মন্ডলপাড়ায় নাসির হত্যা: ৭ দিন পরও নেই তেমন অগ্রগতি

63
আসামী গ্রেফতারে ধীরগতি পুলিশের দাবি স্বজনদের

নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ:

নগরীর মন্ডলপাড়ায় একসঙ্গে খাবার খাওয়ার পর হোটেলের সামনে প্রকাশ্যে নাসির নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বত্তরা। পরদিন নিহতের ভাই ৯ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৪/৫জনকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করে। হত্যাকান্ড সংঘঠিত হওয়ার পর একজন আসামী গ্রেফতার করা ছাড়া বাকী আসামীদের গ্রেফতারে ধীরগতির অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। তবে, পুলিশ বলছে আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

নিহতের স্বজনদের দাবি, নাসিরকে খুন করার পরদিন কাশিপুরে আওয়ামীলীগের একজন নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকান্ডের ৫ দিনের মধ্যেই হত্যার মূল পরিকল্পনাকারীসহ ১৩ আসামীকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কিন্তু আমাদের নাসিরকে খুন করার পর ৭ দিন অতিবাহিত হতে চললেও এক আসামীকে গ্রেফতার করা ছাড়া, এজাহারনামীয় কোনো আসামীকে গ্রেফতার করতে পারে নি পুলিশ।

স্বজনরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কাশিপুরে নিহত ব্যক্তি আওয়ামীলীগ দলীয় লোক ও প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ায় পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আসামীদের ধরতে ব্যাপক তৎপরতা দেখাচ্ছে। পক্ষান্তরে, নাসিরের পরিবার নিতান্তই গরীব ও দুর্বল হওয়ায় পুলিশের তৎপরতায় কিছুটা ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। এই সুযোগে হত্যাকান্ডে জড়িতদের অনেকেই গা-ঢাকা দেয়ার সময় পাচ্ছে, যা আসামীদের গ্রেফতারে আরও বেশী প্রতিবন্ধক হবে বলে মনে করেন তারা।

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহাদাৎ হোসেন জানান, এখনও পর্যন্ত একজন আসামীকে আমরা গ্রেফতার করতে পেরেছি। বাকী আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

এদিকে, শহরের ক্রাইমজোন হিসেবে পরিচিত জিমখানা মন্ডলপাড়া এলাকায় মাদক কারবার ও ছিনতাইয়ের ভাগ বাটোয়ারা জনিত কারণেই নাসির নামের এ যুবক খুন হয়েছে বলে দাবী স্থানীয়দের। তারা বলছে, জিমখানার ডোমের ছেলে, ছিচকে সন্ত্রাসী থেকে দিন দিন ভয়ংকর হয়ে উঠা ইমন চান ম্যাংগো ও আলম গংরা এই হত্যাকান্ডে জড়িত থাকতে পারে। যদিও এখনও পর্যন্ত এদের কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। ফলে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে নিহতের পরিবারের।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নগরীর অন্যতম অপরাধ জগতের একটি স্থান হচ্ছে মন্ডলপাড়া জিমখানা বস্তি এলাকা। এখানে চুরি-ছিনতাই, মাদক বিক্রিসহ এমন কোন অপরাধ নেই যা হচ্ছেনা। আর এ সকল অপরাধের মূলহোতা হচ্ছে ইমন চান ওরফে ম্যাংগো। এক সময়ে হরিজন সম্প্রদায়ে থাকা ম্যাংগো মুসলমান হয়ে যান পরিবারের সকল সদস্যদেরকে রেখে। ম্যাংগোর বাবা ৪নং ডিআইটির চোলাই মদ বিক্রেতা সহিদ ডোম। তার বড় ভাই বিশ্ব ডোম। আর বর্তমানে ৪নং ডিআইটি বিএনপি ক্লাব সংলগ্ন এলাকায় চোলাই মদ ও ইয়াবা বিক্রি করছে সহিদ ডোমের ছোটভাই নয়ন ডোম।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানায়, এখানে ৪নং ডিআইটি এলাকাতে ম্যাংগোর পিতা ও চাচাদের নিয়ন্ত্রনে চোলাই মদসহ ইয়াবার মত মরন নেশাও বিক্রি করছেন। পাশাপাশি শেখ রাসেল পার্কের আশপাশ এলাকাতে নতুনভাবে গড়ে তুলেছে মাদক বিক্রি বিশাল সিন্ডিকেট। আর এ সিন্ডিকেটের দ্বায়িত্বে রয়েছেন ম্যাংগো ও আলমসহ তার সঙ্গীয়রা। জিমখানা, মন্ডলপাড়া ও ডিআইটি এলাকাতে মাদক বিক্রি, চুরি ও ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপকর্ম করতে কয়েকটি গ্রুপ তৈরী করেছে ম্যাংগো।

এ গ্রুপের কোন সদস্য যদি বিভিন্ন পন্থায় উপার্জিত অর্থ নিয়ে কোন টালমাটাল করে তাহলে সুকৌশলে নাসিরের মতই সকলকে প্রান হারাতে হয়। তারা আরও জানান,একটি অপরাধ সংগঠিত করে নিজেদেরকে সাধু সাজাতে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের ভীতি প্রদান করে কৌশলে তার (ম্যাংগো) পক্ষালম্বন করে সাফাই গাইতে বাধ্য করে।

তারা আরও জানান, জিমখানা ও মন্ডলপাড়া এলাকায় চোলাই মদ বিক্রি করে ঢাকা কেরানীগঞ্জ এলাকার কাউটাইল জাউলাপাড়া মাউরা বাড়িতে কয়েক কোটি টাকা সম্পত্তি করেছেন ম্যাংগো পিতা সহিদ ডোম ও তার ভাইয়েরা।

গত মঙ্গলবার (২৫ জুন) শহরের মন্ডলপাড়াস্থ মা রেস্টুরেন্টে খাবার খেতে বসা নাসিরকে কুপিয়ে নিহতের পর নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালের মর্গের সামনে কান্নারত অবস্থায় বড় ভাই আল আমিন জানায়, নাসিরকে ম্যাংগো, আলমসহ কয়েকজন ফোন করে ডেকে আনে। আলমসহ অন্যান্য কয়েকজন এর আগে থ্রেট দিছিলো ‘তোরে মাইরা ফালামু’ কইয়া।