হতাশার কারণ জানা গেলো......

আনোয়ারের মাইনাস আইভীর জন্য বড় ধাক্কা

199
আনোয়ারের মাইনাস আইভীর জন্য বড় ধাক্কা

নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ:

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভী তার বাজেট বক্তৃতার এক পর্যায়ে বলেছেন, নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে তিনি একা হয়ে পড়েছেন। তার এই বক্তব্যের পর নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক মহলে এ নিয়ে চলছে নানা বিচার-বিশ্লেষন।

কেউ বলছেন মেয়র আইভী আসলেই একা হয়ে পরেছেন। তার কিছু ভুল রাজনীতির কারণে এখন আর তার পাশে কেউ নেই। আবার কেউ কেউ বলছেন নারায়ণগঞ্জের মাটিতে তিনি বিগত আঠারো বছরে টানা চারবার নির্বাচিত হয়েছেন। তাই যে জনগন তাকে বার বার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন তারা রয়েছেন এই মেয়রের পাশে। তাই তিনি একা নন।

তবে, যে যাই বলুক মেয়র যে নানা কারনে হতাশ হয়ে পরেছেন সেটা তিনি ঢেকে রাখতে পারেননি। তিনি নিজেই তার হতাশা প্রকাশ করে ফেলেছেন। কিন্তু কেনো এই হতাশা? এ ব্যাপারে আইভীর ঘনিষ্ঠ অনেকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মূলত নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে এবার জেলা পরিষদ থেকে বাদ দেয়ার কারণেই আইভীর এই হতাশা।

আইভী হয়তো ভাবতেই পারেননি এভাবে আনোয়ার হোসেনকে মাইনাস করে চন্দন শীলকে দেয়া হবে জেলা পরিষদের মনোনয়ন। নারায়ণগঞ্জবাসীর মতে, আনোয়ার হোসেনের সাথে আইভীর ব্যাক্তিগত সম্পর্ক যাই হোক না কেনো তিনি ছিলেন ওসমান বিরোধীদের অন্যতম একজন।

এছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আনোয়ার হোসেনকে আইভীর পাশে জোরালো ভূমিকা রাখতে দেখা গেছে। তাই তিনি না থাকায় আসলেই মেয়র আইভী একা হয়ে পড়েছেন। মূলত আনোয়ার হোসেনকে জেলা পরিষদ থেকে বাদ দেয়ার কারনেই হতাশ হয়ে পরেছেন মেয়র আইভী যা কিনা তিনি তার বাজেট বক্তৃতার মাধ্যমে প্রকাশ করে ফেলেছেন।

এদিকে মেয়র নিজেই বলেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলররা তার পাশে নেই। কিন্তু মোটা দাগে লক্ষ্য করলে দেখা যায় মেয়র আইভীর পাশে এখন এ শহরের ক্ষমতাধর আর কেউ নেই। কেউ মানুক বা না মানুক এটাই সত্য যে নারায়ণগঞ্জ শহরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি জোহা পরিবার আর চুনকা পরিবারের মাঝে বিভক্ত।

তাই ক্ষমতার হিসাব করতে গেলে এক মাত্র মেয়র পদটি ছাড়া আর মেয়রের পাশে আসলেই কেউ নেই। ক্ষমতাসীন পদগুলো সব ওসমান পরিবারের হাতে। এতোদিন নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ছিলেন মেয়রের পাশে। বিশেষ করে আনোয়ার হোসেন ওসমান বিরোধী একজন রাজনীতিক হিসাবেই পরিচিত ছিলেন।

কিন্তু সেই পদ থেকে তাকে সরিয়ে ওসমানপন্থী বাবু চন্দনশীলকে বসানো হয়েছে। আর এই চন্দনশীল সব সময় সংসদ সদস্য শামীম ওসমানেরই ডান হাত হিসাবে পরিচিত। শহরের দুটি গুরুত্বপূর্ণ এমপি হলেন দুই ওসমান। যতোদিন আওয়ামী লীগ রাস্ট্র ক্ষমতায় থাকবে ততোদিন শামীম ওসমান আর সেলিম ওসমানই যে থাকবেন এই শহরের দুই আসনের দুই এমপি এতে কারোই কোনো সন্দেহ নেই।

তার উপর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হলেন চন্দনশীল। আর আরো অনেক আগে থেকেই নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা এবং বন্দর উপজেলার দুই চেয়ারম্যান তাদের লোক। নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার চেয়ারম্যান এডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বিশ^াস বিএনপির নেতা হলেও তিনি ওসমানদের আনুগত্য করেন বলেই টিকে আছেন।

আর বন্দরের চেয়ারম্যান এম এ রশিদতো দুই এমপিরই লোক। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের তিন পাশের বারোটি ইউনিয়ন তথা গোগনগর, কাশীপুর, আলীরটেক, বক্তাবলী, এনায়েতনগর, ফতুল্লা, কুতুবপুর এবং বন্দরের পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা সকলেই ওসমানদের লোক।

অপরদিকে, সিটি কর্পোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডের ৩৬ জন কাউন্সিলরের মাঝে অধিকাংশই ওসমান পরিবারের অনুগত। তাই চোখ মেলে তাকালে যে চিত্রটি চোখে পড়ে তা একেবারেই পরিস্কার। আসলেই মেয়র আইভী একা। লোকবলে সমৃদ্ধ এই শহরের অবিসংবাদিত রাজনৈতিক পরিবার ওসমান পরিবার।

কিন্তু মজার বিষয় হলো মেয়র আইভী যে একা হয়ে পরেছেন এটা তিনি নিজের মুখেই ফাঁস করে দিলেন। তিনি হতাশ, তাই অনেকে মনে করেন তিনি হয়তো এবার বিদায় নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।