প্রমাণ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থার আশ্বাস জেলা প্রশাসকের...

প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর প্রতি দুই লাখ চায় ফজর আলী!

136
প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর প্রতি দুই লাখ চায় ফজর আলী

নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ:

মহান স্বাধীণতার স্বপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সারাদশের ভুমিহীন ও গৃহহীনদেরকে জমিসহ ঘর প্রদানের মতো মহৎ কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন তারই সুযোগ্য কণ্যা বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। তবে কতিপয় দুস্কৃতিকারী ও দুর্নীতিবাজদের কারণে ভেস্তে যেতে পারে মহৎ এ কার্যক্রমটি। এমনই ঘটনা ঘটেছে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার গোগনগর ইউনিয়ন পরিষদে।

এ ইউনিয়নে ভুমিহীনদের ঘর প্রদান কার্যক্রমের অংশ হিসাবে প্রাথমিক অবস্থায় ১৩৪ জনের তালিকা করা হয় বলে জানায় স্থানীয়রা। পরবর্তীতে দফায় দফায় যাচাই-বাছাই শেষে ৩৪জন গৃহহীন ও ভুমিহীনদের তালিকা করে উপজেলা প্রশাসন।

তবে তালিকায় থাকা এ ৩৪জনকে প্রধানমন্ত্রীর উপহার তথা সেই ঘর দিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে গোগনগর ইউনিয়নের সদ্য নির্বাচিত চেয়ারম্যান ফজর আলী, এমনকি তাদের প্রত্যেকের কাছে দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকা দাবি করেছেন এ চেয়ারম্যান এমন অভিযোগ করেন তালিকায় নাম থাকা এ ভুক্তভোগীরা।

ফজর আলীর এ দুর্নীতির বিরুদ্ধে বুধবার সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করাসহ জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

এসময় ভুক্তভোগীরা বলেন, আমরা সকলেই অত্যন্ত কষ্টে দিনাতিপাত করি। এক বেলা খেলে আরেক বেলা না খেয়ে থাকি। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ঘর দেয়া হবে বলে আমাদের নাম নিয়ে ৩বার যাচাই-বাছাই করা হয়। তালিকায় আমাদের নাম থাকার পরও চেয়ারম্যান ফজর আলী আমাদের ঘর দিবেনা বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। তবে, প্রত্যেকে আলাদা আলাদাভাবে দুই লাখ টাকা দিলে ঘর দিবেন বলেও জানান ফজর আলী।

তারা বলেন, আমরা গরীব মানুষ। দুই লাখ টাকা দিতে পারলে কি আর এ ঘর চাইতাম। নিজেরাই জমি কিনে ঘর বানাতাম। আমরা মাননীয় জেলা প্রশাসক স্যার, এমপি সেলিম ওসমান ও এমপি শামীম ওসমানের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। দরকার পড়লে তারা পুনরায় যাচাই-বাছাই করুক, তারপরও আমরা যেন আমাদের প্রাপ্য জমিটুকু প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পাই।

ঘর না দেয়ার বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী জানান, মূলত ফজর আলীর ভাই নওশাদ চেয়ারম্যান মারা যাওয়ার পর প্যানেল চেয়ারম্যান নুর হোসেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করে। ঐ সময়ে এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিদের যাচাই-বাছাই হয়। পরবর্তীতে গত নির্বাচনে ফজর আলীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দিতা করে হেরে যায় নুর হোসেন।

নুর হোসেন প্রতিদ্বন্দিতা করার কারণেই ফজর আলী আমাদেরকে নুর হোসেনের কর্মী-সমর্থক ভেবে এ ঘর দিতে চাইছেনা। অথচ প্রকৃত সত্য হলো, আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। এখানে প্রতিবন্ধী থেকে শুরু করে বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা যারা একেবারেই চলাফেরা করতে পারেন না তাদের নাম আছে। কিন্তু ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণেই ফজর আলী আমাদের ঘর দিতে চাইছে না।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে গোগনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফজর আলীর ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরে (০১৭৪৯৭০৩৫৩৫) বেশ কয়েকবার কল করা হলও তিনি কল রিসিভ করেন নি।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজকে বলেন, ওরা আমার সাথে দেখা করেছে। আমরা গতকাল পুরো জেলায় মাত্র ১৫টি ঘর বুঝিয়ে দিয়েছি। এখনো সবগুলো ঘর কমপ্লিট করা হয় নি। অনেক ঘর এখনো বাকি আছে। আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখবো, তালিকায় যদি তাদের নাম থাকে তাহলে পরবর্তীতে তাদের ঘর বুঝিয়ে দেয়া হবে।

তাদের কাছ থেকে টাকা চাওয়ার বিষয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, টাকা চেয়েছে কি চায়নি এটা প্রমাণের বিষয়। আমি তাদের কাছে জানতে চেয়েছি যে, টাকা চেয়েছে এমন কোনো প্রমাণ আছে কিনা। তারা কোনো উত্তর দিতে পারে নাই। এখানে টাকা চাওয়া বা নেয়ার কোনো সুযোগ নাই। তারপরও টাকা চেয়েছে এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া গেলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।