শহীদ জিয়ার শাহাদাত বার্ষিকীতে ব্যাপক প্রস্তুতি নারায়ণগঞ্জ বিএনপির

59
শহীদ জিয়ার শাহাদাত বার্ষিকীতে ব্যাপক প্রস্তুতি নারায়ণগঞ্জ বিএনপির

নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ:

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র প্রতিষ্ঠাতা, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪২ তম শাহাদৎ বার্ষিকী উপলক্ষ্যে ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহন করেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা-মহানগর বিএনপি ও সহযোগী অঙ্গসংগঠগুলো। বিএনপি শোকের এই দিনে স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের পতন ঘটানোর শপথ নিতে চায় বলে জানিয়েছে দলটির নেতাকর্মীরা।

শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে ৫দিন ব্যাপী কর্মসূচীর ঘোষণা করেছে জেলা বিএনপি, ৭দিন ব্যাপী কর্মসূচী হাতে নিয়েছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি। মহানগর বিএনপির বিদ্রোহী অংশ ৪দিনের, মহানগর যুবদল ও মহানগর ছাত্রদল ৫দিনেরসহ অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোও সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। আলোচনা সভা, কুরআন খানি, ফাতেহা পাঠ, শহীদ জিয়ার রূহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া, মিলাদ ও অসহায়দের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণসহ নানা কর্মসূচী পালন করবে দলটির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা।

দলটির নেতৃবৃন্দরা জানায়, এই মহান নেতা, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক, আধুনিক বাংলাদেশ নির্মাণের মহান পথ প্রদর্শক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে স্মরণীয় করে রাখবার জন্য আমরা আজ থেকে জেলা ও মহানগরীর আওতাধীণ প্রতিটি উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে অসংখ্য স্পটে দোয়া ও মিলাদের আয়োজন করা হবে।

জেলা বিএনপির সভাপতি গিয়াস উদ্দিন বলেন, এই দেশ কারও ব্যক্তিগত সম্পদ না। যেকোন মূল্যে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য আমরা কাজ করে যাবো। আমরা ভোটাধিকারের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করছি। যদি নির্বাচন হয় জনগণ ভোট দেয় তাহলে তারা আর ক্ষমতায় আসতে পারবে না। শহীদ জিয়ার শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষ্যে শোককে শক্তিতে পরিণত করে আন্দোলনের ঢেউ তোলার শপথ নেয়ার কথাও জানান তিনি।

এ বিষয়ে মহানগর বিএনপির আহবায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪২ তম শাহাদাৎ বার্ষিকী আমরা এমন সময় পালন করতে যাচ্ছি, যখন দেশ চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। বর্তমানে মানুষের ভোটের অধিকার নেই, ভাতের অধিকার নেই, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে মানুষ আজ না খেয়ে অর্ধাহারে, অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার লক্ষ্যে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শ বুকে ধারণ করে আমরা গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠার লড়াই অব্যাহত রাখবো এবং অচিরেই এর সরকারকে ক্ষমতার মসনদ থেকে টেনে হিচরো নামাবো।

জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেন, ৪২ তম শাহাদাৎ বার্ষিক এমন একটা সময় আমরা পালন করছি, যখন আমাদের চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগার রয়েছেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, জননন্দিত জননেতা তারেক রহমান সাহেব ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে দেশের বাইরে অবস্থান করছে। দেশের মানুষের কোনো অধিকার নাই, চরম একটা অরাজকতা বিরাজ করছে সর্বক্ষেত্রে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, শাসন ব্যবস্থায় দুর্ণীতি এমনভাবে বাসা বেধেছে যে, আজকে দেশে একটা দুর্ভিক্ষ অবস্থা বিরাজ করছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে চায় জনগন। ৪২ তম শাহাদাত বার্ষিকীতে আমরা শুধু এটাই বলবো, যার হাত ধরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা হয়েছে, যার হাত ধরে বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল ও স্বনির্ভর দেশ হিসেবে বিশে^র দরবারে জায়গা করে নিয়েছে, সেই নেতার দেখিয়ে যাওয়া পথ ও জাতীতবাদী আদর্শ ধারণ করে বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করবো। তাহলেই বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম ও ঋণমুক্ত উন্নয়নশীল জাতিতে পরিণত হতে চাই। স্বাধীণতার ৫২ বছর পরেও আজকে আমাদেরকে ঋণের জন্য অন্যের সাহায্যের জন্য দাড়িয়ে থাকতে হয় এটা আমাদের জন্য লজ্জার। তাই ৪২তম শাহাদাত বার্ষিকীতে জনগনকে আমরা আহবান জানাবো যে, আমাদের পতাকা তলে ঐক্যবদ্ধ থাকেন। একমাত্র বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলই পারবে বাংলাদেশকে একটি স্বাধীণ-সার্বভৌম বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে।

মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, ১৯৮১ সালের ৩০ মে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, স্বাধীনতার ঘোষক, গণতন্ত্রের পুন:প্রতিষ্ঠাকারী, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে যারা হত্যা করেছে, যারা এই হত্যার ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত আমরা তথা দেশের জনগন সেই হত্যাকারী ও ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার চায়। আমরা তার রূহের মাগফেরাত কামনা করি। উনার রেখে যাওয়া আদর্শ ও ১৯ দফা কর্মসূচী, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মাধ্যমে আমরা জনগনের মাঝে প্রতিষ্ঠা করতে চাই এবং দেশ ও জনগনের কল্যাণে কাজ করতে চাই। একইসাথে শাহাদাত বার্ষিকীতে শপথ নিতে চাই, বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট এই আওয়ামী সরকারের পতনের জন্য কেন্দ্র থেকে যখন আমাদের ডাক দেয়া হবে, তখন আমরা এই পতন আন্দোলনকে রাজপথে থেকে ত্বরান্বিত করবো এবং পতন না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাবে না।

মহাগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আতাউর রহমান মুকুল বলেন, এদেশের মানুষ এখন আর আওয়ামীলীগকে ভয় পায় না। জনগণ জেগে উঠেছে। এলাকায় এলাকায় এখন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জোট হচ্ছে। সরকারের পতন ঘটাতে মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। তাই হুশিয়ার করে দিচ্ছি যদি ৩০ মে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে কেউ বাধা দিতে আসে তাহলে এর জবাব দেয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, জনগণের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার করার জন্য, জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য বিএনপির চলমান আন্দোলন সামনে আরও বেগবান হবে। বিএনপি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাজপথে আন্দোলন করছে। দাবি আদায় না করে আমরা ঘরে ফিরে যাব না।

উল্লেখ্য, ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সেনাবাহিনীর একদল সদস্যের অভ্যুত্থানে নিহত হন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। সেই থেকে এই দিনকে বিএনপি ‘শাহাদাত দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে।