না:গঞ্জ হাইস্কুলের পুরো কমিটি বিলুপ্ত চায় অভিভাবকরা

258

নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ:

নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ নারায়ণগঞ্জ হাইস্কুলে চলছে হ-য-ব-র-ল অবস্থা। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি চন্দন শীলের একক ও অনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহন এবং দুই সদস্যের হাতে এক শিক্ষক লাঞ্চনার ঘটনায় দোষীদের বিচারের দাবিতে স্কুলটিতে এখন আর নেই শিক্ষার পরিবেশ। তাদের দ্বন্দ্বের কারণে অনিশ্চয়তায় পড়েছে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া, দু:শ্চিন্তায় পড়েছে অভিভাবকবৃন্দসহ সাধারণ শিক্ষকরা।

শিক্ষাবীদদের মতে, নি:সন্দেহে ম্যানেজিং কমিটির দুই সদস্য সরকার আলম ও ওয়াহিদ সাদাত বাবুর হাতে শিক্ষক লাঞ্চনার ঘটনা মারাত্মক অপরাধের শামিল। কিন্তু এ ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে সদস্যদের সাথে দ্বন্দ্বে লিপ্ত থাকা সভাপতি চন্দনশীল যে ফায়দা লুটতে চাচ্ছেন তাও উচিৎ নয়। তিনি নিজের স্বার্থ হাসিলে এবং নিজের অনৈতিক সিদ্ধান্তে যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে সেই লক্ষ্যে ঐ দুই সদস্যদের বিরুদ্ধে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করছে যা অত্যন্ত ঘৃণিত কাজ বলেও মনে করেন তারা।

জানা যায়, এ বিচারের দাবিতে শিক্ষকদের পাশাপাশি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দ্বারা স্কুল ও ক্লাস বর্জন করাতে উস্কানি দিচ্ছেন চন্দনশীল এমন দাবি অভিভাবকদের অনেকের। অভিভাবকদের অনেকে বলেন, ঐ দুই সদস্যের দোষকে সামনে রেখে নিজের ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছেন চন্দনশীল। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে বই-খাতা-কলমের পরিবর্তে মাইক তুলে দিয়ে তাদেরকে রাস্তায় নামার উস্কানিও দিচ্ছেন তিনি।

এঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্কুলটির সভাপতি চন্দন শীল নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠজন ও বন্ধু। আর এ প্রভাবের কারণেই দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছেন তিনি এমন দাবি ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকদের। তাদের মতে, যে কোনো স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির একজন সভাপতি পরপর দুবারের বেশী সভাপতি হতে পারবেন না এমন নির্দেশনা রয়েছে হাইকোর্টের। তবে সেই নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রভাবশালী মহলের চাপে তৃতীয় বারের মতো নারায়ণগঞ্জ হাইস্কুলের সভাপতি করা হয় চন্দন শীলকে।

তারা বলেন, দেশের বিচার বিভাগের অন্যতম স্তম্ভ তথা হাইকোর্টের নিয়ম ভাঙ্গার পরেও কোনো সংস্থা কর্তৃক তার বিরুদ্ধে এবং প্রভাবশালী ঐ মহলের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেন তিনি। ফলে তৃতীয়বার সভাপতি হয়েই একের পর এক নিয়ম ভাঙ্গাসহ স্কুলটিতে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টিতে উস্কানি দিচ্ছেন চন্দনশীল এমন অভিযোগ খোদ শিক্ষক, অভিভাবক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের।

জানা যায়, এর আগেও নানা অপকর্ম করেছেন সভাপতি চন্দনশীল, তবে সভাপতি হওয়ায় এবং প্রভাবশালী মহলের ভয়ে দু/একটি কথা বলে প্রতিবাদ করা ছাড়া কেউ তেমন কিছু বলতে সাহস পায় নি। তবে, এবার নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে এবং বিধি অনুযায়ী কোরাম না হওয়ার পরও গভর্নিং বডির সভাপতি চন্দন শীল ও মাত্র ১৫ দিন আগে চাকরিতে যোগ দেয়া অধ্যক্ষ মাহমুদুল ইসলাম ভুইয়া সভা করে অধ্যক্ষের বেতন ২৭ হাজার টাকা বৃদ্ধি করে। তাছাড়া,  মেরিট লিস্টে স্থান পাওয়ার পরেও চন্দনশীলের একক সিদ্ধান্তের কারণে অনেক শিক্ষার্থী এখনো ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেনা। তবে, অনৈতিক এসব সিদ্ধান্তের কারণে সভাপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগে বিষয়টি জানিয়েছেন ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আবদুস সালাম, সরকার আলম, ওয়াহিদ সাদাত বাবু, শিক্ষক প্রতিনিধি মো. আব্দুর রহিম ও সুলতানা ফাতেমা জান্নাতি।

মূলত এ অনাস্থা ও অভিযোগের পর থেকেই তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন প্রভাবশালী ঐ মহলটি দাবি ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের। আর আশির্বাদ হিসাবে তাদের সামনে আসে সরকার আলম ও ওয়াহিদ বাবু কর্তৃক শিক্ষককে লাঞ্চনার বিষয়টি। যার ফলে ঝোপ বুঝেই কোপ মারেন চন্দনশীল ও প্রভাবশালী মহল এমন দাবি সাধারণ অভিভাবকদের। তাদের মতে, আলম ও বাবুর এই অপরাধটি মোটেই কোনো ছোট অপরাধ নয়, তারপরেও ঐ শিক্ষককে শান্তনা দিয়ে সাথে রেখে এবং ছাত্রদের উস্কে দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করাচ্ছেন চন্দনশীল।

এদিকে, স্কুলের এক শিক্ষার্থীর বাবা মো. মিন্টু বলেন, সভাপতি ও সদস্যদের বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারণে স্কুলটিতে আর শিক্ষার পরিবেশ নেই বললেই চলে। আমার বাচ্চাকে স্কুলে পাঠাই লেখাপড়া করতে, আর স্কুলে গিয়ে দেখি তারা এই বাচ্চা বয়সে মাইক হাতে নিয়ে আন্দোলন করছে। এটা দেখেই আমি হতভম্ব হয়ে পড়ি। ম্যানেজিং কমিটির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে আমার বাচ্চার হাতে লেখাপড়ার উপকরণের পরিবর্তে আন্দোলনের সরঞ্জাম কেন থাকবে? তাই অনতিবিলম্বে এই পুরো ম্যানেজিং কমিটি ভেঙ্গে নতুন করে নির্বাচন দেয়ার দাবি জানান তিনি।

আরেক অভিভাবক আসলাম হোসেন বলেন, যেহেতু এটি একটি ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ। তাই জেলা প্রশাসকের উচিৎ বিদ্যালয়টিতে সর্বোচ্চ দৃষ্টি রাখা। তার মতে, এ স্কুলটির ঐহিত্য ধরে রাখতে হলে সরকারি বালিকা বিদ্যালয় যেভাবে কোনো ম্যানেজিং কমিটি ছাড়াই জেলা প্রশাসকের অধীনে পরিচালিত হয়, ঠিক সেইভাবে জেলা প্রশাসকের অধীনে পরিচালনা করা উচিৎ। তাহলেই স্কুলটিতে শিক্ষার ভালো একটি পরিবেশ সৃষ্টি হবার পাশাপাশি ম্যানেজিং কমিটির সদস্য-সভাপতি নির্বাচিত হয়ে নিজের আখের গোছানোর যে প্রতিযোগীতা তা থেকে পরিত্রাণ পাবে স্কুলটি এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

তাই শুধু সরকার আলম ও ওয়াহিদ সাদাত বাবু নয়, সভাপতি চন্দন শীল ও সদস্য আবদুস সালাম সহ পুরো ম্যানেজিং কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে স্কুলটিতে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানান সাধারণ অভিভাবকরা।