হতাশায় পদপ্রত্যাশীরা, দুষছেন আহবায়ক-সদস্য সচিবকে...

দেড় বছরেও পূর্ণাঙ্গ হয়নি মহানগর যুবদলের কমিটি

73
দেড় বছরেও পূর্ণাঙ্গ হয়নি মহানগর যুবদলের কমিটি

নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ:

নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের কমিটির ১৮ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি। গঠনতান্ত্রিক নিয়মে তিন বছরের জন্য এই কমিটি করা হয়। সংগঠনটির পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীদের অভিযোগ, গত কমিটির নেতাদের মতোই ‘কূট-কৌশল’ গ্রহণ করছেন বর্তমান কমিটির নেতারা। বিভিন্ন অজুহাতে বর্তমান কমিটির নেতারাও আগের মতো নানা অজুহাতে এটিকে পূর্ণাঙ্গ না করে মেয়াদ দীর্ঘায়িত করার চেষ্টায় আছেন। আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক বর্তমান কমিটির আহবায়ক। ফলে সব ‘কূট-কৌশল’ তার জানা রয়েছে বলে মনে করেন পদপ্রত্যাশীরা। তবে, কমিটির দায়িত্বপাপ্ত নেতারা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

আহবায়ক কমিটি গঠনের পর দেড় বছর সময় অতিবাহিত হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি কেন জানতে চাইলে মহানগর যুবদলের সদস্য সচিব মনিরুল ইসলাম সজল বলেন, ‘এ বিষয়ে আপনি কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে জিজ্ঞাসা করতে পারেন। কারণ উনারা না দিলে আমাদের কি করার আছে। উনারা আমাদের বলছে, সাংগঠনিক ইউনিট কমিটিগুলো খুব শীঘ্রই দিয়ে দিবে। এর বাইরে তো আর আমাদের কিছু করার নাই।

গত দেড় বছরে কোনো ইউনিট কমিটি গঠন করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটি কোনো নির্দেশনা না থাকায় ইউনিট কমিটি করতে পারি নাই। সংগঠন তো কেন্দ্রীয় সংসদ পরিচালনা করে। উনারা আমাদের কোনো নির্দেশনা দেয় নাই ইউনিট কমিটি করার জন্য। তবে, এতটুকু বলতে পারি, এ মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে সকল ইউনিট কমিটি গঠন করা হতে পারে। সকল কমিটির তালিকা দেয়া আছে, এখন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক কারা হবে, কেন্দ্র তা যাচাই-বাছাই করে কমিটি দিয়ে দিবে।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১৯ অক্টোবর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদকে সভাপতি ও মমতাজউদ্দিন মন্তুকে সাধারণ সম্পাদক করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের ৫ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষনা করে কেন্দ্রীয় যুবদল। আংশিক কমিটি ঘোষনার ৫ মাস পর খোরশেদকেই সভাপতি রেখে ২০১ সদস্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষনা করা হয়। এরপর ২০২১ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বাতিল করে দেয়া হয় মহানগর যুবদলের ঐ কমিটি। পরবর্তীতে একই বছরের ১৬ নভেম্বর মমতাজ উদ্দিন মন্তুকে আহবায়ক ও মনিরুল ইসলাম সজলকে সদস্য সচিব করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট নতুন আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন যুগ্ম আহবায়ক সাগর প্রধান, যুগ্ম-আহ্বায়ক মোয়াজ্জেম হোসেন মন্টি ও শাহেদ আহমেদ। এই কমিটির ১৮ মাস পেরিয়ে গেলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি তারা।

যুবদলের পদপ্রত্যাশী নেতারা বলছেন, ‘যত দেরিতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করবে ততই লাভ আহবায়ক ও সদস্য সচিবের। তাতে তারা বেশিদিন ধরে শীর্ষ পদে থাকতে পারবেন। কারণ পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেরিতে হলে তারা বলতে পারবেন কিছুদিন আগে কমিটি হয়েছে, এখন কীভাবে কমিটি ভেঙে দেবো। আরও কিছুদিন যাক, তারপর নতুন কমিটি দেবো। এছাড়া কমিটি হলে কেউ আর ভাইদের বাসা-বাড়িতে ধরনা দেবে না, এতে করে তাদের কদরও কমে যাবে।’

যুবদলের নেতাকর্মীরা দাবি করছেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ার কারণে কেউ ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে যায় না। কারণ আন্দোলন করতে গিয়ে গ্রেফতার হলে তার রাজনৈতিক পরিচয় কী হবে। কমিটিতে কোনও পদ থাকলে তবেই সুনির্দিষ্ট করে চিহ্নিত করে মুক্তির আন্দোলন হয় এবং তখন সংগঠনের ফান্ড থেকে অর্থ ব্যয় করে জামিনেরও ব্যবস্থা করা হয়। কমিটি না থাকার কারণে আন্দোলনে নামার ভরসার জায়গা তৈরি হয় না। ফলে গ্রেফতার এড়ানোর কৌশল নিতে গিয়ে কেউ আন্দোলনের মাঠে থাকছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহানগর যুবদলের এক নেতা বলেন, ‘অনেক সময় বিভিন্ন দিক থেকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার চাপ আসলে তখন আহবায়ক-সদস্য সচিব “অমুক মাসে কমিটি হবে” এমন আশ্বাস দেন। পরে দেখা যায় নানা সমস্যা দেখিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা থেকে পাশ কাটিয়ে যান। এমন করেই তিন বছরের কমিটির মেয়াদ ১৮ মাস পার করে দিয়েছে ৫ সদস্যের কমিটি।’

অভিযোগে সুরে পদপ্রত্যাশী এক নেতা বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটির জন্য একটি খসড়া তালিকা করা হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। এ নিয়ে আমরা যারা পদপ্রত্যাশী রয়েছি তাদের মধ্যে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আংশিক কমিটির শীর্ষ দুই নেতা তার নিজের লোক ও আর্থিক সুবিধা ব্যতীত অন্য কাউকে গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করছেন না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুবদলের গত কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘কমিটি দিয়ে দিলে তো ভাইদের কদর কমে যাবে। কেউ আর পদের জন্য ভাইদের বাসায় বাজার বা টাকা পয়সা দেবে না। এখন তো পদের আশায় অনেকে এসব করছেন। এই জন্য তারা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করছেন না।’ বর্তমানে সংগঠনটির সাংগঠনিক অবস্থা এতোই নাজুক যে যুবদলসহ বিএনপির নেতাকর্মীদের তিরস্কার করে অনেকেই বলে এটি ‘যুবদল’ নাকি ‘ডুবদল’।

যুবদলের অপর একটি সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রদলের সভাপতি থাকা অবস্থায় মনিরুল ইসলাম সজলের নিজস্ব একটি বলয় ছিল। তিনি চান সেইসব নেতাকর্মীদের যুবদলের পদ দিতে। অন্যদিকে যুবদলের সাধারণ সম্পাদক থাকা অবস্থায় মমতাজ উদ্দিন মন্তুরও একটি নিজস্ব বলয় ছিল। তিনি চাইছেন তার আস্থাভাজনদের কমিটিতে পদ দিতে। এই দুজনের কারণে কমিটির মেয়াদ মাঝ পথে থাকলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হচ্ছে না।

বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলটির অঙ্গ সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে নয়টি সংগঠন। এগুলো হলো– মুক্তিযোদ্ধা দল, যুবদল, মহিলা দল, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা, কৃষক দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, তাঁতী দল, ওলামা দল ও মৎস্যজীবী দল। এই সংগঠনগুলো নিজ নিজ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চলবে। নিজেদের কল্যাণ সাধনের পাশাপাশি বিএনপির কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহযোগিতা করাই হবে অঙ্গ সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য।

১৯৭৮ সালে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান যুবদল প্রতিষ্ঠা করেন। সংগঠনটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে– উৎপাদনমুখী রাজনীতি, মুক্তবাজার অর্থনীতি ও গণতন্ত্রের মাধ্যমে সামাজিক ন্যায়বিচার ভিত্তিক, সমাজ ব্যবস্থা, মানব কল্যাণমুখী অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জাতীয় সমৃদ্ধি অর্জনে প্রত্যেক স্তরে সৎ, মেধাবী ও নিঃস্বার্থ যুবকদের সমন্বয় সাধন করে আর্দশবান নেতৃত্ব গড়ে তোলা।