না:গঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতির এজিএম ঘিরে চাপা ক্ষোভ!

72
না:গঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতির এজিএম ঘিরে চাপা ক্ষোভ!

নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ:

যতই দিন গড়াচ্ছে পরিস্থিতি ততই বেসামালের দিকে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতিতে এমনটাই মনে করে সমিতির সাধারণ সদস্য ও কর্মরত স্টাফ-নার্সরা। সেবাদানকারী এ প্রতিষ্ঠানটিতে এখন সেবার কোনো মান নেই বলে জানা গেছে। ফলে আগামী ৩০ জুলাই ডায়াবেটিক সমিতির এজিএমকে ঘিরে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

মূলত ডা. শাহনেওয়াজকে মাইনাস, হাসমত উল্লাহ-আজিজুল্লাহ প্যানেলের আত্মসমর্পনসহ নানা নাটকীয়তার কারণে নবগঠিত কমিটির সক্ষমতা ও কার্যকলাপ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাধারণ সদস্যদের মতে, সুবিধাবাদীদের কারণে সেবাদানকারী এ প্রতিষ্ঠানটি এখন আর আগের অবস্থায় নেই। চলমান হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতির কারণে সাধারণ সদস্য ও স্টাফ-নার্সদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে বলেও জানা গেছে।

নবগঠিত কমিটিতে জামাত-বিএনপির লোকজনের আধিক্য রয়েছে বলেও জানায় অনেকে। তাছাড়া সমিতিরি নির্বাচনের পূর্বে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে উপদেষ্টা করার কথা জানানো হলেও একদিনের জন্যও ডায়াবেটিক সমিতিতে যান নি তিনি। এমনকি আগের কমিটি এবং নবগঠিত কমিটির সদস্যদের কেউই কোনো আলোচনা বা দেখা করেননি শামীম ওসমানের সাথে। মূলত তার নাম বিক্রি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন অনেকে।

জানা গেছে, সভাপতি-সেক্রেটারী হওয়ার আশায় বেশ কয়েকজন মিলে চক্রান্ত করে দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে সভাপতি ও সহ-সভাপতি পদে থাকা ডা. শাহনেওয়াজ চৌধুরীর সদস্য পদ বাতিল করেছিলো। সাধারণ সদস্যদের অনেকে জানান এ চক্রটির মূলহোতা দেলোয়ার হোসেন চুন্নু সাধারণ সম্পাদক হলেও খায়েশ পূরণ হয়নি অপর চক্রান্তকারী হাসমত উল্লাহর। পূর্ণ প্যানেল দিয়েও শেষ পর্যন্ত লড়াইয়ে থাকতে না পেরে অসহায় আত্মসমর্পণ করে নির্বাচনের মাঠ ছেড়ে পালিয়েছে তিনি ও তার প্যানেল।

আরও জানা গেছে, স্বাস্থ্যখাতের অন্যতম প্রতিষ্ঠান হিসাবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতির নবগঠিত কমিটিতে চিকিৎসক হিসাবে একমাত্র ডা. আতিকুজ্জামান সোহেল আছেন। যিনি একইসাথে সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন চুন্নুর ভাতিজা বলেও জানা গেছে। ফলে সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পূর্বেই নিজের পরিবারের সদস্যদের অন্তর্র্ভূক্ত করে অনৈকিত সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করছেন দেলোয়ার হোসেন চুন্নু এমন অভিযোগ করেছে সাধারণ সদস্যদের অনেকে।

এছাড়াও বিতর্কের যেন শেষ নেই নারায়ণগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতিতে। যেমন ডা. শাহনেওয়াজ চৌধুরীর সদস্য পদের বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন লায়ন মো. শওকত আলী। কমিটিতে এড. জাকির হোসেনসহ আরও একজন ছিলেন। তদন্ত কমিটির সকলে আবার কাশেম জামাল-দেলোয়ার হোসেন চুন্নু প্যানেলের হয়ে নির্বাচনে অংশও নিয়েছেন। পরে তারা সকলেই আবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতও হয়েছেন। এ ঘটনায় বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করে অনেকে বলেছেন, যারা তদন্ত করেছেন তারা আবার নির্বাচনও করেছেন। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, তারা সকলে মিলে মিশে ভোগ করার জন্য মূলত ডা. শাহনেওয়াজকে মাইনাস করেছেন।

এদিকে, আজিজুল্লাহ-হাসমত প্যানেল নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিএনপি-জামাতের লোকদের নিয়ে গঠিত প্যানেল নিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হয় কাশেম জামাল – দেলোয়ার হোসেন চুন্নু পরিষদ এমনটা জানান নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে দাড়ানো রিটায়ার্ড পুলিশ কর্মকর্তা আজিজুল্লাহ।

তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, বর্তমান কমিটিতে জামাত-বিএনপির কতজন আছে সেই নিউজ করেন আগে। কাশেম জামাল যে বিএনপি ঘেষা লোক এটাতো সকলেই জানে। আরও কে কে আছে আপনারা দেখলেই তা বুঝতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, এটা আমার কথা না, হাসপাতালের স্টাফ-নার্সরা বা কারা যেন বেনামে আমাদের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছে যেখানে এ অভিযোগ ছিলো, আমি সেটাই বলেছি।

নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে দাড়ানোর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পিস্তলের ভয় দেখিয়ে বসানো হয়েছে আমাদের। তবে কে দেখিয়েছে পিস্তলের ভয় এমন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তিনি বলেন, আপনারা সাংবাদিকরা খুঁজে দেখেন কে পিস্তলের ভয় দেখাতে পারে।

নবগঠিত কমিটির সভায় ডা. শাহনেওয়াজ চৌধুরীর বিষয়ে রিভিউ আবেদন করেছেন আজিজুল্লাহ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাসমত উল্লাহর সদস্য পদ যখন বাতিল করা হয়েছিলো তখন তিনি রিভিউ’র সুযোগ পেয়েছিলেন। তাহলে ডা. শাহনেওয়াজ কেন পাবে না এই দাবি জানিয়ে আমি রিভিউ আবেদন করেছি।

অপরদিকে, প্যানেল দিয়েও পরাজয়ের ভয়ে মাঠ ছেড়ে দেয়া সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী হাসমত উল্লাহ’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রথমত আমি সভাপতি প্রার্থী ছিলাম। কিন্তু প্যানেলের সবাই বললো সাইফ উল্লাহ বাদল চেয়ারম্যান সভাপতি পদে নির্বাচন করবে, তাই আমি সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু যখন দেখলাম দেলোয়ার হোসেন চুন্নুও সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন করবে তখন আমি সরে দাড়াই। এর কারণ হিসাবে তিনি বলেন, চুন্নুর সাথে আমি কিভাবে নির্বাচন করবো। আমি জয়েন্ট সেক্রেটারী সমমর্যাদার পদে দীর্ঘসময় কর্মরত ছিলাম তাই আমি সরে দাড়িয়েছি।

তিনি আরও বলেন, দ্বিতীয়ত প্যানেলের অনেকেই বেঈমানী করেছে তাই বেঈমানদের সাথে আমার কোনো সর্ম্পক নেই। ডা. শাহনেওয়াজ চৌধুরীর সদস্যপদ বাতিল করলেন আপনি নিজেও সাধারণ সম্পাদক হতে পারলেন না বিষয়টা কিভাবে দেখছেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, শাহনেওয়াজ আমার সদস্য পদ বাতিল করেছিলো, আমি আইনিভাবে জিতেছি। জিতে এসে তার সদস্যপদ নিয়ে চ্যালেঞ্জ করেছি, তার সদস্য পদ অবৈধ ছিলো, সে তা হারিয়েছে।

তাহলে কি আক্রোশের কারণেই শাহনেওয়াজ চৌধুরীর সদস্যপদ বাতিল করেছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সে আমারটা বাতিল করেছে আমি কি বসে থাকবো নাকি।

এসব বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে নবগঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন চুন্নু বলেন, প্রতিপক্ষ কেন নির্বাচন থেকে সরে দাড়িয়েছে তা আমি কিভাবে বলবো। পিস্তলের ভয় দেখিয়ে নির্বাচন থেকে বসানো হয়েছে আজিজুল্লাহ’র এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।

আপনাদের কমিটিতে জামাত-বিএনপির আধিক্য রয়েছে আজিজুল্লাহ’র অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, কে জামাত-বিএনপি করে আমি চুন্নু নাকি কাশেম জামাল তার নাম বলতে বলেন আজিজুল্লাহ সাহেবকে। মূলত আমাদের এখানে জামাত-বিএনপির কেউ নেই।

স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক এমন একটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটিতে কতজন ডাক্তার রয়েছে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে বলেন কেউ নেই। পরে বলেন, ডা. আতিকুজ্জামান সোহেল রয়েছে। তিনি তো সম্পর্কে আপনার ভাতিজা হয় একথা বললে তিনি কিছু সময় চুপ থেকে তারপর বলেন, আপনি তো সবই জানেন। সব জেনে তাহলে প্রশ্ন করছেন কেন?

৩০ জুলাই ডায়াবেটিক সমিতির এজিএম হবে, যেখানে বিগত বছরের হিসাব-নিকাশ চাওয়া হবে। যেহেতু বিগত কমিটির সভাপতির সদস্য পদ বাতিল করা হয়েছে তাহলে নবগঠিত কমিটি কার কাছে হিসাবে চাইবে এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেন নি তিনি। তবে বলেছেন, অডিট হয়েছে অডিট অনুযায়ী হিসাব-নিকাশ করা হবে।

শাহনেওয়াজ চৌধুরীর বিষয়ে রিভিউ আবেদন সম্পর্কে তিনি বলেন, তদন্ত কমিটি করা হয়েছে, তারা যে রিপোর্ট দিবে সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হবে।