আ.লীগ-বিএনপির কোনো কমিটিতেই নেই...

বিএনপির অনুষ্ঠানে নৌকার চেয়ারম্যান

140
বিএনপির অনুষ্ঠানে নৌকার চেয়ারম্যান

নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ:

নৌকা প্রতিক নিয়ে জয়ী হওয়া কুতুবুপরের চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টুর একটি নির্বাচনী কৌশল ছিলো বলেই রাজনৈতিক নেতাদের অনেকেই দাবি করেছিলো। এবার তারই প্রমাণ মিলেছে কুতুবপুরে বিএনপির এক ঈদ পূনর্মিলনী অনুষ্ঠানে।

এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন ফতুল্লা থানা বিএনপির সদস্য সচিব শহীদুল ইসলাম টিটু। যেখানে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, শ্রমিক দল সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মাঝে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি লুৎফর রহমান খোকা এবং হাজী মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহও উপস্থিত ছিলেন।

ফলে পরিস্কার বুঝা যায় মনিরুল আলম সেন্টু আওয়ামী লীগের নৌকা নিয়ে এবার জয়ী হলেও তার মনে ঠিকই রয়েছে বিএনপিতে। নৌকা প্রতীকে জয়ী হয়ে বিএনপির ঈদ পূনমির্লনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি করেছেন তিনি নিজেই। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা রকম প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে উভয় দলের নেতাকর্মীরা।

তবে, সেন্টুর পক্ষে সাফাই দিয়ে বিএনপি নেতা হাজী মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহ ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে লিখেছেন, চেয়ারম্যান সাহেব ইউনিয়ন পরিষদের একটি কাজের উদ্বোধন করতে যাচ্ছিলেন। পথে তাদের সঙ্গে দেখা। তখন তারা চেয়ারম্যান সাহেবকে অনুরোধ করেন তাদের সঙ্গে খেতে। ফলে চেয়ারম্যান সাহেব রাজী হয়ে যান এবং তাদের সঙ্গে খাওয়া দাওয়া করেন।

শহীদ উল্লাহর এমন বক্তব্যের পরেও আরো অনেকেই চেয়ারম্যান সেন্টুর সমালোচনা করেন। তাদের বক্তব্য হলো সেন্টু এটা মোটেও ঠিক করেননি। তিনি এক সাথে আওয়ামী লীগ বিএনপি দুই দল করবেন এটা হতে পারে না। তবে বেশ কয়েকজন লিখেছেন, সেন্টু যখন এলাকার চেয়ারম্যান তখন তিনি সকলের চেয়ারম্যান। তাই বিএনপির অনুষ্ঠানে গিয়ে তিনি ঠিকই করেছেন। তাকে দাওয়াত করা হলে তার সব দলের অনুষ্ঠানেই যাওয়া উচিৎ।

কিন্তু এর জবাবে অন্যরা বলেন এটা ঠিক নয়। কারন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আর প্রেসিডেন্টও সকলের প্রধানমন্ত্রী আর প্রেসিডেন্ট। কিন্তু তারা যদি বিএনপির নেতাকর্মীদের তাদের অনুষ্ঠানে দাওয়াত করেন তাহলে তারা যাবেন কিনা? মূলত এভাবেই এখন মনিরুল আলম সেন্টুর বিএনপির অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া নিয়ে নানা সমালোচনার সৃষ্টি করেছেন।

তবে বাস্তবতা হলো এবারের কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনিরুল আলম সেন্টু আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতিক নিয়ে জয়ী হন। তাই তিনি এখন আওয়ামী লীগেরই। কিন্তু তিনি এখনো আওয়ামী লীগের কোনো পদ পাননি। ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন হয়েছে আরো অনেক আগে। সেই কমিটিতে নেই মনিরুল আলম সেন্টুর নাম। আর কুতুবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটি এখনো গঠনই হয়নি।

পক্ষান্তরে এক সময় তিনি ফতুল্লা থানা বিএনপি এবং যুবদলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন। কিন্তু আরো আগেই এক শিল্পপতির প্রচেষ্টার ফলে তাকে বিএনপি থেকে বাদ দিয়ে দেয়া হয়। এখন সেন্টু এবং শিল্পপতি দুইজনের একজনও বিএনপিতে নেই। ফলে সাংগঠনিক ভাবে মনিরুল আলম সেন্টু এখন বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ কোনো দলেই নেই।

এদিকে ফতুল্লার জনগনের মাঝে তাকে নিয়ে আরো একটি বড় প্রশ্ন রয়েছে। আর সেটা হলো তিনি যদি আওয়ামী লীগে কোনো পদ পান তাহলে কোন পদ পাবেন? কারন আওয়ামী লীগ যদি তাকে ইউনিয়ন পর্যায়ের কোনো কমিটিতে স্থান দেয় তাহলে তার মর্যাদাহানী হবে। কারন তিনি এক সময় বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন এবং তিনি ওই দলের দাপুটে নেতা ছিলেন। তিনি একাধারে থানা বিএনপির সাধারন সম্পাদক এবং থানা যুবদলের সভাপতি পদে ছিলেন। যদিও শেষ পর্যন্ত তিনি শিল্পপতির টাকার কাছে হেরে যান।

কিন্তু নৌকা নিয়ে নির্বাচন করেও তিনি সুখে নেই। যতোদূর জানা যায়, কুতুবপুরের আওয়ামী লীগ নেতারা তাকে মেনে নিতে পারছেন না। আবার বিএনপির সাথে মিশলেও তাকে কথা শুনতে হচ্ছে। তাই এক সময়কার জনপ্রিয় এই বিএনপি নেতার আগামী দিনগুলি যে খুব একটা সুখকর হবে না সেটা সহজেই অনুমেয়।

কেননা নৌকা প্রতিক নিয়ে নির্বাচন করলেও বিএনপির একটি বড় অংশের নেতাকর্মীদের মাঝে তার গ্রহনযোগ্যতা রয়েছে। বিপরিতে তার আজকের এই অবস্থানের কারনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও তাকে খুব একটা ভালো চোখে দেখবে না।