জেলা পরিষদ নির্বাচনে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা, ছাড় দিবে না কেউ

414
জেলা পরিষদ নির্বাচনে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা

নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ:

মনোনয়ন জমা দেয়ার পর থেকেই অনেকটা চুপিসারে ভোটার তথা বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন জেলা পরিষদ নির্বাচনের সদস্য পদপ্রার্থীরা। গতবার ১৫টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নির্বাচন হলেও এবার তা কমিয়ে ৫টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ২টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড করা হয়েছে। ফলে আগের তুলনায় বেড়েছে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর সংখ্যা, বেড়েছে জয়-পরাজয়ের তুমুল লড়াই। প্রার্থীদের কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজী নয়।

জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি চন্দন শীলের পাশাপাশি সাধারণ ওয়ার্ড নং ৪ (আড়াইহাজার) ও ওয়ার্ড নং ৫ (রূপগঞ্জ) এর সদস্যরাও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পথে। কেননা তাদের কারো বিপরীতেই অন্য কোনো প্রার্থী নেই।

তবে সাধারণ ওয়ার্ড নং ১ ও ৩ এ তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। কেননা ওয়ার্ড দুটিতেই রয়েছে উত্তর-দক্ষিণ মেরুর আলাদা আলাদা প্রার্থী। অপরদিকে, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা ও বন্দর উপজেলা নিয়ে গঠিত ২নং সাধারণ ওয়ার্ডের সকল প্রার্থী নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের কর্মী। এ ওয়ার্ডের দুই উপজেলায় বারটি ইউনিয়নে ভোট রয়েছে ১৫৮টি। সদর উপজেলার সাত ইউনিয়নে ৯২ ও বন্দরে ৬৬ ভোট।

এখানে জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ও ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক মোস্তফা হোসেন চৌধুরী, থানা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন, মদনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম এ সালামের ভাই ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য আরিফুর ইসলাম আলী নূর মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন।

এছাড়া, বন্দর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ধামঘর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুম আহম্মেদ, ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি সাইফ উল্লাহ বাদলের ভাই আমির উল্লাহ রতন, কলাগাছিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার প্রধানের ভাই রফিকুল ইসলাম সহ মোট ৯জন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।

জানা গেছে, ওয়ার্ডটিতে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন সজ্জ্বন ব্যক্তি হিসাবে সর্বজন স্বীকৃতি জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ও ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের স্বাস্থ্য-জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক মোস্তফা হোসেন চৌধুরী। কেননা গত ৫ বছরের কোটি টাকার উপরে উন্নয়ন কাজ করেছেন তিনি। ওয়ার্ডের মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজ, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সহ করোনাকালীণ সময়ে তার ভুমিকা ছিলো সকল প্রার্থীর উর্ধ্বে। কেননা অনেক তখন নিজ বাড়িতে নিরাপদে আশ্রয় নিলেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জনকল্যাণে নিয়োজিত ছিলেন মোস্তফা চৌধুরী। টিম মোস্তফা-১৯ নামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তৈরী করে শতাধিক মৃত ব্যক্তির দাফন-কাফন ও সৎকারের ব্যবস্থা করেন তিনি। এছাড়াও খাদ্য সহায়তায় তার ভুমিকা ছিলো অপরিসীম। ফলে সর্বদিক বিবেচনায় এগিয়ে মোস্তফা চৌধুরী এমনটাই দাবি তার ঘনিষ্ঠদের।

এদিকে, ওয়ার্ডটিতে নয়জন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম দাখিল করলেও সকলেই সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের অনুসারী হওয়ায় তার নির্দেশনাই সকলের কাছে শিরোধার্য হবে বলে জানা গেছে। প্রার্থীদের অনেকেই বলেছেন, আমাদের নেতা মাননীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান যে নির্দেশনা দিবেন যাকে নির্বাচন করতে বলতে বলবেন সেই নির্বাচন করবে।

অপরদিকে, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এলাকা নিয়ে গঠিত ১নং ওয়ার্ডে মেয়র আইভী অনুসারী তথা দক্ষিণ বলয় থেকে মনোনয়ন জমা দেন জাহাঙ্গীর আলম ও আলাউদ্দিন মিয়া। আর শামীম ওসমান বলয়ের প্রার্থী হিসাবে মাঠে রয়েছেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি মজিবুর রহমান।

আর সোনারগাঁ উপজেলা নিয়ে গঠিত ৩নং ওয়ার্ডে ওসমান পরিবারের অনুসারী প্রার্থী দুইজন। এরা হলেন ফারুক হোসেন ও আবু নাঈম ইকবাল। আইভী অনুসারী হিসাবে মাঠে আছেন মাহফুজুর রহমান কালামের ভাই ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম। এদের মধ্যে সবচেয়ে শক্ত অবস্থানে আছেন ফারুক হোসেন। কেননা তিনি শুধু শামীম ওসমান অনুসারীই নন, তার আপন দুই ভাইয়ের একজন সোনারগাঁ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান বাবু ওমর ও অপরজন কাচপুর ইউনিনের চেয়ারম্যান মোশারফ ওমর। ফলে এ ওয়ার্ডে জয়ের পাল্লা তার দিকে অনেকটাই ঝুঁকে আছে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।

আবু নাঈম ইকবাল জাপার প্রার্থী হওয়ায় স্বাভাাবিকভাবে দুই এমপি সেলিম ওসমান ও লিয়াকত হোসেন খোকার সমর্থন পাবেন তিনি। কেননা এবারের জেলা পরিষদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির একমাত্র প্রার্থী তিনি। তাই জয়ের ব্যাপারে তিনিও কারো থেকে পিছিয়ে নেই বলে দাবি তার সমর্থকদের।

এছাড়া সংরক্ষিত ১নং ওয়ার্ডে সাদিয়া আফরিন, আছিয়া খানম সুমি ও নাছরিন আক্তার মনোনয়ন ফরম দাখিল করেন। এদের মধ্যে সাদিয়া হচ্ছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাফায়েত আলম সানীর স্ত্রী ও ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এম শওকত আলীর মেয়ে। অপর দুই প্রার্থী তুলনামূলক দুর্বল হওয়ায় বিনা বাধায়ই সদস্য নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন সাদিয়া আফরিন।

সংরক্ষিত ২ নং ওয়ার্ডে এড. নূর জাহান, কোহিনূর ইসলাম, হাওয়া বেগম, সীমা রানী পাল, শাহিদা মোশাররফ মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছে। এদের মধ্যে শক্ত অবস্থানে আছেন মন্ত্রী গাজী সমর্থিত সীমা রানী পাল ও এমপি বাবু সমর্থিত শাহিদা মোশারফ। এছাড়া শাহিদা মোশারফ দুপ্তারা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যানও ছিলেন।

উল্লেখ, আগামী ১৭ অক্টোবর সোমবার অনুষ্ঠিত হবে জেলা পরিষদ নির্বাচন।