চরম ভোগান্তিতে জনসাধারণ, দেখার যেন কেউ নেই...

হকারদের দখলে শহীদ মিনার, নিরব প্রশাসন

72
হকারদের দখলে শহীদ মিনার, নিরব প্রশাসন

নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ:

নারায়ণগঞ্জের প্রাণকেন্দ্র চাষাড়া এলাকায় শহীদ মিনার ও আশেপাশের সড়ক-ফুটপাত দখল করে অবৈধ দোকানপাট বসিয়ে তীব্র ভোগান্তির সৃষ্টি করছে হকাররা। কতিপয় পাতি নেতারা এসব সড়ক-ফুটপাত ভাড়া দিয়ে বসাচ্ছে অবৈধ এ হকারদের। ফলে সড়কটি চলাচলে অনেকটা অনুপযোগী হয়ে পড়ছে বলে দাবি জনসাধারণের।

জানা গেছে, নগরীতে যানজট এখন নিত্যদিনের বিষয়। তবে চাষাড়া এলাকায় যানজটের পরিমাণ সবসময়ই একটু বেশী থাকে। তাই বঙ্গবন্ধু সড়কের নিতাইগঞ্জ থেকে চাষাড়া পর্যন্ত আসতে গেলে প্রেসক্লাব হয়ে শহীদ মিনারের পেছনের সড়কটি চাষাড়ায় যাতায়াতের বিকল্প সড়ক হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

নগরীর প্রাণকেন্দ্র হওয়ায় সবসময়ই প্রচুর লোক সমাগম ঘটে চাষাড়ায়। মার্কেট, ক্লিনিক, ডায়াগনোস্টিক সেন্টারসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সকল চাহিদা মেটাতে চাষাড়ায় প্রত্যেককেই আসতে হয়। এজন্য এ সড়কটি ব্যবহার করেন অনেকে। তবে কিছু পাতি নেতারা এ সড়ক ও ফুটপাত দখল করে ভাড়া দিচ্ছে হকারদের কাছে। এমনকি শহীদ মিনারের ভিতরেও এখন হকারদের দাপট।

জানা যায়, বঙ্গবন্ধু সড়কে হকার উচ্ছেদে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী যখন কঠোর অবস্থানে ছিলেন তখন হকার উচ্ছেদে শহরের সামনের দিক তথা বঙ্গবন্ধু সড়কে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করতো পুলিশ। কিন্তু গত রমজানের আগে থেকে মেয়র কিছুটা নিরব হওয়ায় সুযোগ পায় প্রশাসন। ফলে প্রশাসনও কঠোর অবস্থান থেকে ফিরে আসে। মাঝে মাঝে নামকা ওয়াস্তে কয়েকবার অভিযান করতে দেখা গেলেও হকার উচ্ছেদের বিষয়ে পুলিশের অনিহার বিষয়টি চোখে পড়ে নগরবাসীর।

ফলে, বঙ্গবন্ধু সড়কের সামনের দিকে বেড়ে যায় হকারদের দৌরাত্ম। একইসাথে কিছুটা পেছনে হওয়ায় এবং প্রভাবশালীদের কারণে শহীদ মিনারের পিছনের সড়কটির রাস্তা-ফুটপাত আবারও দখল করে হকাররা। এতে করে পুরোনো চেহারায় ফিরে যায় সড়কটি এবং তীব্র ভোগান্তি ও যানজটের কবলে পড়ে ভোগান্তি পোহাতে হয় জনসাধারণকে।

আরও জানা গেছে, স্থানীয় কিছু চাঁদাবাজ ও পাতি নেতাদের কাছে আয়ের বড় উৎস এ সড়কটি। ৪-৫ ফুট হিসাবে একেকটি দোকান বসিয়ে ১ লাখ থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত সালামি নেয় ঐ পাতি নেতারা। একইসাথে প্রতিমাসে ভাড়া বাবদ নেয়া হয় ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। ফলে গুটি কয়েকজন মানুষ অবৈধ এ অর্থ হাতিয়ে নিলেও মূলত দুভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকে।

সরেজমিনে দেখা যায়, শহীদ মিনারের ভেতরে-বাইরে ও সামনে-পিছনের মূল রাস্তা-ফুটপাত হকারদের দখলে। ভিতরে অন্তত ২০টি চটপটি-ফুচকার দোকান, ১০টি পান-সিগারেটের দোকান দেখা যায় নিয়মিত। এছাড়া শহীদ মিনারের চারপাশের রাস্তা ও ফুটপাতও হকারদের দখলে। মিনারের পিছনের দিকটা দখলে রেখেছে ৩০-৪০ জন ভাজাপোড়া বিক্রেতা ও চায়ের দোকানদাররা। সামনের দিকে রয়েছে ২৫-৩০টি ফাস্টফুড, আখের রস, গরুর বট-হালিম, পান-সিগারেটের দোকান। প্রত্যেক দোকানদার আবার ক্রেতাদের জন্য চেয়ার বসিয়েছে রাস্তায়। ফলে চলাচলের কোনো রাস্তা না থাকায় ক্ষোভ নিয়ে পথ চলতে হচ্ছে পথচারীদের। সড়কটির তিন ভাগের দুই ভাগই হকারদের দখলে। ফলে একটি রিক্সা চলাচল করতে গেলেও পথচারীদের গায়ের সাথে লেগে গিয়ে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। তবে এসব দেখার যেন নেই কেউ।

নগরীর প্রাণকেন্দ্রে রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে দিব্যি ব্যবসা করলেও প্রশাসনের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে নগরবাসী। তারা বলছে, প্রশাসন যদি চায় তাহলে সবই সম্ভব। যেমনটা আমরা দেখেছি সাবেক পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদের সময়কালে। তিনি যখন নারায়ণগঞ্জের এসপি ছিলেন তখন ফুটপাত থেকে সকল হকার উচ্ছেদ করে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেন ফুটপাত। ফলে ব্যাপক প্রশংসাও কুড়িয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তার পরবর্তীতে যে পুলিশ সুপাররা এসেছেন তারা কেন ফুটপাত হকারমুক্ত রাখতে পারেননা এ প্রশ্ন নগরবাসীর। পুলিশের সদিচ্ছার অভাব বলেও মনে করেন তারা।

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল (পিপিএম) বলেন, আমি এখনই ওসিকে বলে দিচ্ছি। ক্লিন করে দিবে।