দু/এক দিনের মধ্যেই কঠিন ব্যবস্থা নেয়া হবে- এডি. এসপি ট্রাফিক...

১নং রেল গেইট-কালিরবাজারে হকার, চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম

391
কালিরবাজার ও ১নং রেল গেইটে হকারদের দৌরাত্ম। ইনসেটে চাঁদাবাজ সোহেল

নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ:

আসন্ন ঈদুর ফিতরকে সামনে রেখে নগরীর ১নং রেল গেইট, নারায়ণগঞ্জ কলেজের সামনে, নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুলের সামনে, পোষ্ট অফিসের সামনে, ফ্রেন্ডস মার্কেটের সামনে, র‌্যাব অফিস-শিল্পকলা একাডেমী, পুরাতন কোটসহ পুরো কালিরবাজারে রাস্তা বন্ধ করে চলছে অবৈধ দোকানবাণিজ্য। পুলিশ প্রশাসনসহ রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় অবৈধ এ বাণিজ্য চালাচ্ছে চিহ্নিত অপরাধী সোহেল ওরফে ট্যারা সোহেল।

জানা যায়, ঈদের বাকি দিনগুলোতে এখানে ব্যবসা করার জন্য প্রতি চার বর্গফুট রাস্তার জন্য সালামি নেয়া হচ্ছে ১ থেকে ২ লাখ টাকা এবং প্রতিদিন ভাড়া নেয়া হচ্ছে ১ থেকে ২ হাজার টাকা। পুরাতন কোট, র‌্যাব অফিস-শিল্পকলা একাডেমী, ফ্রেন্ডস মার্কেটের সামনেসহ পুরো কালিরবাজারে অবৈধ হকার আছে প্রায় পাঁচ শতাধিক। তাদের কাছ থেকে দৈনিক গড়ে ১ থেকে ২ হাজার টাকা করে প্রতিদিন প্রায় ৫ লাখ টাকা চাঁদা উঠে।

ফলে বেদখলের ধারাবাহিকতায় ও হকারদের কারণে ফুটপাতগুলো প্রভাবশালী, ছিচকে সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের জন্য কোটি টাকা আয়ের উৎস হয়ে দাড়িয়েছে। ফুটপাত পথচারীদের জন্য ব্যবহার নিশ্চিত করার উচ্চতর আদালতে নির্দেশ থাকলেও তা মানছে না কেউ। উত্তোলিত বিপুল পরিমাণ টাকার ভাগ যাচ্ছে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর, সরকারদলীয় নেতৃবৃন্দ ও পুলিশের কাছে দাবী নগরবাসীর।

ফুটপাত দখলের বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রুমন রেজা বলেন, আসলে হকারদের কারণে আমরা নগরবাসী এখন অতিষ্ঠ। শুধু ফুটপাত নয়, দুই পাশে রাস্তার অর্ধেক দখল করে ব্যবসা করছে তারা। ফলে রাস্তা যা আছে তার অর্ধেকও ব্যবহার করা যাচ্ছে না, ফলশ্রুতিতে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে আমাদের। নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুল ও নারায়ণগঞ্জ কলেজের ১৫-২০ হাজার শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের রীতিমতো যুদ্ধ করে স্কুল-কলেজে যাতায়াত করতে হয়।

তিনি আরও বলেন, ঈদকে সামনে রেখে হকারদের এই নৈরাজ্য বহুগুন বেড়েছে। আমরা দেখেছি একজন হকারের ৩/৪টি দোকান আছে এখানে, সে তার কর্মচারীদের দিয়ে এই সকল দোকান চালাচ্ছে আর ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে জনসাধারণকে। কিছুদিন আগে আমাদের গভর্নিং বডির সভাপতি হাতেম সাহেব নিজে এসে হকারদের সরানোর চেষ্টা করেন। আমি নিজে বিগত ১৫ দিনে অন্তত ৭বার ওসি সাহেবকে ফোন দিয়েছি হকারদের জন্য। পুলিশ আসলে হকাররা চলে যায়, পুলিশ চলে গেলে হকাররা আবার বসে। আমি বলবো স্থানীয় কাউন্সিলর, সিটি কর্পোরেশন ও পুলিশ প্রশাসনকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। এখান থেকে অনেকেই লাভবান হতে পারে পুলিশ প্রশাসনের উচিৎ তাদের খুঁেজ বের করে আইনের আওতায় আনা।

নগরবাসীর মতে, নগরীর ব্যস্ততম এলাকা ১নং রেল গেইট, কালিবাজার জুড়ে ফুটপাতগুলো দখল করে বাণিজ্য, নৈরাজ্য, রাজনীতি, হানাহানি নতুন নয়। ফুটপাতের মালিকানা কাগজে কলমে সিটি কর্পোরেশনের হলেও বাস্তবের চিত্রটি ভিন্ন। ফুটপাতের মালিক ক্ষমতায় থাকা প্রভাবশালী, অপরাধী ও ছিচকে সন্ত্রাসীরা। তিনি বলেন, কার্যকর আইন ও উচ্চ আদালতের আদেশ থাকা সত্ত্বেও পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের গাফিলতির কারণে নগরীর ফুটপাতগুলো দখলমুক্ত রাখা সম্ভব হচ্ছে না।

ফুটপাত থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, কালিরবাজার রোডের ফুটপাতের নিয়ন্ত্রণে আছেন সোহেল নামে এক ছিচকে সন্ত্রাসী, ১নং রেল গেইট রয়েছে স্থানীয় কাউন্সিলরের এক সহযোগীর। এ দুজন ও তাদের সহযোগীরা দোকান বসানোর অগ্রিম ও দৈনিক চাঁদা কালেকশন করে।

এ বিষয়ে কথা বলতে যোগাযোগ করা হলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. জাহেদ পারভেজ বলেন, ভাই আমরা অনেক কষ্ট করে বঙ্গবন্ধু সড়ককে হকার ও ফুটপাতমুক্ত রাখতে কাজ করছি। ২/১দিনের মধ্যেই কালিরবাজারে ফুটপাতমুক্ত করতে কঠোর ব্যবস্থা নিবে। আর ফুটপাতে যে বা যারা চাঁদাবাজি করছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেন পুলিশের এ উর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

একই বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করে ১৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ^াস এবং চাঁদাবাজির অভিযোগে অভিযুক্ত ছিচকে সন্ত্রাসী সোহেল কল রিসিভ করেন নি।