ভোটের অধিকার ফিরাতে এক দফা আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই

133
জনগনের ভোটের অধিকার ফিরাতে এক দফা আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই

মন্তব্য প্রতিবেদন ——– 

আবুল কাশেম :

আগামী সপ্তাহের শুরুতে ৩০ এপ্রিল রোববার থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে এইচএসসি পরীক্ষা হওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপির হাতে সময় খুবই কম। আন্দোলনের ইস্যু একটাই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা। জনগণের রাষ্ট্র জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেয়া। জনগণের ওপর কর্তৃত্ব করার অধিকার কারো নেই। জনগণই শাসকের ওপর কর্তৃত্ব করার কথা। শাসক শ্রেণীকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করার বাধ্যবাধকতা ফিরিয়ে আনতে হবে। জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে সদা প্রস্তুত যে সরকার, সেই সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার আনতে আন্দোলন করে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কালীন নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা প্রথম কাজ। এটাই এক দফা, এক দাবি।

নির্বাচন কালীন নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিএনপির অবদান। বিএনপি উদার জন-গণতান্ত্রিক দল। তাই জনগণের দাবির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে সংবিধানে নির্বাচন কালীন নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা করে, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপির রেখে যাওয়া ওই তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত পাকাপোক্ত করার খায়েশে নির্বাচন কালীন নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে। ফলে জনগণের ভোট ছাড়াই তাঁরা একটানা আরো দুই মেয়াদ সহ মোট তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে যায়।

এমতাবস্থায় গণতন্ত্র হোঁচট খেয়ে পড়ে। ভোট ব্যবস্থা লন্ডভন্ড হয়ে পড়ে। জনগণের রাষ্ট্রের মালিকানা একটি দলের কুক্ষিগত হয়ে যায়। ইতিহাসের নির্মম পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে পড়ে বিএনপি জোট। হিটলার, মুসোলিনি কায়দায় বিরোধী মত দমনের নজিরবিহীন অধ্যায়ের অবতারণা করা হয়। বিএনপি নেতারা আন্দোলন জমাতে পারেননি দীর্ঘ সময় চেষ্টা করেও। কারণ হামলা ও মামলার এমন যুগপৎ বিভৎসতা সবাইকে নিদারুণভাবে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। এমন পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে সারা দেহের রক্ত চুষে মুখের মধ্যে এনে মুখের রঙ উজ্জ্বল করে উন্নয়নের ডামাডোল পিটিয়ে ভেতরে ভেতরে সারাদেশের রক্ত চুষে দেশের অর্থনীতি ফোকলা করে দেয়া হয়েছে এবং লক্ষ লক্ষ হাজার কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। একটা দেশে গনতন্ত্র ও জনগণের কাছে জবাবদিহি করার বাধ্যবদকতা না থাকলে এমনটাই হওয়ার কথা।

দেশের এমন এক নাজুক অবস্থায় বিএনপিকে আন্দোলন করে রাষ্ট্র মেরামতের দায়িত্ব নিতে হবে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার সময়সূচি হিসেবে রেখে কর্মসূচি দিতে হবে। আবারো বলছি বিএনপির হাতে সময় খুবই কম। ‘কোন ঈদের পরে আন্দোলন’ এমন বিদ্রূপবাণে জর্জরিত হতে না চাইলে দু-এক দিনের মধ্যেই কর্মসূচি ঘোষণা করতে হবে। ব্যঙ্গোক্তি বিএনপির নিয়তি একথা মিথ্যা প্রমানিত হয়েছে বিভাগীয় মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে। তবে মনে হয়, আন্দোলন জমেছে লন্ডনের চুম্বকীয় শক্তিতে। দলের সিনিয়র নেতাদের প্রতি বিনয়ী শ্রদ্ধাবোধ এবং জুনিয়রদের প্রতি মমত্ববোধ বজায় রেখে আন্দোলনের দিকনির্দেশনা সত্যিই তাঁর রাজনৈতিক পরিপক্বতার উদাহরণ।

সিটি নির্বাচন আসন্ন, শোনা যাচ্ছে বিএনপির কেউ কেউ সিটি নির্বাচনে অংশ গ্রহণের পক্ষে মত দিয়েছেন। আন্দোলনের সাফল্য এখন সময়ের ব্যপার মাত্র। এমন সময়ে সরকারের অধীনে নির্বাচন যাওয়ার অর্থ আত্মহনন। আন্দোলন সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে এসে মারা পড়বে। সুতরাং, একদফা এক দাবি- নির্বাচন কালীন নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে জনগণের রাষ্ট্র জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার কর্মসূচির বাইরে অন্য কিছু মাথায় ঢোকানো যাবেনা। মরিয়া হয়ে নামতে হবে। পাতানো নির্বাচনের চেয়ে আন্দোলন এবং গুমখুন ও হামলা-মামলার শিকার হয়ে তিলে তিলে নিষ্পিষ্ট হওয়ার চেয়ে আন্দোলনে বীরের মতো জীবন উৎসর্গ করা শ্রেয়।