একের পর এক সফল কর্মসূচী পালন করছে প্রধান বিরোধী দল, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দল বৃদ্ধি পাচ্ছে সরকারী দলে...

লাগাতার কর্মসূচীতে এগিয়ে বিএনপি, পিছিয়ে আ.লীগ

44
লাগাতার কর্মসূচীতে এগিয়ে বিএনপি, পিছিয়ে আ.লীগ

নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ:

কেন্দ্রের নির্দেশ অনুযায়ী সরকার পতনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচী এবং নাশকতা ও অরাজকতা প্রতিরোধে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশের পরে পুনরায় চাঙ্গা হয়ে উঠেছে না.গঞ্জের রাজনীতির মাঠ। কেন্দ্রীয় নির্দেশের কারণে উভয় দলের কর্মসূচীতে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীদের অংশগ্রহন করতে দেখা গেছে। তবে, দ্বন্দ্ব-কোন্দল কমে আসায় কিছুটা এগিয়ে আছে বিএনপি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহলের মতে, নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি আবারে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। আওয়ামীলীগ ও বিএনপির নেতা কর্মীরা এখন সরকার বিরোধী ও নাশকতা প্রতিরোধের আন্দোলন বেগবান করতে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছে। উভয় দলের শীর্ষ নেতারা তাদের কর্মীদের নিয়ে রাজনৈতিক ভাবে তৎপর হয়ে উঠেছে। দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ইতিমধ্যেই তাদের শরীক দলগুলোর নেতা কর্মীদের নিয়ে মাঠে নেমেছে ক্ষমতাসীণ দলের পতন ঘটাতে।

অপরদিকে, আওয়ামীলীগও তাদের শরীকদের নিয়ে রাজনৈতিক মাঠ গরম রাখতে তৎপর হয়ে উঠেছে। উভয়দলই নিজ নিজ নেতাকর্মীদের নিয়ে নানা কর্মসূচী পালন করছে। তবে সাধারন মানুষের প্রত্যাশা জনগনের কল্যানে রাজনীতি করতে গিয়ে জনগন যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেদিকটা বিবেচনায় রাখতে হবে সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ ও প্রধান বিরোধীদল বিএনপি’র নেতা কর্মীরা এখন নড়েচড়ে বসতে শুরু করেছে। উভয় দলের নেতা কর্মীরা পৃথক পৃথক ভাবে রাজনৈতিক কর্মকান্ড শুরু করেছে। বিএনপির নীতিনির্ধারনী ফোরামের ডাকা সকল আন্দোলনের কর্মসূচীতে স্বতস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহন করতে দেখা যাচ্ছে বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের। অপরদিকে বিরোধী দলের সরকার বিরোধী আন্দেলন কিভাবে প্রতিহত করবে সে বিষয় নিয়ে ইতিমধ্যেই ভাবতে শুরু করেছে আওয়ামীলীগ। বিএনপির বিভিন্ন প্রোগ্রামগুলোকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির কারণ হিসেবে উল্লেখ করে সরকারী দলের পক্ষ থেকে শান্তি সমাবেশের আয়োজন করে অরাজকতা প্রতিরোধে মাঠে রয়েছে আওয়ামীলীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

তবে, সরকার বিরোধী আন্দোলনে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো রাজপথে সুবিধা জনক অবস্থান করতে পারলেও বিরোধী দলের এই আন্দোলনকে প্রতিহত করতে ক্ষমতামীন দল আওয়ামীলীগ এখনো পর্যন্ত অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে বলে দাবি রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের। বিশেষ করে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনকে জেলা বিএনপির আহবায়ক করার পর জেলা বিএনপিতে যে ঐক্য গড়ে উঠেছে সে ঐক্য আগের তুলানায় এখন অনেক শক্তিশালী।

বিপরীতে, প্রতিপক্ষ মোকাবেলায় অনেকটাই পিছিয়ে আওয়ামীলীগ। দলের ভেতরে লুকিয়ে থাকা দীর্ঘ দিনের কোন্দল বিগত বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচন ও গত অক্টোবরে অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদ নির্বাচনে নতুন করে চাঙ্গা হতে দেখা গেছে। এছাড়া, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান ও সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর অনুসারীরা আলাদা আলাদা ভাবে দলীয় কর্মসূচীগুলো পালন করায় ঐক্য নিয়েও নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগে নানা প্রশ্ন উঠেছে। মহানগর আওয়ামীলীগেও একই অবস্থা বিরাজমান, আনোয়ার হোসেন ও খোকন সাহা দুই দিকে হাটছেন। সর্বশেষ দলীয় প্রধান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে ৪টি ভাগে ভাগ হয়ে আলাদা আলাদা কর্মসূচী পালন করেছে জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা। তাদের এ অনৈক্যের কারণে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির আন্দোলন কর্মসূর্চী প্রতিরোধ করতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগকে হিমসিম খেতে হবে বলে মনে করে প্রবীন রাজনীতিবীদরা।

তাদের মতে, সরকারী দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দলের কারণে সরকার বিরোধী আন্দোলনে বিএনপি বেশ শক্ত অবস্থানে থাকবে। তবে বিভক্ত নেতৃবৃন্দকে ঐক্যবদ্ধ করে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারলে বেশ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে বিএনপিকেও।

সূত্র মতে, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এরইমাঝে সরকার বিরোধী নানা আন্দোলন কর্মসূচী পালন করে আসছে। বিভিন্ন দাবিতে গত শুক্রবারের জনসমাবেশসহ বিগত সকল কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আন্দোলন কর্মসূচী নারায়ণগঞ্জে অত্যন্ত সফলভাবে পালন করেছে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা।

বর্ষিয়ান ও পরীক্ষিত রাজনীতিবীদ মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন এবং যুবসমাজের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় গোলাম ফারুক খোকনের কাধে জেলা বিএনপির দায়িত্ব তুলে দেয়ার ফলে নবীন-প্রবীনের যে চমৎকার সমন্বয় ঘটেছে তা প্রতিটি কর্মসূচীতেই প্রতীয়মান। তাদের নেতৃত্বে বিএনপির সকল আন্দোলন-কর্মসূচীই সফলভাবে পালন করতে পেরেছে দলটি। দলটিতে যে ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে তা অটুট থাকবে বলে দাবী করেছে একাধিক নেতা। তাদের দাবী সরকার পতন আন্দোলনে নামতে বিএনপি প্রস্তুত রয়েছে। কেবল মাত্র দলের নীতি নির্ধারনী মহলের নিদের্শের অপেক্ষায় রয়েছে তারা।

এদিকে, বিরোধী দলের সরকার পতন আন্দোলন প্রতিরোধে আওয়ামীলীগ কি ভুমিকা পালন করবে সে বিষয়ে এখনো পর্যন্ত সুস্পষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি দলের হাইকমান্ড থেকে। তবে, দলীয় প্রধান ও সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মাঠে থেকে বিরোধী দলের আন্দোলন কর্মসূচী পর্যবেক্ষণ করছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। তবে, বিএনপিকে প্রতিরোধে আওয়ামীলীগকে আরো শক্ত অবস্থানে থেকে কাজ করতে হবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগে যে হ-য-ব-র-ল অবস্থা হয়েছে এই অবস্থায় বিরোধী দলের আন্দোলন সংগ্রামকে প্রতিহত করতে ব্যর্থ হবে বলে মনে করছেন দলের অনেক নেতা কর্মী। তাদের মতে, বিভেদ মিটিয়ে নেতা কর্মীদের একত্রিত করে জেলা আওয়ামীলীগের নতুন কমিটি ঘোষনা দেয়া প্রয়োজন। অন্যথায় বিএনপির সরকার বিরোধী আন্দোলনকে কোন ভাবে প্রতিহত করা যাবেনা বলে মনে করছেন তারা।