মানুষ আরো শক্ত ভূমিকায় দেখতে চায় তাদের

169

নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ:

অবশেষে সরকারের স্বিদ্ধান্তে আবারও নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রশাসক হলেন আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেন। প্রশাসক হিসাবে তিনি নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ার পর এই জেলার সর্বত্র সাধারন মানুষের মাঝে ইতিবাঁচক প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। সাধারন মানুষ মনে করে, আনোয়ার হোসেন আর মেয়র আইভীর মতো নেতারা যতো দায়িত্ব পাবেন ততোই এই শহরে সন্ত্রাসীরা নিরুৎসাহিত হবে।

কেননা যুগ যুগ ধরে এ জেলায় একটি পরিবার যেভাবে সন্ত্রাসের আবাদ করে চলেছেন তাতে শহরের মানুষ তাদের কাছে অনেকটা জিম্মি হয়ে পড়েছিলো।

তাই আনোয়ার হোসেন আবার জেলা পরিষদের প্রশাসক হওয়ায় উচ্ছ্বসিত জেলার আপামর জনসাধারণ। তাদের মতে, আইভী-আনোয়ার মিলে এই শহরকে সন্ত্রাসমুক্ত করার লক্ষে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর পাশাপাশি,  আধুনিক নারায়ণগঞ্জ গড়তেও বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করবেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নারায়ণগঞ্জ শহরের রাজনীতিতে আওয়ামীলীগের দুই উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভী ও আনোয়ার হোসেন। দুইজনেই গণমানুষের পক্ষে রাজনীতি করেন এবং কোনো অপশক্তিকে প্রশ্রয় দেন না। তাদের কারো সাথেই কোনো সন্ত্রাসী বাহিনী নেই। তাই এ দুই নেতার মধ্যে ঐক্য দেখলে নারায়ণগঞ্জের শান্তিপ্রিয় সাধারন মানুষও খুশী হন।

সাধারণ মানুষের দাবি, তারা এক সাথে রাজনীতি করুক এবং রাজনীতিতে একে অপরকে সহায়তা করুক। এতেই গডফাদারদের রাজত্ব একসময় মাটিতে মিইয়ে যাবে।

সম্প্রতি, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের এক ইফতার মাহফিলে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের দায়িত্বে তিনি আনোয়ার হোসেনকেই দেখতে চান। হোক সেটা চেয়ারম্যান অথবা প্রশাসক হিসাবে। আইভীর এই বক্তব্য নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হয়। এতে নারায়ণগঞ্জ সচেতন মহলে ইতিবাঁচক প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে।

এদিকে, আনোয়ার হোসেনকেও বরারবরই মেয়র আইভীর পাশে শক্ত অবস্থান নিতে দেখা গেছে। ২০১১ সালের নির্বাচনে যখন আইভী ও শামীম ওসমানের মাঝে প্রতিদ্বন্দ্বীতা হয় তখন সেই নির্বাচনে এই আনোয়ার হোসেন ও তার অনুসারীরা মেয়র আইভীর পাশে বেশ শক্ত অবস্থান নিয়েছিলেন। তখন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বার বার আনোয়ার হোসেনকে দলের মনোনিত প্রার্থী শামীম ওসমানের পাশে থাকার জন্য বলা হলেও তারা আইভীর পাশেই অনড় ছিলেন।

এক পর্যায়ে আনোয়ার হোসেনকে দল থেকেও বহিস্কার করার ঘোষনা দেয়া হয়। কিন্তু তাতেও টলেননি আনোয়ার হোসেন। বরং তিনি সরাসরি বলে দেন, দল থেকে বহিস্কার করা হলেও আমি কোনো গডফাদারের পক্ষ্যে নির্বাচন করবো না এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে আইভীর কোনো বিকল্প নেই। ওই নির্বাচনে আনোয়ার হোসেন সহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের আরো অনেক নেতার শক্ত অবস্থানের কারনে আইভীও বেশ জোরালো ভাবেই শামীম ওসমানকে মোকাবেলা করেন।

ফলে শামীম ওসমান আইভীর কাছে লক্ষাধিক ভোটে পরাজিত হন। যদিও ওই নির্বাচনের পর আনোয়ার হোসেনকে মেয়র হওয়ার টোপ দিয়ে শামীম ওসমান কিছু দিনের জন্য তাকে বাগিয়ে নেন। কিন্তু আনোয়ার হোসেন কখনোই শামীম ওসমানের সাথে আন্তরিক ভাবে মিশতে পারেন নাই। কারন বরাবরই তারা পৃথক ভুবনের বাসিন্দা। ফলে অল্প দিনের মধ্যেই আনোয়ার হোসেন তার ভুল বুঝতে পেরে শামীম ওসমানের কাছ থেকে দূরে সরে আসেন।

ফলশ্রুতিতে আবারও আইভীর সাথে তার সম্পর্ক পূনরুজ্জীবিত হতে থাকে। বিগত পাঁচ বছর ধরে আইভীর বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে, তাতে আনোয়ার হোসেন সব সময় আইভীর পাশেই ছিলেন। এর মাঝে শামীম ওসমান যখন আইভীর ভাইদের বানানো বাড়ি নিয়ে মিথ্যাচার করেন এবং আইভীর বিরুদ্ধে ধর্মীয় উস্কানী দেয়ার চেষ্টা করেন, তখনো আনোয়ার হোসেন এসবের প্রতিবাদ করেন। বিশেষ করে আইভীর বাড়ি নিয়ে উত্তর মেরুর লোকজন যে মিথ্যাচার করেছেন তার কড়া জবাব দিয়েছিলেন আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেছিলেন, শামীম ওসমান সব সময়ই আইভীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেন কিন্তু এগুলো তিনি প্রমান করতে পারেন না। আইভীর বিরুদ্ধে শামীম ওসমান যতো অভিযোগ তুলছেন তার কোনো প্রমান নেই। বরং শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ তোলা যায়। মূলত এভাবেই আনোয়ার হোসেন আইভীর পক্ষ্যে দৃঢ় অবস্থান নেন।

তাই আইভী ও আনোয়ার একে অপরের পাশে এভাবে দাড়ানোটাই পছন্দ করছেন নারায়ণগঞ্জের সর্বস্তরের সাধারন মানুষ। কারন সাধারন মানুষ এই শহরে সন্ত্রাসমুক্ত পরিবেশে শান্তিতে বসবাস করতে চান। আর এ বিষয়ে আইভী ও আনোয়ার হোসেনের শক্ত ভূমিকা প্রত্যাশা করেন।