সভাপতি-সম্পাদকে বিভক্ত মহানগর আওয়ামীলীগ

194
নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগ

নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ:

কমিটির মেয়াদ তিন বছর তবে, দীর্ঘ ৯ বছর ধরে একই কমিটি দিয়ে চলছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের কার্যক্রম। বহুদিন যাবৎ নেতৃত্বের পরিবর্তন না হওয়া এবং উত্তর-দক্ষিণ বলয়ের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টার কারণে নেতায় নেতায় দ্বন্দ-বিবাদ, কলহ-কোন্দল লেগেই আছে এ কমিটিতে এমনটাই মনে করে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

জানা যায়, গত ২৬শে মার্চ মহান স্বাধীণতা দিবসে বীর শহীদদের স্মরণে পৃথকভাবে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করে মহানগর আওয়ামীলীগ। এক অংশের নেতৃত্বে ছিলেন সভাপতি আনোয়ার হোসেন। অপর অংশের নেতৃত্ব দেন সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহা। সভাপতি-সম্পাদকের এ দ্বন্দ্বের কারণে নেতাকর্মীরাও দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ছেন, ফলে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে কোনো কর্মসূচীতে অংশ নিতে পারছেন না বলেও জানা যায়।

দলীয় সূত্র বলছে, ২০১৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আনোয়ারকে সভাপতি ও খোকন সাহাকে সম্পাদক করে আংশিক কমিটি এবং ২০১৫ সালের ২৬ নভেম্বর ৭১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়।

সূত্র আরও বলছে, আনোয়ার হোসেন একেএম সামসুজ্জোহার রাজনৈতিক শীষ্য এবং শামীম ওসমান-সেলিম ওসমানের রাজনৈতিক গুরু হলেও সাম্প্রতিক সময়ে ওসমান পরিবারের সাথে তার খুব একটা সু-সম্পর্ক নেই বললেই চলে। তবে, সিটি মেয়র আইভীর সাথে মাঝে কিছু দুরত্ব থাকলেও বর্তমানে তারা একসাথে রাজনীতি করছেন বলে দাবী সূত্রটির।

অপরদিকে, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের একজন হচ্ছেন মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহা। এক কথায় বলা চলে, শামীম ওসমানের বর্তমান সিপাহ সালার অন্যতম সেনাপতি তিনি।

স্বাধীণতা দিবসে পৃথক কর্মসূচী পালনের বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বর্তমান কমিটির কয়েকজন নেতাকর্মী বলেন, কমিটি গঠনের পর থেকেই তাদের মাঝে দ্বন্দ্ব পরিলক্ষিত হয় যা সম্প্রতি প্রকাশ্য রূপ ধারণ করেছে। এ দ্বন্দ্বের কারণে গেল কিছুদিন ধরে খোকন সাহাসহ কয়েকজন নেতা দলীয় কর্মসূচীতে অংশ করা থেকে বিরত থাকছেন। ক্ষোভের সুরে এ নেতাকর্মীরা বলেন, সভাপতি-সম্পাদকের মাঝে দ্বন্দ্বের কারণে বর্তমানে জাতীয় দিবসগুলোতেও ঐক্যবদ্ধভাবে কোনো কর্মসূচী পালন করতে পারছি না আমরা।

জানা যায়, স্বাধীণতা দিবসের কর্মসূচীতে আনোয়ার হোসেনের সাথে ছিলেন সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ হায়দার আলী পুতুল, যুগ্ম সম্পাদক আহসান হাবিব, স্বাস্থ্য সম্পাদক ডা. সোহেল, ধর্ম সম্পাদক আব্দুর রশিদ, কার্যকরী সদস্য মনিরুজ্জামান, সাখাওয়াত সুমন, রমজান, আমির হোসেন প্রমুখ। এছাড়াও সাংগঠনিক সম্পাদক জি এম আরাফাত, প্রচার সম্পাদক খালিদ হাসান, কোষাধ্যক্ষ কামাল দেওয়ান, সদস্য সানোয়ার হোসেন, আবেদ হোসেন সহ অনেকেই আনোয়ার হোসেনের সাথেই সবসময় দেখা যায়।

পক্ষান্তরে, সেদিন এড. খোকন সাহার সাথে ছিলেন সহ-সভাপতি এড. হান্নান আহমেদ দুলাল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জি এম আরমান, সাংগঠনিক সম্পাদক এড. মাহমুদা বেগম মালা, দপ্তর বিষয়ক সম্পাদক এড. বিদ্যুৎ কুমার সাহা, কার্যকরী সদস্য জি এম পারভেজ প্রমুখ। তাছাড়া, যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম ও সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, কার্যকরী সদস্য মজিবুর রহমান ও হাজী ইয়াসিনসহ আরও অনেকেই খোকন সাহার সাথে আছেন বলে জানা যায়।

এদিকে, দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ ধারণ করছে কিনা জানতে চাইলে আনোয়ার হোসেন বলেন, তাই তো প্রকাশ পাচ্ছে। সে তো এর পূর্বেও এমন করেছে, একবার আসে আবার চলে যায়, আবার আসে, আবার চলে যায়। ৭ই মার্চের প্রোগ্রাম আমরা একসাথে করেছি, ১৭ই মার্চ ও ২৬শে মার্চে সে (খোকন সাহা) আসে নাই। সে তো এভাবেই চলছে। মহানগর আওয়ামীলীগ কি তাহলে দুই ভাগে বিভক্ত এমন প্রশ্নের উত্তরেও তিনি বলেন, তাই তো মনে হচ্ছে।

পৃথকভাবে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানোর বিষয়ে জানতে চাইলে এড. খোকন সাহা বলেন, হ্যা আমি আলাদাভাবে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছি। যে কেউ বা একজন সদস্য চাইলেও পৃথকভাবে কর্মসূচী পালন করতে পারে। আপনাদের মাঝে দ্বন্দ্ব রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, দ্বন্দ্ব কিনা জানিনা। প্রত্যেকে প্রত্যেকের ইচ্ছা মতো শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারে।