকে দায়িত্ব দিলেই এই জেলায় বিএনপি চাঙ্গা হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান আর বিএনপির ভেতরে থাকা তার দালাল চক্র কিছুতেই চান না গিয়াস উদ্দিন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির দায়িত্ব পাক।