 কথায় নয়, বরং কাজে বিশ^াসী শামীম ওসমান দাবি স্থানীয়দের...

জলাবদ্ধতা নিরসনে শামীম ওসমানের ব্যাপক তৎপরতা

130
জলাবদ্ধতা নিরসনে ব্যাপক তৎপরতা শামীম ওসমানের

নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ:

পঁচা পানিতে নেমে নিজ এলাকার মানুষের খোঁজ-খবর নিলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ডিএনডি ও এর বাইরের জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করেন এ সাংসদ। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শুক্রবার (০৭ জুলাই) বিকেলে ফতুল্লার লালপুর এলাকায় দীর্ঘক্ষণ পানিতে হাটেন তিনি।

এর আগে, নিজে থেকেই এলাকাবাসীর দুঃখ-দুর্দশা ভাগাভাগি করে নিতে স্থানীয়দের সাথে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন সংসদ সদস্য নিজেই। এ সভায় উপস্থিত হয়ে বক্তব্য প্রদানের পূর্বে লালপুরের পানিতে হেটে এলাকাবাসীর সমস্যার কথা শুনেন তিনি।

পরে বক্তব্য দিতে এসে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের আশ^াস দেন এবং আগামীকাল থেকে সাময়িকভাবে শ্যালো পাম্প বা অগভীর পাম্প স্থাপনের ঘোষণা দেন তিনি। জেলা পরিষদের সহযোগীতায় ও তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে এ পাম্প দিয়ে পানি অপসারণের মাধ্যমে জলাবদ্ধতার অবসান করবেন বলে জানান শামীম ওসমান। পরে স্থায়ীভাবে এখানে পাম্প বসানোর ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে, শামীম ওসমানের এ কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন লালপুর সহ ফতুল্লাবাসী। পাম্প স্থাপনের ঘোষণা দেয়ায় তারা শামীম ওসমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, শামীম ওসমান যা বলেন তাই করেন, পাম্প স্থাপনের ঘোষণার মধ্য দিয়ে যা আরো একবার প্রমাণিত হলো। আসলে তিনিই আমাদের রিয়েল হিরো। অন্যান্য জেলার এমপিদের মতো জলাবদ্ধতার সমাধানের লক্ষ্যে শুধু বক্তব্য না দিয়ে নিজে পানিতে নেমে এলাকাবাসীর দুঃখ-দুর্দশার খোঁজ নেন তিনি। এতেই প্রমাণিত হয় শুধু কথায় নয়, বরং কাজে বিশ্বাসী শামীম ওসমান।

এসময় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, আমি নিজে পানিতে নেমে দেখে এসেছি, যে ঐ এলাকাটা পানিতে কি অবস্থা? আমি নিজে না দেখে কোনো কাজ করি না। এই সমস্যার সমাধান হবে।

আমরা দেখতে পাচ্ছি ইদানিংকালে কিছু কিছু মহল, ডিএনডির প্রজেক্টের সাথে এই প্রজেক্টকে মিলিয়ে ফেলছে। এটা কিন্তু ডিএনডির প্রজেক্ট না। ডিএনডির প্রজেক্ট বাংলাদেশে হওয়ার কোনো কারণই ছিলো না। কারণ এই এলাকাটা হচ্ছে কৃষি প্রজেক্ট। পাকিস্তান আমলে এটা কৃষি প্রজেক্ট ছিলো। ফতুল্লা এলাকায় এতো ইন্ডাষ্ট্রি হয়ে গেলো, যেখানে কমপক্ষে ১০ লাখ শ্রমিক কাজ করে। তাই হঠাৎ করে কৃষি প্রজেক্ট থেকে ইন্ডাষ্ট্রি হওয়ায় পানি নিস্কাশন কিছুটা কঠিন হয়ে পড়ে।

তিনি বলেন, ২০১৪ সালে সংসদের প্রথমদিন আমি ডিএনডি নিয়ে বক্তব্য রাখলাম। আবারও বললাম ডিএনডি নিয়ে, বলতে বলতে যখন আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি, তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সামনে আমি তৎকালীণ পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিষ্টার আনিসুল হককে বলেছিলাম আপনি উত্তর দেন জলাবদ্ধতার এ সমস্যা কবে সমাধান হবে। কেননা আমার এলাকার জনগন আমাকে এমপি বানিয়েছে, শুধু এমপিই নয় ভিআইপি বানিয়েছে, শুধু ভিআইপিই নয় আবার সেবা করার জন্য বেতনও দেয়। মাস শেষে আমি বেতনভোগী একজন সেবক। তাহলে আমার এলাকার মানুষের কথা আমাকে বলতে হবে এবং সমাধান করতে না পারলে আমাকে এখান থেকে বের হয়ে যেতে হবে এবং আমি চলে যাবো। আমার জাতির পিতার কন্যা জানে, এ যা বলে সেটা করে। উনি বুঝতে পেরেছেন সেদিন, যে এই মুহুর্তে যদি ওকে আশ^স্ত না করা হয় তাহলে ও সেকেন্ড কথা বলবে আমি পদত্যাগ করবো। কেননা আমার এলাকার ৩০ লাখ লোক পানির তলে ডুবে থাকবে, তাও ময়লা পানিতে, আর আমি বসে বসে গাড়িতে চড়বো, হাওয়া খাবো আর এমপিগিরি করবো। এটা হতে পারে না, আগেরকার ঐসমস্ত এমপি আমি না, যারা আগে ছিলেন। সাথে সাথে আমি দেখলাম, জাতির পিতার কণ্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা একটা হাতের ইশারা দিলেন ব্যারিষ্টার আনিস সাহেবের প্রতি। আনিস সাহেব আস্তে করে উঠে দাড়িয়ে বললেন, শামীম সাহেব আপনি চিন্তা কইরেন না, সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে, আপনার এলাকায় ডিএনডি প্রজেক্ট হবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা ৫৮২ কোটি টাকা পেলাম পানি নিস্কাশনের জন্য। টাকা আনার পরে আমি বললাম কাজ করবে সেনাবাহিনী। কেননা সেনাবাহিনী যখন কাজ করবে, তখন একুরেট কাজ হবে, তারা কোনা পার্সেন্টিজ খাবে না, অনেক কিছু ভাঙচুর করতে হবে, সেটা তারা করবে। প্রথমে আমার মামা শ্বশুরের জায়গা দিয়ে ভাঙ্গা শুরু হলো ইচ্ছা করে। যাতে করে, কেউ এসে আমাকে তদ্ববির করতে না পারে। এর পরে কাজ শুরু হলো, প্রায় ৭৮ কিলোমিটার খাল তারা করেছে। কিন্তু দুঃখজনক হলো এই খালকে তাদের ৩বার পরিস্কার করতে হলো। তারা খাল করে বেড়িয়ে যায়, আর আবার ময়লা ফেলে খাল ভরাট করে ফেলছে। তাহলে কি করবো আমরা? তারপরও যখন দেখলাম ডিএনডির পানি জমে গেছে, সেদিন আমি চাপ দেয়ার জন্য নিজে এসেছি। আমি এসে বলছি ময়লা পানিতে নেমে যাবো। আজ তো ঘোষণা দেই নাই, তাও আমি ময়লা পানিতে নামছি। আমি রাস্তার লোক, রাজনীতিবীদ, রাস্তা থেকে উঠে এসেছি। আমি কোনো সাহেব না, এমপি সাহেবও না, আমি শামীম শামীমই, এটাই আমার পরিচয়। আমার বাবা-দাদা তিন জেনারেশন ধরে মানুষের জন্য কাজ করছি। আলহামদুল্লিাহ, যা পেয়েছি তার চেয়ে বেশী চাওয়া-পাওয়ার কিছু নাই। আরেকবার নির্বাচন করবো কি, করবো না তা জানিনা। কালকে বাঁচবো কিনা তাই জানিনা, নির্বাচন করবো কিনা তা তো বহুদুরে। শকুনের দল তো অনেকে মাঠে নামছে। সেখানে আমি গিয়ে বলেছি, যদি পানি পরিস্কার না হয়, তাহলে আমি পানিতে বসে থাকবো। সাথে সাথে উনারা জান-প্রাণ দিয়ে কাজ করেছে, কাজ করে ডিএনডির পানিটা, ফতুল্লার পানিটা কুতুবপুর দিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ হয়ে বের হয়। আল্লাহর রহমতে ৯০% পানি উনারা নামিয়ে দিয়েছেন। উনারা পাম্প চালু করেছে। যে পাম্প আমরা বসিয়েছে, যে পাম্প পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম দামি পাম্প এবং এই পাম্পটার পানি কিন্তু ফিল্টারাইজ হয়ে যাচ্ছে। পিওর ওয়াটার হিসেবে যাচ্ছে, কালো পানি যাচ্ছে না। কিন্তু এই প্রজেক্ট বন্ধ হয়ে গেলো করোনার সময়। আবার দৌড়ালাম এটাকে ৫৮২ কোটি থেকে বাড়িয়ে ১২শ ৯৯ কোটি টাকা করা হলো। কোভিড, রাশিয়াা-ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা ইস্যুতে টাকাটা পেটে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। এই স্বল্পতার কারণে কাজে ধীরগতি হয়েছে। টাকাটা খুব শীঘ্রই পাওয়া যাবে। টাকাটা পুনরায় পাওয়ার পর ইনশ্আাল্লাহ সেনাবাহিনী দ্রুত কাজটা করবে। তারা আমাকে বলেছে, যদিও আমরা জুন মাস পর্যন্ত টাইম নিয়েছি, কিন্তু আমরা ডিসেম্বরের মধ্যে কাজটা শেষ করে দিবো ইনশ্আাল্লাহ।

এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বাবু চন্দন শীল, ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও বক্তাবলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম শওকত আলী, থানা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার লুৎফর রহমান স্বপন, ফতুল্লা থানা যুবলীগের সভাপতি মীর সোহেল আলী, থানা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি ফরিদ আহম্মেদ লিটন, থানা ছাত্রলীগের সভাপতি আবু মো. শরীফুল হক, জাতীয় পার্টির নেতা হুসেইন, আওয়ামীলীগ নেতা মোবারক, যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর প্রমুখ।