পাড়া মহল্লায় চলছে পুলিশের সাড়াঁশি অভিযান...

এভাবে সন্ত্রাস দমন সম্ভব নয়, প্রয়োজন কৌশলী তৎপরতা

144
পাড়া মহল্লায় চলছে পুলিশের সাড়াঁশি অভিযান

নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ:

অবশেষে নারায়ণগঞ্জের সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো এবং কিশোর গ্যাং দমনে ব্যাপক অভিযান শুরু করেছে ফতুল্লা এবং নারায়ণগঞ্জ সদর থানা পুলিশ। তারা গত দু’দিন ধরে পাড়া-মহল্লায় টহল বাড়িয়েছে। তবে পুলিশে এই টহল সত্ত্বেও থেমে নেই সন্ত্রাসীরা।

একদিকে পুলিশ আসছে, আবার তারা চলে গেলেই নতুন করে সংঘবদ্ধ হচ্ছে সন্ত্রাসীরা। তাই নারায়ণগঞ্জের পাড়া মহল্লায় পুলিশের এই মহড়ায় তেমন কোনো কাজ হবে বলে জনগন মনে করেন না। বরং পাড়া মহল্লার সন্ত্রাসীদের তালিকা করে গ্রেফতার অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা শুরু করলে পাল্টে যাবে চিত্র এমনটাই দাবি সাধারণ জনগনের।

অন্যথায় সন্ত্রাসীরা আগের মতোই বেপেরোয়া থেকে যাবে এবং চালিয়ে যাবে সন্ত্রাস ও মাদক ব্যাবসা। তাই নারায়ণগঞ্জবাসী মনে করে, কিশোর গ্যাং আর বখাটেদের ধরতে হলে পুলিশকে সিভিল ড্রেসে একেকটি মহল্লায় একেক দিন ঢুকতে হবে এবং গ্রেফতার করতে হবে। প্রয়োজন পুলিশের ব্যাপক কঠোরতা। পাশাপাশি ব্যাপক মহড়া অব্যাহত রাখতে হবে।

এদিকে নারায়ণগঞ্জে ভয়ংকর হয়ে উঠেছে পাড়া মহল্লার সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো। বিশেষ করে কিশোর ও যুবক বয়সী সন্ত্রাসীরা সারা নারায়ণগঞ্জে শুরু করে দিয়েছে বেপরোয়া তান্ডব। যার ফলে গত সাত দিনে নারায়ণগঞ্জ সদর এবং ফতুল্লা থানায় অন্তত তিনটি আলোচিত হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে। এসব হত্যাকান্ড হলো নারায়ণগঞ্জ সদর থানার দেওভোগের সুব্রত মন্ডল জয় হত্যাকান্ড, একই থানার আলীরটেকের অটো রিকশা চালক সিয়াম হত্যাকান্ড এবং ফতুল্লা থানার ইসদাইরের ধ্রুব দাস হত্যাকান্ড। প্রত্যেকটি হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে এলাকার উঠতি বয়সী সন্ত্রাসীরা।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, যারা এসব হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে তারা সকলেই মাদকাসক্ত এবং অনেকে সরাসরি মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। ফলে দেখা যায় গোটা নারায়ণগঞ্জ জুরে মাদকের ছড়াছড়ির কারনেই ঘটে চলেছে একের পর এক হত্যাকান্ড। ফলে এই জেলার সর্বত্র এখন সাধারন মানুষের মাঝে চরম আতংক ছড়িয়ে পড়েছে।

বিশেষ করে স্কুল কলেজে পড়ুয়া ছেলে মেয়েদের পিতামাতা তথা অভিবাবকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে চরম আতংকের মাঝে বসবাস করছেন। তাই সন্তান ঘর থেকে বের হওয়ার পর ঘরে না ফেরা পর্যন্ত তারা দুশ্চিন্তার মাঝে বসবাস করছেন। বার বার সন্তানের খোঁজ নিচ্ছেন।

এদিকে নারায়ণগঞ্জবাসী মনে করে, দুই কারনে সম্প্রতি পাড়া মহল্লায় সন্ত্রাসী তৎপরতা বেড়েছে। ১) বিভিন্ন নেতার রাজনৈতিক মিছিলে লোকের যোগান দিতে এক শ্রেনীর পাতি নেতা সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছে। ২) মাদকাসক্তরা সংঘবদ্ধ হয়ে মাদক সেবন করছে এবং সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে নিয়োজিত রয়েছে। যার ফলে সমাজের সর্বত্র চরম বিশৃংখলা ছড়িয়ে পরেছে। ঘটছে খুনের পর খুনের নৃশংসতা।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর থানার দেওভোগ পাক্কা রোড এলাকার বাসিন্দা মোল্লা আনোয়ার হোসেন বলেন, আমার দুই ছেলে এক মেয়ে। ছেলেরা বড়। এক ছেলে কলেজে এবং অপর ছেলে নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুলে পড়ে। তাই ওরা ঘর থেকে বের হয়ে যতোক্ষন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বা বাহিরে থাকে ততোক্ষন টেনশানে থাকি। কেননা, পত্রিকার পাতায় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চোখ রাখলেই নজরে পরে খুন, ছিনতাই আর মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রন নিয়ে ভয়ংকর সব ঘটনার খবর। সারা নারায়ণগঞ্জে কিশোর গ্যাং এর ছড়াছড়ি। তাই আমি মনে করি এখনই যদি র‌্যাব এবং পুলিশ আরো ব্যাপক তৎপরতা শুরু না করে তাহলে খুনের ঘটনা আরো বেড়ে যাবে।

একই রকম প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করেন ফতুল্লা থানার মাসদাইর এলাকার ব্যবসায়ী আলী হোসেন প্রধান। তিনি বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি নারায়ণগঞ্জের আইনশৃংখলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। তাই আমরা আমাদের সন্তানদের নিয়ে আতংকের মাঝে বসবাস করছি। আতংকের কারন হিসাবে তিনি বলেন, প্রধানত সমাজের নীরিহ ছেলেদেরকে বিনা অপরাধে খুন করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত সমাজের যেভাবে মাদকের ছড়াছড়ি লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে যেকোনো সময় আপনার আমার যে কারো সন্তান সঙ্গদোষে মাদকাসক্ত হয়ে পরতে পারে। তাই আমি মনে করি বর্তমানে সন্ত্রাস বিস্তারের মূলে রয়েছে মাদকের সহজলভ্যতা। তাই মাদকের বিস্তার রোধ করতে সংশ্লিষ্টদের কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানান তিনি।