২নং রেল গেইটের অবৈধ স্ট্যান্ডের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি...

যত্রতত্র যাত্রী উঠানো ও অবৈধ পার্কিংয়ে তীব্র যানজট

87
যত্রতত্র যাত্রী উঠানো ও অবৈধ পার্কিংয়ে তীব্র যানজট

নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ:

নগরীর সবচেয়ে ব্যস্ততম সড়ক তথা বঙ্গবন্ধু সড়কে তীব্র যানজট এখন নিত্যদিনের চিত্র হয়ে উঠেছে। রাস্তার পাশে অবৈধ গাড়ি পার্কিং ও যত্রতত্র পরিবহন (বাস-লেগুনা-অটোরিক্সা) থামিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানো করায় এ ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। অসহনীয় যানজটে নগরবাসী চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এ সমস্যা দিন দিন তীব্র থেকে তীব্রতর আকার ধারণ করছে।

নগরীর বঙ্গবন্ধু সড়কের ২নং রেল গেইট থেকে চাষাড়া পর্যন্ত যানজট প্রতিদিনের ঘটনা। যত্রতত্র বাসসহ বিভিন্ন যানবাহন পার্ক করে রাখায় এবং যাত্রী উঠা-নামা করায় তীব্র এ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে ৫ মিনিটের এই পথ পাড়ি দিতে সময় লাগে আধা ঘন্টারও বেশী। কখনো কখনো ঘণ্টায়ও পাড়ি দেয়া যায় না। অবৈধ পার্কিং ও যত্রতত্র গণপরিবহন থামানোয় প্রায়ই ঘটে ছোট-বড় দুর্ঘটনা, ফলে দুর্ঘটনার শঙ্কায় থাকেন নগরবাসী।

রাজধানী ঢাকার সবচেয়ে নিকটবর্তী এই জেলাটি গার্মেন্টস-শিল্প প্রতিষ্ঠান, মিল-কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্যের কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শহরও। ভোটার বিবেচনায় নগরীতে ৫ লাখ লোক থাকলেও বিভিন্ন জেলা থেকে আগত লোকজনের কারণে আরও অন্তত ১০ লাখ লোক বাস করে এই নগরীতে। স্বাভাবিকভাবে বঙ্গবন্ধু সড়কটি বিশাল এ জনগোষ্ঠির চলাচলের অন্যতম প্রধান সড়ক। ফলে তীব্র এ যানজটে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয় তাদের।

এক সময় নারায়ণগঞ্জ টার্মিনাল থেকে যাত্রী নিয়ে বের হয়ে ১নং রেল গেইট, ২নং রেল গেইট হয়ে চাষাড়া দিয়ে লিংকরোড হয়ে ঢাকায় যেতো এবং একইরুটে নারায়ণগঞ্জে ফিরে আসতো গণপরিবহনগুলো। কিন্তু এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয় বলে, পরবর্তীতে ঢাকার যাওয়ার জন্য এ রুট ব্যবহার হলেও ঢাকা থেকে আসার পথে চাষাড়া দিয়ে মেট্রো হল হয়ে কালিরবাজার দিয়ে টার্মিনালে যাওয়ার রুট নির্ধারণ করা হয় গণপরিবহনের জন্য। এতে করে প্রথম দিকে কিছুটা যানজট কমলেও বেশ কিছুদিন যাবৎ যানজট আবার তীব্র আকার ধারণ করেছে।

বর্তমান ভিন্ন রুটে যাতায়াত করলেও টার্মিনাল থেকে ঢাকায় যাওয়ার পথে মোড়ে মোড়ে অবৈধ পার্র্কি করে যাত্রী উঠানো, দীর্ঘ সময় বাস থামিয়ে রাখা ও রাস্তার মাঝখানেই গাড়ি থামিয়ে যাত্রী উঠানোর কারণে যানজটের এ তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন বন্ধন, উৎসব, বিআরটিসি, মৌমিতা, বাধনসহ বিভিন্ন কোম্পানির ৪ থেকে ৫শতাধিক গণপরিবহন ঢাকায় যাওয়া-আসা করে, তারা ট্রাফিক আইনের কোনো তোয়াক্কা করেনা, উল্টো অনিয়মই যেন নিয়ম হয়ে দাড়িয়েছে তাদের জন্য। এতে একদিকে নগরবাসীকে চলার পথে যানজটের সমস্যা পোহাতে হয়। অন্যদিকে ভয় থাকে ঘটনা-দুর্ঘটনার। তবে, এ ব্যাপারে অনেকটা উদাসীন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো।

স্থানীয়রা জানান, নগরীর বাস টার্মিনাল তথা ১নং রেল গেইট থেকে যাত্রী নিয়ে চাষাড়ায় আর্মি মার্কেটের সামনে নির্দিষ্ট কাউন্টারে বাস থামানোর কথা থাকলেও ২নং রেল গেইট এলাকায় বন্ধন, উৎসব ও বিআরটিসি পরিবহনগুলো অবৈধভাবে বাস থামিয়ে যাত্রী উঠায় ফলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এছাড়া মৌমিতা পরিবহন মেট্রোহল থেকে ছেড়ে আসলেও তাদের আর কোনো নির্দিষ্ট কাউন্টার না থাকায় তারা যেখানে যাত্রী পায় সেখানেই গাড়ি থামিয়ে যাত্রী উঠায়। বিশেষ করে চাষাড়া মোড়ে কতিপয় ট্রাফিক পুলিশকে গাড়ি প্রতি ২০ টাকা দিয়ে ১০/১৫ মিনিট দাড়িয়ে থাকে মৌমিতা পরিবহনগুলো। বাধন পরিবহনের নির্দিষ্ট কোনো কাউন্টার নেই, তারাও রাস্তায় দাড়িয়েই যাত্রী তোলে।

শুধু তায় নয়, গণপরিবহনগুলো অবাধে যাত্রী উঠানামা করে সড়কের ওপরে। দীর্ঘদিনের এমন পরিস্থিতির কারণে হরহামেশাই লেগে থাকে তীব্র যানজট। সৃষ্ট যানজটের কবলে অ্যাম্বুলেন্স, অন্যান্য রোগীবাহী পরিবহন, শিক্ষার্থী, সাধারণ পথচারী ও প্রাতিষ্ঠানিক কর্মরত ব্যক্তিরা আটকা পড়ে যায়। এতে নির্ধারিত সময় নষ্টসহ চরম ভোগান্তির শিকার হন তারা।

নগরীর দেওভোগ এলাকার বাবুল মিয়া বলেন, সন্তানকে নিয়মিত বেইলি স্কুলে নিয়ে যাই, যেটি নতুন কোর্টের সামনে অবস্থিত। তবে ২নং রেল গেইট থেকে চাষাড়া বাস কাউন্টার পর্যন্ত তীব্র যানজট ও বেপরোয়া যান চলাচলের কারণে ঠিক টাইমে বাচ্চাকে স্কুলে আনা-নেয়া করতে পারিনা। অটোরিক্সা-ইজিবাইক-লেগুনাসহ বিভিন্ন কোম্পানির বাস রাস্তায় থামিয়ে যাত্রী উঠা-নামাসহ বেপরোয়াভাবে চলাচল করে। তাই রিকশায় চলাচল করতে ভয় হয়। দুর্ঘটনার আশঙ্কা তাড়া করে।

পরে অতি: পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) রুহুল আমিন সাগরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পরিবহনগুলো যখন বিআরটিএ থেকে লাইসেন্স বা অনুমোদন নেয় তখন তারা তাদের পার্কিং, কাউন্টার সহ নানা বিষয়ে শর্ত মেনেই লাইসেন্স নেই। কিন্তু পরবর্তীতে তারা নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী উঠানামা সহ নানা অনিয়ম করে। আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে গেলেই পরিবহন শ্রমিকরা আন্দোলন করে। আসালে এসকল বিষয়ে বিআরটিএ, সিটি কর্পোরেশন ও ম্যাজিষ্ট্রেটদের পদক্ষেপ নিতে হবে। অভিযান পরিচালনা করতে হবে, তারা যদি আমাদের সাপোর্ট চায়, তাহলে আমরা ফোর্স দিয়ে তাদের সহায়তা করবো। পরিশেষে তিনি বলেন, আমি ট্রেনিংয়ে আছি, নাহলে পদক্ষেপ গ্রহন করতাম। ট্রেনিং শেষে নারায়ণগঞ্জ গিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।

এ বিষয়ে বিআরটিএ’র ভুমিকা কি তা জানতে যোগাযোগ করা হলে নারায়ণগঞ্জ বিআরটিএ’র সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শেখ সাইয়েদুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রায়ই অভিযান পরিচালনা করে থাকি। তারপরও আমাদের সহকারী পরিচালক মহোদয়ের মাধ্যমে জেলা প্রশাসক স্যারকে অবহিত করে এ বিষয়ে আমরা আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করবো।

এদিকে, কথা বলতে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সিইও শহীদুল ইসলামের মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।