নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ:
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীণ ১৬নং ওয়ার্ডের দেওভোগ আখড়া এলাকায় মল্লিক বাড়িতে শিশু ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে বৃদ্ধের বিরুদ্ধে। গত শুক্রবার রাতে সোয়া ১১টায় সাড়ে ৪ বছর বয়সী ওই শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করে ৬৫ বছরের ছিদ্দিক সরদারের বিরুদ্ধে। তার গ্রামের বাড়ি যশোরের নীলগঞ্জ তাতীপাড়া এলাকায়। বর্তমানে সে নারায়ণগঞ্জের আনন্দ হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করেন এবং দেওভোগে মল্লিক বাড়িতে ভাড়া থাকেন।
ঘটনা জানাজানি হলে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এস এম আকরামের বোন, আনন্দ হোটেলের মালিকের নির্দেশে হোটেলের ২ জন ম্যানেজার গিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেয়। শিশুটির বাবা-মাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে মামলা দায়ের না করতে হুমকি ধমকি দেয়ারও অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা। খবর পেয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর থানার এস আই রাজু আহমেদ সহ পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে যায়।
কিন্তু আনন্দ হোটেলের মালিকপক্ষ প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে ঐ অভিযুক্ত বৃদ্ধের বিরুদ্ধে থানায় কোনো মামলা দায়ের করতে সাহস পায়নি শিশুটির বাবা-মা। স্থানীয়দের অনেকে জানায়, শিশুর পরিবার আইনের আশ্রয় নিতে চাচ্ছে, কিন্তু প্রভাবশালী মহলের চাপে তারা তা পারছে না।
এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী শিশু কণ্যার পারিবারিক সুত্রে জানা যায়, আনন্দ হোটেলের সিকিউরিটি গার্ড ছিদ্দিক সরদার ও ভুক্তভোগী শিশুর পরিবার নাসিক ১৬ নং ওয়ার্ডের দেওভোগ আখড়া এলাকায় মল্লিক বাড়িতে ভাড়া থাকেন। বৃদ্ধ ছিদ্দিক ঐ শিশুটিকে নাতনী বলে ডাকতো এবং শিশুটিও তাকে নানা বলে ডাকতো। পাশাপাশি ঘর হওয়ায় শিশুটি প্রায় বৃদ্ধের ঘরে যাতায়াত করতো। শুক্রবার রাত ১১ টার দিকে বৃদ্ধ ছিদ্দিক শিশুটিকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর বৃদ্ধের ঘরের লাইট বন্ধ থেকে শিশুটির মা ঘরে প্রবেশ করে শিশুটিকে নগ্ন অবস্থায় দেখতে পায়। শিশুর মার ডাক চিৎকারে অন্যান্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা বাইরে বের হয়ে এসে বৃদ্ধকে আটক করে। কিন্তু পরবর্তীতে আনন্দ হোটেলের ২জন ম্যানেজার এসে শিশুর পরিবারের সাথে কথা বলে মামলা করতে নিষেধ করে। তারা জানায় হোটেলের মালিক বৃদ্ধকে শাস্তি দিবেন, আপনারা মামলা-মোকদ্দমায় যেয়েন না। হোটেল মালিক সাবেক এমপির বোন এবং প্রভাবশালী হওয়ায় শিশুর পরিবার ভয়ে মামলা করেনি বলে দাবি স্থানীয়দের।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এস এম আকরামের বোন ও আনন্দ হোটেলের মালিকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, শিশুর পরিবারের লোকজন আজ (শনিবার) আমার কাছে এসেছিলো। আমি সব শুনলাম, আল্লাহর রহমতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি, ঘটতে নিয়েছিলো।
ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার পিছনে আপনার হাত রয়েছে বলে জানতে পারলাম। একথার উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এই রেস্টুরেন্টটা প্রায় ৩০ বছর ধরে চলছে। এ ধরনের কোনো কর্মচারী আমার এখানে আসে নাই। এমনকি আমাদের কর্মচারীদের স্টাফ কোয়ার্টারে সিগারেট খাওয়াও নিষেধ। যাই হোক, এই লোকটাকে আমি ভালো করে চিনিও না, একজনে দিসে, আমি কাজে রেখে দিয়েছি। তার বয়স ৬৫’র বেশী। সে হোটেলের গেইটে বসে থাকে। তার ভিতরে যে এমন পশুত্ব তা কেউ বুঝতে পারে নাই। তারপরও আমি শিশুর পরিবারকে দেখে আমার খুবই মায়া লাগছে। আমি তাদের বলেছি, আমি এটার উপযুক্ত বিচার করবো। যেই লোকটা খারাপ কাজ করছে, সে তো খারাপ, চরিত্র খারাপ। কিন্তু তার তো আর্থিক অনটন, সে যশোর থেকে এখানে এসেছে কাজের জন্য। তারপরও আমি শিশুর পরিবারকে আর্থিক সহযোগীতার কথা বলেছি, ওরা বলেছে টাকা-পয়সার দরকার নাই। উপযুক্ত শাস্তি হলেই আমরা খুশী।
ঘটনাস্থলে যাওয়া সদর থানার এস আই রাজু আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, শিশুর পরিবার মামলা করতে না চাইলে আমরা কি করবো।
তবে, নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এড. সাখাওয়াত হোসেন খান ও বর্তমান সভাপতি এড. হাসান ফেরদৌস জুয়েল বলেন, শিশুর পরিবার মামলা করতে না চাইলেও পুলিশ চাইলে মামলা করতে পারে। কেননা পুলিশের কাছে তো আইনের ক্ষমতা দেয়াই আছে।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) নাজমুল হাসানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করেন নি।