প্রশাসনের ছত্রছায়ায়, সরকারী দলের ইন্ধনে হামলা করায়...

হামলাকারীরা মামলার বাইরে দাবি বিএনপি নেতাকর্মীদের

161

নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ:

গত ৩০ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির উপর পদবঞ্চিত নেতাকর্মীদের হামলার ঘটনায় ৩৩৭ জনকে আসামী করে মামলা দেয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। একইসাথে নারায়ণগঞ্জ সদর থানা পুলিশের দায়ের করা এ মামলাকে হাস্যকর ও দু:খজনক বলেও উল্লেখ করেছেন তারা। তাদের দাবি, হামলার ঘটনায় যারা মারধরের শিকার হয়েছে তাদেরকেই আসামী করা হয়েছে, কিন্তু যারা হামলা করেছে তাদেরকে আসামী করা হয়নি।

বিএনপি নেতাকর্মীদের মতে, সরকারী দলের সাথে আতাত করে মহানগর বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীকে বাতিল করতেই এ হামলা চালায় পদবঞ্চিত মাজহারুল ইসলাম জোসেফ ও তার অনুসারীরা। নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপিকে কেন্দ্রের সামনে দুর্বল জাহির করতে ও সরকারি দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই এ হামলা চালানো হয়েছে বলে মনে করেন তারা।

এজাহার সুত্রে জানা যায়, সেদিন হামলার শিকার মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মনির হোসেন খানকে ১ নম্বর আসামী করা হয়। এছাড়া, সদর থানা বিএনপির সভাপতি মাসুদ রানা, সাধারণ সম্পাদক এড. আনোয়ার প্রধান, সদ্য ঘোষিত মহানগর যুবদলের সদস্য সচিব শাহেদ আহমেদ, সদ্য ঘোষিত মহানগর স্বেচ্ছাসেবকদলের আহবায়ক সাখাওয়াত ইসলাম রানা, মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুর রহমান সাগর, সাধারণ সম্পাদক রাহিদ ইশতিয়াক সিকদার, মহাগনর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ফতেহ মো. রেজা রিপন, এড. সরকার হুমায়ন কবির, মহানগর যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক মোয়াজ্জেম হোসেন মন্টিসহ বেশ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করা হয়।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ মহাগনর বিএনপির সভাপতি এড. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, আমরা অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছি এই জন্য যে, আমাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মধ্যে হামলা করে যাদেরকে আহত করা হয়েছে, প্রশাসন বাদি হয়ে তাদেরকেই আসামী করেছে। কিন্তু যারা এই হামলা চালিয়েছে তাদেরকে আসামী করা হয়নি। এতেই বুঝা যায়, প্রশাসনের ছত্রছায়ায় এবং সরকারী দলের ইন্ধনে ন্যাক্কারজনক এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। যাদেরকে আসামী করা হয়েছে তারা মূলত এখানে ভুক্তভোগী।

তিনি আরও বলেন, এর মাধ্যমে আসলে ভুক্তভোগীদের প্রতি অন্যায় করা হয়েছে। মূলত আমাদের দলীয় কার্যক্রমের গতিকে থামিয়ে দেয়ার জন্যই প্রশাসনের এই ধরনের তৎপরতা। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, সরকারী দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে, মহানগর বিএনপির মৌন মিছিল পণ্ড করার উদ্দেশ্যে এবং আমাকে হত্যা করার জন্য এ হামলা চালানো হয়েছে। সরকারী দলের এজেন্ট মাজহারুল ইসলাম জোসেফ, লাঙ্গল মার্কার দালাল আতাউর রহমান মুকুল, নব্য দালাল ও কাউন্সিলর আবুল কাউসার আশা, নারী কেলেঙ্কারীর হোতা এবং ওসমানীয় নব্য দালাল ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর খোরশেদসহ আরও এক কাউন্সিলরের পরিকল্পনায় ন্যাক্কারজনক এ হামলা চালানো হয়েছিলো।

তিনি আরও বলেন, তাদের মূল উদ্দেশ্যই ছিলো কর্মসূচী পণ্ড করা এবং আমাকে হত্যা করা। কিন্তু আল্লাহর রহমতে তারা আমাদের প্রোগ্রাম পণ্ড করতে পারে নাই এবং আমাকে হত্যাও করতে পারেনি। আমাদের নেতাকর্মীদের প্রতিরোধে তারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। ২০১৮ সালের মতো এবারও ওসমান পরিবারকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে ওয়াকফার দেয়ার জন্য তারা ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। এজন্যই আমি বারবার বলি, নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে ঘাপটি মেরে বসে থাকা ওসমান পরিবারের দালালরা, লাঙ্গল মার্কার দালালরা একের পর এক ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। এই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এই দালালরা মাজহারুল ইসলাম জোসেফকে তাদের অন্তর্ভূক্ত করে পরিকল্পনা করে হামলা চালিয়েছে। এ কারণেই যারা হামলার শিকার হয়েছে তাদের নামে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দেয়া হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। একইসাথে বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।

এদিকে, পুলিশের দায়ের করা মামলায় মহানগর যুবদলের সদস্য সচিব শাহেদ আহমেদকে আসামী করা হলেও আহবায়ক মনিরুল ইসলাম সজলকে আসামী না করায় তাকে নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছে যুবদলের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী। যুবদল নেতাকর্মীদের অনেকেই বলেন, মনিরুল ইসলাম সজলও হয়তো সরকারী দলের ছত্রছায়ায় চলেন। এজন্যই তাকে হয়তো মামলায় আসামী করা হয়নি।

উল্লেখ্য, গত ২৯ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা-মহানগর যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবকদলের আহবায়ক কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে পরদিন মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালায় যুবদলের পদবঞ্চিত নেতা মাজহারুল ইসলাম জোসেফের অনুসারীরা। হামলায় মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মনির হোসেন খান, সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপুসহ অন্তত ১৫জন বিএনপি নেতাকর্মী ও বেশ কয়েকজন সাংবাদিক আহত হয়।