এটা শুধুই তার স্ট্যান্ডবাজি দাবি তৃণমূলের...

মনের মতো কমিটি নাহলে আলাদা প্লাটফর্ম করার ঘোষণা শামীম ওসমানের

77
মনের মতো কমিটি নাহলে আলাদা প্লাটফর্ম করার ঘোষণা শামীম ওসমানের

নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ:

গডফাদার, বোরখা শামীম, কাগুজে বাঘসহ বিরোধী পক্ষের কাছ থেকে নানা উপাধি পেলেও মূলত নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে বরাবরই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন শামীম ওসমান। তার উদ্ভট কথাবার্তা, হুমকি-ধামকি ও কর্মকান্ডের কারণে মাঝে মাঝে জাতীয় নেতৃবৃন্দরাও তাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনায় মেতে উঠেন।

গত শুক্রবার রাইফেল ক্লাবে জেলা-মহানগর আওয়ামীলীগের সম্মেলন উপলক্ষ্যে আয়োজিত প্রস্তুতি সভায় শেখ হাসিনা কর্মী বাহিনী নামে আলাদা প্ল্যাটফর্ম করার ঘোষণা দিয়ে আবারও আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে শামীম ওসমান। মনের মতো কমিটি না হলে, যোগ্যদের মূল্যায়ন না করা হলে এ প্ল্যাটফর্ম করবেন বলে জানান তিনি। এদিন রশিকতার ছলে মূলত কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে এক ধরনের হুশিয়ারীই দিলেন শামীম ওসমান এমনটাই দাবি তৃণমূলের নেতাকর্মীদের।

শুক্রবারের আলোচনায় শামীম ওসমান বলেন, কেন্দ্রীয় নেতারা আসার পর আপনাদের সামনেই তাদের কাছে দাবি করবো। ভালো ভালো লোক নিতে হবে এবং ত্যাগীদের মূল্যায়ন করতে হবে। নারায়ণগঞ্জকে যদি শক্তিশালী করতে হয় তাহলে যোগ্য লোকদের মূল্যায়ন করতে হবে, দ্বন্দ্ব বন্ধ করতে হবে এবং দোকানও বন্ধ করতে হবে, দোকান।

তিনি বলেন, আর আমরা যদি দেখি আমাদের মন মতো সবকিছু না হয়ে, ভালো ভালো লোক মূল্যায়ন না হইছে তাহলে আমরা একটা কাজ করমু। ‘শেখ হাসিনার কর্মী বাহিনী’ নামে আমরা একটা আলাদা প্ল্যাটফর্ম করবো। আমরা কারা, শেখ হাসিনার কর্মী, শেখ হাসিনার সন্তান। আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সন্তান, শেখ হাসিনার আদর্শের সৈনিক। আমাদের কোনো পদ নাই-পদবী নাই, আমরা সবাই সমান। আয় কে খেলবি খেল, দেখি পারস নাকি?

শামীম ওসমানের এমন ঘোষণায় উপস্থিত নেতাকর্মীরা সায় দিলেও ওসমান বলয়ের বাইরে তথা তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। তার এ বক্তব্যকে এক ধরনের স্ট্যান্ডবাজি বলে উল্লেখ করেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতে, শামীম ওসমান সবসময়ই উচ্চস্বরে কথা বলে তথা ফাকা বুলি আওড়িয়ে সামনের ব্যক্তিকে বিব্রত করার চেষ্টা করে। যদিও আগের সেই দিন এখন আর নেই। শামীম ওসমানের হাক-ডাককে এখন আর কেউ ভয় পায় না। তারপরও সম্মেলনের ২দিন আগে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দদের উদ্দেশ্য করে এ ধরনের বক্তব্য অত্যন্ত অশোভনীয় বলে মনে করেন তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, সম্মেলন হচ্ছে তৃণমূলের সেন্টিমেন্ট। তৃণমূলের সেন্টিমেন্ট বুঝে কেন্দ্র তথা নেত্রীর নির্দেশে সভাপতি-সম্পাদক নির্বাচন করা হবে। যেহেতু অনেকদিন ধরে সম্মেলন নেই, তাই অনেকেই সভাপতি-সম্পাদক প্রার্থী। তবে পদ তো দুটি, তাই দুজনকেই সভাপতি-সম্পাদক করা হবে। এক্ষেত্রে নিজ¦ নিজ¦ সমর্থিত প্রার্থী পদ পেতে পারে নাও পেতে পারে। যদি দলকে ভালোবাসি তাহলে দল যে সিদ্ধান্ত নিবে তা আমাকে মেনে নিতেই হবে। দলের বাইরে যাওয়ার কোনো উপায় নেই।

তিনি আরও বলেন, শামীম ওসমান নিজেকে অনেক বড় নেতা মনে করে। তার বিষয়ে আমি শুধু এটুকুই বলবো, এ ধরনের বক্তব্য স্ট্যান্ডবাজি ছাড়া আর কিছুই নয়। তারপরও যদি সে চায় আলাদা প্ল্যাটফর্ম করতে, করুক। আলাদা প্ল্যাটফর্ম করলে রাজনীতি থেকে হারিয়ে যাবে শামীম ওসমান। কেননা অনেক বড় বড় নেতারাও দল ছেড়ে নি:স্ব হয়ে পড়েছে, একা হয়ে পড়েছে। তাই আমি মনে করি, শামীম ওসমানের আরও সংযত হওয়া উচিত। আর কেন্দ্রের উচিত, শামীম ওসমানের কাছে এ বক্তব্যের ব্যাখ্যা চাওয়া।

শামীম ওসমানের এমন বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তার এক সময়ের বন্ধু এড. আনিসুর রহমান দিপু বলেন, সম্মেলন হলো একটা প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতার এই সময়ে অনেকেই অনেক কিছু বলে। এটা স্বাভাবিক। তবে এমন কোনো কথা বলা উচিত না যেটা নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে। তিনি আরও বলেন, শামীম ওসমান কেন একথা বলেছে তা সেই ভালো বলতে পারবে।