পরিস্কার বিভক্তির পথে জাতীয় পার্টি......

কোন পথে যাবেন নারায়ণগঞ্জের দুই এমপি?

90

নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ:

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার বিরোধী বক্তব্য রাখছেন জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দ। বিশেষ করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এখন যে বক্তব্য দিচ্ছেন তাতে তিনি এরই মাঝে পরিস্কার করেছেন যে তিনি আর কোনো পাতানো নির্বাচনে অংশ নিতে চান না।

এছাড়া জাতীয় পার্টি সাম্প্রতিক সময়ে এসে যতো নির্বাচনে অংশ নিয়েছে তাতে দেখা গেছে দলটির প্রার্থীরা খুবই কম ভোট পাচ্ছে। তাদের চেয়ে বেশি ভোট পাচ্ছে চরমোনাই পীরের ইশা আন্দোলনের প্রার্থীরা। কিন্তু এমন কোনো হলো? দেশেতো তিনটি দল মোটামোটি জনপ্রিয় দল হিসাবে পরিচিত ছিলো। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পরে ভোট ব্যাংক ছিলো জাতীয় পার্টির। লাঙ্গল ছিলো নৌকা আর ধানের শীষের পর সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রতীক।

তাই জিএম কাদের সহ জাতীয় পার্টির নেতারা আরো আগেই বুঝতে পেরেছেন, আওয়ামী লীগের সাথে জোট করে তাদের কি ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া বিগত দুটি বিতর্কিত নির্বাচনে তারা আওয়ামী লীগকে সমর্থন করায় দেশের মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়ার জন্য মানুষ জাতীয় পার্টিকেও দায়ী করছে। এতে জাতীয় পার্টির বেশ মোটা দাগে ক্ষতি হয়েছে বলে খোদ জিএম কাদের সহ তার দলের নেতাকর্মীরাই মনে করছেন এবং এ কথা বলছেন। তাই এ সময়ে এসে দেশের রাজনীতিতে ঘুরে দাড়াতে চায় জাতীয় পার্টি। তারা আর আওয়ামী লীগের সাথে থাকতে চায় না। তাই সময় মতো তারা সরকার বিরোধী আন্দোলনেও সামিল হবেন বলে ধারনা করা হচ্ছে।

ফলে প্রশ্ন উঠেছে শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টি যদি সরকার বিরোধী আন্দোলন নিয়ে মাঠে নামে তাহলে কি করবেন নারায়ণগঞ্জের জাতীয় পার্টির দুই এমপি? নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনের মাঝে দুটি আসন জাতীয় পার্টির এমপিদের দখলে রয়েছে। এগুলো হলো নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন এবং নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন। এই দুই আসনের এমপি হলেন যথাক্রমে একেএম সেলিম ওসমান এবং লিয়াকত হোসেন খোকা। তাই এই মুহুর্তে নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক মহলের মাঝে এই প্রশ্নটি ঘুরপাক খাচ্ছে যে শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টি যদি আওয়ামী লীগের সঙ্গ ত্যাগ করেন তাহলে নারায়ণগঞ্জের এই এমপিরা কি করবেন?

এদিকে দুই এমপির ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলি জানিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতির দিকে তীক্ষ্ম নজর রাখছেন দুই এমপি। সূত্র জানায়, এমপিরা জানেন শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টির মূল ধারা তথা জিএম কাদের যদি আওয়ামী লীগের সঙ্গ ত্যাগ করেন তাহলে রওশন এরশাদ থেকে যাবেন আওয়ামী লীগের সাথে। তখন এই দুই এমপি কি জিএম কাদেরের সঙ্গে থাকবেন নাকি রওশন এরশাদের সঙ্গে যাবেন সেটা সময় এলেই বুঝা যাবে।

তবে নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, এই মুহুর্তে সার্বিক পরিস্থিতি সরকারের অনুকুলে নেই। কারন যুক্তরাস্ট্র সহ পশ্চিমা বিশ্ব এবার যেভাবে সরকারকে চেপে ধরেছে বিগত পনেরো বছরে এমনটি দেখা যায়নি। যুক্তরাস্ট্রতো রীতিমতো ভিসা নীতি দিয়ে কঠোর অবস্থা নিয়েছে। তাই সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে সরকারের কাছে সেন্টমার্টিন দীপ চেয়েছে যুক্তরাস্ট্র। সেটা দিতে রাজী না হওয়ার কারনে তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্র করছে।

তবে, যুক্তরাস্ট্র দুতাবাস সরকারের এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তারা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে শ্রদ্ধা করেন। তাই তারা কেবল এই দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চান। তবে, যে যাই বলুক না কেনো এসব কথার মধ্য দিয়ে যে বিষয়টি পরিস্কার হয়েছে সেটি হলো বাংলাদেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি চরম ঘোলাটে আকার ধারন করেছে। বিশেষ কাে যুক্তরাস্ট্র সহ পশ্চিমা শক্তি যেকোনো মূল্যে বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাইছে। আর সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিটি এ দেশের সাধারন জনগনেরও দাবি। তাই এই ন্যায়সঙ্গত দাবিটির শক্তি অনেক বেশি। কারন সত্যের সাথে মিথ্যা লড়াই করে বেশিদিন টিকে থাকতে পারে না। যার ফলে জাতীয় পার্টির এমপিরাও এ বিষয়টি অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছেন বলে অনেকে মনে করেন।

তাই শেষ পর্যন্ত সেলিম ওসমান এমপি এবং লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি জিএম কাদেরের সাথেই থাকবেন বলে অনেকের ধারনা। কারন কাদের যা বলছেন তা তিনি সঠিক বলছেন। কেনোনা যে যতো কথাই বলুক এ সময়ে এসে বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো বিকল্পই থাকবে না বলে দেশের অধিকাংশ মানুষ মনে করেন।