ফতুল্লার ইসদাইর টাগারপারে বেপরোয়া মাদক কারবারী ছিনতাইকারীরা

168

নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ:

নারায়ণগগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা থানাধীন টাগারপাড়, ইসদাইর ও রেললাইন এলাকা এখন ছিনতাইকারী ও মাদক বিক্রেতাদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। এসব এলাকায় ব্যাপকহারে বেড়েছে চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও মাদক কেনাবেচা। তবে, এ ব্যাপারে ফতুল্লা থানায় নেই তেমন কোনো অভিযোগ।

স্থানীয় বাসিন্দা ও গার্মেন্টস শ্রমিকরা জানান, এসব এলাকায় বেশ কয়েকটি গার্মেন্টস ও শিল্প প্রতিষ্ঠান থাকায় এখানে অন্যান্য জেলার বাসিন্দাদের বসবাস বেশী হওয়ায় এখানে প্রায়ই বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড ঘটে। বিশেষ করে গার্মেন্টস শ্রমিকরা যখন প্রতিমাসে ১ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে বেতন পান তখন ছিনতাইকারীদের উৎপাত বেড়ে যায় অধিক হারে। অনেক শ্রমিক ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে মাস শেষে বেতনের টাকা বাড়ি নিয়ে যেতে পারেন না। ছিনিয়ে নেওয়া হয় মোবাইল, ঘড়ি ইত্যাদি।

এসব এলাকার বেশকিছু ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, বেশিরভাগ ঘটনাই ঘটছে চিহ্নিত অপরাধী, মাদক বিক্রেতা ও ছিনতাইকারী রিয়াজ উদ্দিন বাবু ওরফে কিলার বাবু, রকি ওরফে পেটকাটা রকি, বিপ্লব, মাওলা ও শাহাদাতের নেতৃত্বে। এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে এবং একাধিকবার গ্রেফতার হয়েছে। তবে, জামিনে বের হয়েই পুনরায় আবার ছিনতাই ও মাদক বিক্রি শুরু করে তারা।

ফতুল্লা থানা থেকে কিছুটা ভিতরের দিকে হওয়ায় এসব এলাকায় দিনে-দুপুরে চুরির ঘটনা ঘটছে অহরহ। গার্মেন্টস শ্রমিকদের অনেকেই বলেন, বাবু, রকি, বিপ্লব, মাওলা ও শাহাদাৎসহ তাদের সাঙ্গপাঙ্গদের কবলে পড়ে প্রতিদিনই কোনো না কোনো শ্রমিক তার মোবাইল-টাকা সহ মূল্যবান জিনিসপত্র হারায়। এরা অস্ত্রের মুখে জোর করে সব ছিনিয়ে নেয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছু এক গার্মেন্টস শ্রমিক জানান, গত মাসে বেতন নিয়ে কারখানা থেকে বাসায় ফেরার পথে অল্প বয়সের কয়েকজন ছেলে চাকু হাতে তার গতিরোধ করে। পরে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে তার কাছে থাকা নগদ ৬০০০ টাকা ও একটি মোবাইল ছিনিয়ে নেয়।

এছাড়া এসব এলাকায় বসবাসকারী শ্রমিকদের বাড়িতেও নিয়মিত চুরি-ডাকাতির ঘটনা ঘটছে বলে জানা গেছে। আরেক গার্মেন্টস শ্রমিক মশিউর জানান, তিন মাস আগে একদিন সকালে কারখানায় চলে যান। পরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে খবর পান তার ভাড়া বাসায় চুরি হয়েছে। পরে বাসায় গিয়ে তিনি দেখেন তার কক্ষের তালা ভেঙে একটি চার্জার ফ্যান ও নগদ ৮শ টাকা চুরি হয়ে গেছে।
হৃদয় নামে এক গার্মেন্টস শ্রমিক জানান, কিছুদিন আগে তার বাসায়ও চুরি হয়। এ সময় তার তার ঘরের তালা ভেঙে একটি মোবাইল ও নগদ ৫শ টাকা চুরির ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে থানায় কোনো অভিযোগ দেননি তিনি।

এদিকে, পুলিশ বলছে, উল্লেখিত এলাকাগুলো সহ সমগ্র ফতুল্লা থানা এলাকায় আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। অভিযানে নিয়মিই ছিনতাইকারীদের আটক করা হয় এবং কিন্তু জামিনে বেরিয়ে তারা পুনরায় এসব অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। তারপরও জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা স্যারের নেতৃত্বে মাদক ও ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে আমরা জিরো ট্রলারেন্সে নীতিতে কাজ করছি। কোনো অপরাধীদের ছাড় দেয়া হবে না।

উল্লেখ্য যে, এদের মধ্যে কিলার বাবু একটি বাহিনী গড়ে তুলে লালপুর, পৌষাপুকুরপাড় এলাকায় মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজী, ছিনতাই সহ নানা অপরাধের জন্ম দিয়ে স্থানীয়বাসীর জীবন-যাত্রাকে করে তুলেছে অসহনীয় যন্ত্রণাময়। শীর্ষস্থানীয় এই চাঁদাবাজ এক নারী কে হত্যার করার পর কিলার বাবু নামে পরিচিতি পায়। কিলার বাবু নামে পরিচিতি লাভের পর সে ঢাকা-নারায়নগঞ্জ পুরতন সড়কের পঞ্চবটী বন বিভাগ থেকে লোহার মার্কেট পর্যন্ত প্রতিনিয়ত ছিনতাইয়ের জন্য গড়ে তুলেছিলো বিশাল এক বাহিনী যা সে সময় নাউড়া বা ন্যাড়া বাহিনী নামে পরচিতি লাভ করেছিলো। ভাগ- বাটোয়ারাকে কেন্দ্র করে এই বাহনীর সদস্যদের হাতে খুন হয় রুবেল ওরফে কুত্তা রুবেল। এরপর এই বাহিনী আর বেশী দিন টিকেনি। পরবর্তীতে কিলার বাবু লালপুর, পৌষাপুকুর পাড় এলাকায় অবস্থান নিয়ে গড়ে তুলে নিজস্ব একটি বাহিনী। ২০১৫ সালের ১ জুন ফতুল্লার ডি,আই,টি মাঠে প্রকাশ্যে দিবালোকে ফরহাদ নামক এক যুবক কে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করার চেষ্টা করে কিলার বাবু সহ অপর সন্ত্রাসীরা। এ সময় স্থানীয় মহলে আতংক ছড়াতে বেশ কয়েক রাউন্ড ফাকাঁ গুলিও ছুড়ে আলোচনা আসে কিলার বাবু।