নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ:
নগরবাসীর বিনোদনের কথা চিন্তা করে ইতিমধ্যেই নগরীতে বেশ কয়েকটি বিনোদন কেন্দ্র, লেক, পার্ক নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে নগরীর ১৬নং ওয়ার্ডের শেখ রাসেল লেক-পার্কটি। তবে নগরবাসীর বিনোদনের জন্য নির্মিত হলেও পার্কটি বর্তমানে রয়েছে হকারদের দখলে। হকারদের কারণে নগরবাসী এখন আর নির্বিঘ্নে হাটা-চলা করতে পারছেনা।
রবিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুরো পার্কের সামনের অংশটি হকারদের দখলে রয়েছে। চারুকলা ইন্সটিটিউটির গেইট অর্থ্যাৎ পার্কের প্রধান ফটক থেকে শুরু করে শুক্কুর কারী মসজিদের সামনে, পাক্কারোডের মোড়, ২নং বাবুরাইলের মোড়, ১নং বাবুরাইলের মোড় হয়ে জিমখানায় পুরাতন মসজিদ পর্যন্ত প্রায় শতাধিক টং দোকান রয়েছে।
আরও দেখা যায়, অবৈধভাবে পার্কের সামনের রাস্তা দখল করে এখানে বার্গার, চিকেন ফ্রাইসহ বিভিন্ন ধরনের ফাস্টফুড আইটেমের খাবার, চা, কফি, আইসক্রিম, ইফতারির বাজার, তরমুজ, ডাব, শাক-সবজিসহ বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন হকাররা। রাস্তায় এসব টং দোকানগুলো রাখলেও প্রতিটি দোকানদারই ক্রেতাদের জন্য চেয়ার বসিয়েছে পার্কের ফুটপাতে। ফলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ পথচারীসহ লেকের পাড়ে হাটতে আসা মানুষদের।
প্রায় প্রতিদিনই শেখ রাসেল পার্কের ওয়াকওয়েতে হাটতে আসেন রাসেল মিয়া। ভোগান্তির বিষয়ে তিনি বলেন, ভোগান্তির কথা কি আর বলবো। মেয়র মহোদয় এতো সুন্দর লেক-পার্ক নির্মাণ করে দিলেন আমাদের তথা নগরবাসীদের জন্য। কিন্তু আমরা এর সুফল ভোগ করতে পারছিনা, এসব অবৈধ দোকানদারদের কারণে। ওরা যেভাবে দোকান খুলে বসেছে, তাতে আমাদের হাটাচলাই দায়।
কাশিপুর এলাকা থেকে ফ্যামিলি নিয়ে ঘুরতে আসা মনির হোসেন বলেন, আমি মাঝে মাঝেই পরিবার পরিজন নিয়ে এখানে ঘুরতে আসি। আগে যেভাবে স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরতে পারতাম এখন আর সেই অবস্থা নেই। অবৈধ এসব টং দোকানের কারণে পার্কের ওয়াকওয়েতে উঠাই যায় না। তার উপর এসব দোকানের চেয়ার বসানোর কারণে হাটা-চলা করা মুশকিল হয়ে পড়ছে। তাই ভাবছি সামনের সপ্তাহ থেকে এখানে আর আসবো না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক মুরুব্বী জানান, পার্কের ফুটপাত দিয়ে সাধারণ মানুষ চলাচলে ভোগান্তি পোহালেও এসব টং দোকান বসিয়ে অনেকেই লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। তিনি বলেন, এমনকি অনেক ছিচকে চোর-সন্ত্রাসীরাও এখানে টং বসিয়ে উপার্জন করছে লাখ লাখ টাকা।
এতো আয় কিভাবে সেই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব টং দোকান তো আর এমনিতেই বসানো হয় না। ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা সালামি নিয়ে বসানো হয়। তাছাড়া টং প্রতি গড়ে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা ভাড়াও তোলা হয় এখান থেকে। ফলে ফকিন্নির ছেলেরাও নাকি এখন লাখপতি হচ্ছেন ফুটপাতের এ আয় থেকে জানান তিনি।
কারা বসায় এ টং সে বিষয়ে তিনি বলেন, অনেকে নিজিদের কে মেয়রের কাছে লোক, ঘনিষ্ঠজন হিসাবে পরিচয় দিয়ে থাকে। অনেকে আবার নিজেকে হুমড়া-চোমরা মনে করে। অনেকে আবার রাস্তার উল্টো দিকে দোকান থাকার সুবাধে ফুটপাত ভাড়া দিয়ে খাচ্ছে। আর এসব সালামি ও ভাড়া নিয়ে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার মারামারি, থানায় অভিযোগ ও বিচার-শালিশের ঘটনাও ঘটেছে জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে সিটি কর্পোরেশনের সিইও আবুল আমিনের মোবাইল ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। এছাড়া নগর পরিকল্পনাবিদ মইনুল ইসলাম, বাজার কর্মকর্তা জহির ও পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা আলমগীর হিরণ কল রিসিভ করেন নি।
একই বিষয়ে কথা হলে ১৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রিয়াদ হাসান অকপটে স্বীকার করেন এ ভোগান্তির কথা। তিনি বলেন, এটা তো অনেক আগে থেকেই চলছে। সবে মাত্র আমি ২ মাস যাবৎ দায়িত্ব নিয়েছি, এর মধ্যে একমাস তো রোজাই।
রোজার মাসেই বেশী ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে জনগনকে, তাই এখন কোনো পদক্ষেপ নিবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যানজটে তো আমি নিজেও পড়ছি প্রতিদিন। ঈদের মধ্যে তো এগুলো একটু হয়, পুরো নারায়ণগঞ্জই তো জ্যামে থাকে। এখন কিছু করলে মানুষের পেটে লাথি দেয়া হবে, কেননা এটার মধ্যে গরীব মানুষরা একটু কামাক না, সমস্যা কি? আর এটা নিরসনের জন্য আরো ১১ মাস আছে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, এদিকে তো কারোই ধান্ধা নেই। অনেকেই সরকারি রাস্তা ভাড়া দিয়ে ও সালামি নিয়ে সেই টাকা নিজেদের পকেটে পুরছে জানালে পরক্ষণেই তিনি আবার বলেন, জানি আমি, জানি নামগুলো মোবাইলে নেয়া যাবে না। অনেক কিছু আপনিও জানেন, অনেকে কিছু আমিও জানি। এটা সামনা-সামনি বসলে কথা বলবো।