তালিকাভুক্ত শীর্ষ ঋন খেলাপি সিআইপি হন কি করে?...

এবার বজলুর রহমানের সিআইপি কার্ড নিয়ে প্রশ্ন

343

নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ :

আবারও নিজেকে সিআইপি দাবি করছেন সরকারের তালিকাভুক্ত এবং মহান জাতীয় সংসদে ঘোষিত ঋন খেলাপি বজলুর রহমান ওরফে বজলু। তিনি সিআইপ লেখা ভিজিটিং কার্ড নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ফলে তার এই সিআইপি কার্ড পাওয়া নিয়েও ব্যবসায়ী মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হচ্ছে।

এর আগে এই বজলুর রহমানকে বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এর পরিচালক করা হয়েছে। এটা নিয়েও ব্যাবসায়ী মহলে প্রশ্ন উঠেছিলো। আর এবার তার সিআইপি কার্ড পাওয়া নিয়ে জোরালো প্রশ্ন উঠেছে। তবে আসলে এখন তার সিআইপি কার্ড আছে কিনা এটা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলছেন। নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন ব্যবসায়ীর সাথে আলাপ হলে তারা এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে বিদেশে রপ্তানী করে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনি। কিন্তু আমরা সিআইপি কার্ড পাই না। আর এই ব্যাক্তি (বজলু) দেশের একজন বড় ঋন খেলাপি এবং সরকারই তাকে ঋন খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করে জাতীয় সংসদে তালিকা প্রকাশ করেছে। তাহলে তিনি আবার সিআইপি হন কিভাবে? তিনিতো দেশের জন্য ক্ষতিকর একজন ব্যাক্তি। একজন ঋন খেলাপি। আসলে আমাদের এখানে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের মূল্যায়ন হয় না। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যারা ব্যবসার নামে লুটপাট চালায় তাদেরকেই মূল্যায়ন করা হয়। ফলে তার মতো একজন ঋন খেলাপি সিআইপি কার্ড পেলে সেটা খুবই দু:খজনক এবং প্রকৃত ব্যবসায়ীদের জন্য হতাশার কারন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জের বিশিষ্ট গার্মেন্টস ব্যবসায়ী প্রাইম গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ এর কর্ণধার আবু জাফর আহম্মেদ বাবুল বলেন, বজলুর রহমান আসলে সিআইপ কার্ড পেয়েছেন কিনা আমি জানিনা আর পেলেও কবে নাগাদ পেয়েছেন সেটাও জানিনা। যদি পেয়ে থাকেন তাহলে সরকারের বানিজ্য মন্ত্রনালয়কে ম্যানেজ করে পেয়েছেন। কারণ তার তেমন কোনো এক্সপোর্ট নেই। আমি যে পরিমান এক্সপোর্ট করি তার চার ভাগের এক ভাগও তিনি এক্সপোর্ট করেন না। তাই তিনি সিআইপি কার্ড পেতে পারেন না। কারন সিআইপি নির্ধারন করা হয় ব্যবসায়ীক পারফরন্সের উপর নির্ভর করে। কিন্তু আমাদের এখানে এখন আর সেটা হচ্ছে না। আমাকে সিআইপি কার্ড দেয়া হচ্ছে না।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর একজন ব্যবসায়ী বলেন বজলুর রহমান সব সময়ই নিজেকে সিআইপি দাবি করেন। কিন্তু তার কোনো এক্সপোর্ট নেই, তার এক্সপোর্ট জিরো। এছাড়া তিনি সরকারের তালিকাভুক্ত ঋনখেলাপি। তাই তিনি কোনো মতেই সিআইপি কার্ড পেতে পারেন না। আসলে তিনি ব্যাংক থেকে যে পরিমান টাকা ঋন করেছেন সেখান থেকে কিছু টাকা খরচ করে সমাজে প্রভাব বিস্তার করে আছেন। বাস্তবতা হলো, আমরা মনে করি সরকারের উচিৎ তার কাছ থেকে ঋনের টাকা আদায় করা। তিনি আরো বলেন, প্রতি বছর আমরা শত শত কোটি টাকা এক্সপোর্ট করি। অথচ আমরা সিআইপি কার্ড পাই না। তাই আমরা সরকারের কাছে দাবি করবো সরকার যেনো সিআইপি কার্ড দেয়ার সময় সঠিক পন্থা অবলম্বন করেন এবং প্রকৃত ব্যবসায়ীদের এই সন্মানজনক কার্ডটি প্রদান করেন।

এদিকে কারা পাবেন সিআইপি কার্ড এ বিষয়ে জানতে গুগলে সার্চ দিলে উইকপিডিয়ায় যে তথ্য রয়েছে তা নিম্নে তুলে ধরা হলো, বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি) উচ্চ মর্যাদার বাণিজ্যিক ব্যক্তিত্বদের বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। বিশেষত এশীয় দেশগুলিতে বিমানবন্দরের ব্যবসায়ী লাউঞ্জ প্রসঙ্গে এটি সাধারণ ব্যবহৃত একটি শব্দ, তবে ট্র্যাভেল এজেন্সিগুলোই সাধারণত এই শব্দ বেশি ব্যবহার করে। বাংলাদেশে এই শব্দটির আরও বেশি সুনির্দিষ্ট ব্যবহার রয়েছে এবং এটি জাতীয় স্তরের সম্মান।

বাংলাদেশে একটি সিআইপি হল একজন ব্যক্তি যিনি স্ব স্ব ক্ষেত্রে তাদের অবদানের জন্য স্বীকৃতি পাওয়ার পরে এক বছরের জন্য অনেকগুলি সুবিধা এবং সুযোগসুবিধাগুলি মঞ্জুরিপ্রাপ্ত হন। এই জাতীয় সিআইপি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে একটি বিশেষ আইডি কার্ড গ্রহণ করে। এই জাতীয় সিআইপিদের বাংলাদেশ সচিবালয় এবং সিটি কর্পোরেশনে প্রবেশ সহ বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানের জন্য নাগরিকের সংবর্ধনায় আমন্ত্রণ জানানো হয়। সিআইপির ব্যবসায়িক ভ্রমণের সময় বেশিরভাগ গার্হস্থ্য পাবলিক ট্রান্সপোর্টে আঞ্চলিক আসনের সুযোগ রয়েছে।

ভিসার সুবিধার্থে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট দূতাবাসকে একটি ‘চিঠিপত্রের পরিচিতি’ সরবরাহ করে। সিআইপি’র বিমানবন্দরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (ভিআইপি) লাউঞ্জগুলিতে অগ্রাধিকার পাওয়া যায় এবং সরকারী হাসপাতালে কেবিন বুক করার সময় তাদের পরিবারের সদস্যরা অগ্রাধিকার পান।

সাধারণত, সিআইপির প্রাথমিক তালিকাটি রফতানির পরিমাণ, আয়কর এবং মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট), ব্যবসায়, কর্মসংস্থান ইত্যাদি ধরনের উপর ভিত্তি করে প্রস্তুত করা হয়, পরে যোগ্য ব্যক্তিরা সম্মানের জন্য নির্বাচিত হয়ে থাকেন।

কিন্তু একজন বড় ঋন খেলাপি যোগ্য ব্যাক্তি হন কি করে সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। অন্তত বজলুর রহমান যে কোনো মতেই সিআইপ কার্ড পেতে পারেন না এটা এখন জোর দিয়েই বলা যায়। ব্যবসায়ীরা মনে করেন সরকারের উচিৎ তার এসব বিষয় ভালো মতো খতিয়ে দেখা।