না:গঞ্জ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ছাত্র রাজনীতি

133

নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ: 

ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্রসমাজসহ বাম রাজনীতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর নিস্ক্রিয়তার কারণে নারয়ণগঞ্জ থেকে অনেকটা হারিয়ে যেতে বসেছে ছাত্র রাজনীতি। বসবাসযোগ্য একটি সুশৃঙ্খল নারায়ণগঞ্জ বিনির্মাণে রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর উল্লেখযোগ্য অবদান সবসময়ই ছিলো। অতীতের ছাত্র নেতাদের ত্যাগের মহিমা মিশে আছে নারায়ণগঞ্জের সর্বক্ষেত্রে। তবে ছাত্র রাজনীতির গৌরবজ্বল ইতিহাস আজ সোনালী অতীত বলে মনে করে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহল।

তাদের মতে, মহান স্বাধীণতা দিবস থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে নারায়ণগঞ্জের ছাত্র রাজনীতির রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। রাজনীতির সূতিকাগার হিসাবে পরিচিত এ নারায়ণগঞ্জে ছাত্র সংগঠনগুলোর ভূমিকা সবসময় থাকতো উপরের সারিতে। কিন্তু কালের আবর্তে ও পরিবর্তনের ধারা অব্যাহত রেখে এখন বদলেছে ছাত্র রাজনীতির সেই দৃশ্যপট। বর্তমানে ছাত্র সংগঠনগুলো বেহাল দশায় পড়ে আছে।

ছাত্রলীগ সুত্রে জানা যায়, জেলা-মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের পর থেকেই নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে ছাত্রলীগের কতিপয় নেতাকর্মীরা। ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক সেবনের ছবি ভাইরাল হয় ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মীদের। জাল দলিল, ষ্ট্যাম্প, জুয়ারী শাহজাহান কেলেঙ্কারীসহ কিছু অনিয়ম ও অনৈতিক কাজের অভিযোগ উঠে তাদের বিরুদ্ধে।
সর্বশেষ গত বছরের শুরুতে মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি বাতিল করা হয়। দীর্ঘ ১ বছরের বেশী সময় অতিবাহিত হলেও নতুন কোনো কমিটি ছাড়াই ঢিলেতালে চলছে মহানগর ছাত্রলীগের কার্যক্রম। নতুন নেতৃত্ব প্রত্যার্শীরা অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছে। তবে, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বিভিন্ন সভা-সমাবেশ কর্মসূচী দিয়ে চাঙ্গা রাখছে ঐতিহ্যবাহী এ ছাত্র সংগঠনটিকে।

ছাত্রদল সুত্রে জানা যায়, মশিউর রহমান রনি সভাপতি থাকা অবস্থায় নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের কার্যক্রম চোখে পড়তো। তবে, রনি যুবদলের সদস্য সচিব পদ পাওয়ার পর থেকে ঝিমিয়ে পড়ে এই ছাত্র সংগঠনটিও। বর্তমানে ঠিক কারা আছেন এই সংগঠনটির দায়িত্বে, খোদ জেলা বিএনপির অনেক নেতারাও তাদের নাম জানে না বলে জানিয়েছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা। বর্তমানে এ সংগঠনটি অত্যন্ত বেহাল দশায় আছে বলেও জানায় তারা।

মহানগর ছাত্রলদল সভাপতি সাহেদ আহমেদ এখন মহানগর যুবদলের সুপার ফাইভের সদস্য তথা যুগ্ম আহবায়ক পদে আসীন। ফলে মহানগর ছাত্রদলেও একই অবস্থা বিরাজমান।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের শুরেতেই ছাতরাজনীতি থেকে বিদায় নিয়ে আড়ালে চলে যাওয়ায় নারায়ণগঞ্জে ছাত্র শিবিরের কোন অস্তিত্ব নেই বলে জানা যায়। অথচ বিএনপি জামাত জোট সরকারের আমলে অন্য যে কোন সংগঠনের তুলনায় শিবির অন্যতম শক্তিধর সংগঠন হিসাবে দেশে তান্ডব চালিয়েছিলো বলেও অভিযোগ রয়েছে। বর্তমান আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসার পর নারায়ণগঞ্জে শিবিরের আধিপত্যের ইতি ঘটে।

জাতীয় পার্টির ছাত্রসংগঠন তথা ছাত্রসমাজের বর্তমান পদধারীরাও নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েছেন। গত বছরের শেষের দিকে, ফেসবুকে প্রভাবশালী এক নেতার নাম ভাঙ্গিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠে ছাত্রসমাজের জেলা ও মহানগর নেতাদের বিরুদ্ধে। যদিও এ অভিযোগ অস্বীকার করে নারায়ণগঞ্জ থানায় তারা জিডিও করেছিলেন। তবে, একথা নগরবাসী তথা জেলাবাসী সকলেই জানে, বিশেষ কিছু ব্যক্তির পিছনে ঘুরাঘুরি করা ছাড়া বর্তমানে ছাত্রদের পক্ষের কোনো আন্দোলনে ভুমিকা নেই ছাত্রসমাজের নেতাকর্মীদের। ফলে এ সংগঠনিও হারিয়েছে তাদের অতীত ঐতিহ্য।

প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে ছাত্রমৈত্রী, ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রফ্রন্ট সরকারের বিরোধীতা করে এবং গণমানুষের পক্ষে অবস্থান নিয়ে কার্যক্রম চলমান রেখেছে। সাংগঠনিক কার্যক্রম কিছুটা সক্রিয় থাকলেও উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক তৎপরতা নেই তাদের। স্বল্প সংখ্যক কর্মী দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে তাদের কার্যক্রম।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহলের মতে, আগে ছাত্ররাজনীতি থেকেই উঠে আসতো বড় বড় নেতাকর্মী। পরবর্তী আন্দোলন সংগ্রাম গুলোতে ছাত্রনেতারাই দিতো নেতৃত্ব। তখন যাচাই বাছাই করে কর্মী নিতো দলগুলো। কিন্তু এখন আর কোনো রকম যাচাই বাছাই করা হয় না। তদ্ববিরেই কমিটির অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীণ হয়ে যায় অনেকে। পরবর্তীতে যাচাই-বাছাই ছাড়া দলে যোগ দেয়া এসব নেতাকর্মীরাই বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে নিজ নিজ দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করে বলেও মনে করেন তারা। তাই পূর্বের ন্যায় যাচাই-বাছাই ও শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে ছাত্র সংগঠনগুলোতে কর্মী বাড়ানোর দিকে তাগিদ দেন তারা।