নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় আবদুল হাই...

একমাত্র নেত্রীই পারবে শামীম-আইভী দ্বন্দ্ব নিরসন করতে

470

নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ:

নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের রাজনীতির এক উজ্জ্বল নক্ষত্র আবদুল হাই। মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনকারী এ বীর মুক্তিযোদ্ধার রয়েছে বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন। ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে এখনো পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে আছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের এ সভাপতি।

জানা যায়, ১৯৬৪ থেকে ’৬৭ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ শহর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, ’৬৭-৬৮ সালে ছিলেন বৃহত্তর ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি। ’৬৯-’৭০ এ পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতিও হন তিনি। ’৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রয়াত নেতা শেখ ফজলুল হক মনি’র নির্দেশে আগরতলার গ্লাস ফ্যাক্টরী ও জিরানিয়া বি.এল.এফ. ক্যাম্পে সদস্য বাছাই করার বিশেষ দায়িত্ব পালন এবং পরবর্তীতে শেখ ফজলুল হক মনি’র নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্দে অংশগ্রহন করেন।

পরবর্তীতে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, ’৯২-’৯৬ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি এবং ২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সমিতি নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতির দায়িত্বও পালন করছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়ে উঠা এ রাজনৈতিক নেতা।

সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ ডট কম অনলাইন পোর্টালের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় যুক্ত হন বর্ষিয়ান এ রাজনীতিবীদ। এসময় মুখোমুখি হন বিভিন্ন প্রশ্নের, উত্তর দেন এ নেতা। নীচে পাঠকদের জন্য হুবুহু তা তুলে ধরা হলো-

“নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ” কেমন আছেন?

“আবদুল হাই” আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজকে প্রথমেই ধন্যবাদ জানাই আমার সাক্ষাৎকার নেয়ার জন্য।

“নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ” একজন বর্ষিয়ান রাজনীতিবীদ হিসাবে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের সবচেয়ে বড় সমস্যা উত্তর-দক্ষিণ মেরুর দ্বন্দ্ব নিরসনে কোনো পদক্ষেপ নিবেন কিনা?

“আবদুল হাই” উত্তর-দক্ষিণ মেরুর যে দ্বন্দ্ব তা একটি জটিল প্রশ্ন নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের জন্য। এ দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে, এটা নিরসনের জন্য আমরা যে উদ্যোগ নেই নি, তা নয়। কিন্তু একের প্রতি আরেকজনের যে মারমুখী আচরণ, তার জন্য এটা নিরসন করা সম্ভব হয় নাই। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দও অবহিত আছেন, ভালো করেই তারা জানেন। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে আমরা এই চিত্রটা তুলে ধরেছিলাম এবং দ্বন্দ্ব নিরসনে তাদেরকেও উদ্যোগ নিতে বলেছিলাম। তবে আমার মনে হয় না যে, তারা খুব সাকসেসফুল হয়েছে।

নেত্রীর সাথে দেখা করে এ সমস্যা সমাধানের কথা বলবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেহেতু করোনার কারণে আমরা নেত্রীর সাথে দেখা করতে পারি নাই, আশা করি খুব শীঘ্রই আমরা তার সাথে দেখা করতে পারবো। তখন আমরা এ বিষয়টি নেত্রীর নজরে আনবো এবং উনি যাতে এ দ্বন্দ্ব নিরসনে উদ্যোগ নেন তা জানাবো। একমাত্র উনিই পারবেন এটা মিমাংসা করতে উভয়কে ডেকে। এছাড়া আর কারো জন্য ডিফিকাল্ট হবে এ বিষয়টা মিমাংসা করতে। শামীম-আইভী দ্বন্দ্ব মিটে গেলে আগামী নির্বাচনে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনে বিএনপি কোনো পাড়ই পাবে না, পাত্তাই পাবেনা বলে আমি মনে করি এবং বিশ্বাস করি।

“নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ” শামীম-আইভীর দ্বন্দ্বের কারণে কোনো পক্ষ লাভবান কিনা?

“আবদুল হাই” তৃতীয় পক্ষের কোনো স্বার্থ আছে বলে আমি দেখি না। তবে, হ্যা অনেকেই চায় যে দুপক্ষ একটু লাগালাগি থাকলে আমার দামটা একটু বাড়বে। দ্বন্দ্বটা মূলত শুরু হয়েছে ২০১১ সালের সিটি নির্বাচনের মাধ্যমে। সেই নির্বাচনটা হওয়া উচিত ছিলো, হলে কিন্তু আমরা দলের জনপ্রিয়তার ব্যারোমিটারটা বুঝতে পারতাম। তৈমূর আলমের জনপ্রিয়তা কতটুকু, মেয়র আইভীর জনপ্রিয়তা কতটুকু ও শামীম ওসমানের জনপ্রিয়তাটা কতটুকু তা আমরা দেখতে পারতাম। কিন্তু হঠাৎ করে বিএনপির একটি ভ্রান্ত সিদ্ধান্তের কারণে তৈমুরকে বসে পড়তে হয়েছে। বসে পড়ার কারণেই তাদের ভোটগুলো হয়তো এদিকে চলে এসেছে, তা নাহলে হয়তো ডিফারেন্স এতোটা হতো না।

তিনি আরও বলেন, তাছাড়া কোনো নির্বাচনেই ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর সাথে হেভিওয়েট কোনো প্রার্থী ছিলো না। ২০০৩ সালে নুর ইসলাম সরদার, ২০১৬ সালে সাখাওয়াত ও তেমন হেভিওয়েট প্রার্থী ছিলো না। আবার লোকমুখে শোনা যায় আমাদের দলের অনেকেই তাকে মদদ দিয়েছিলো, যদিও এর কোনো দালিলিক প্রমাণ আমাদের কাছে নেই। এবারও তৈমুরকে অনেকে সমর্থন করেছে বলে পত্র-পত্রিকায় দেখতে পেয়েছি। যদি এটা করে থাকে, তাহলে তারা সেটা ভালো করে নি।

“নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ” জেলা আওয়ামীলীগের কমিটির মেয়াদ শেষ আরও আগেই। কবে নাগাদ এ কমিটি ভেঙ্গে নতুন কমিটি গঠন করা হতে পারে?

“আবদুল হাই” আমাদের কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও সম্মেলনের জন্য কেন্দ্র থেকে কিছুই জানানো হয় নি। জানানো হলেই আমরা সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের ব্যবস্থা করবো। ইতিমধ্যেই আমরা সকল উপজেলার সম্মেলন করতে সক্ষম হয়েছি, সেই হিসাবে নতুন কমিটি গঠন করতে আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত। শুধু একটি উপজেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি, শীঘ্রই সেটি হবে বলেও জানান তিনি।

“নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ” আগামী নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনে নৌকার প্রার্থী থাকবে নাকি বর্তমানের মতোই দুটি আসনে জাপার প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়া হবে?

“আবদুল হাই” আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের শরীক দল জাতীয় পার্টিকে নারায়ণগঞ্জে যাতে কোনো আসনে ছাড় দেয়া না হয় সেই দাবি জানাবো। অতন্ত নারায়ণগঞ্জের মতো জায়গায় না দিয়ে, অন্য জায়গায় দেয়া হোক এ দাবি জানাবো। সোনারগায়ে জাপার এমপি নিয়ে ব্যাপক সমস্যা।

কারো কারো মদদে রাজাকারের বংশধররা এখানে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে উল্লেখ করে “আবদুল হাই” বলেন, আরেকটা সমস্যা হচ্ছে রাজাকারের ছেলে, নাতিরা নারায়ণগঞ্জে চেয়ারম্যান হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর খুনির ভাই কাউন্সিলর হবে এটা খুবই দু:খজনক। দুইটা রাজাকারের ছেলে চেয়ারম্যান হয়েছে। বন্দরের মুসাপুর ইউনিয়নের কুড়িপাড়ার রফিক রাজাকারের ছেলে মাসুম, বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এহসান এরা তো চিহ্নিত রাজাকারের ছেলে। এদের চৌদ্দ গোষ্ঠি রাজাকার। আগামী নির্বাচনে আমরা যদি কোনো কারণে ফেল করি, তাহলে তারা তো পুরোপুরি আমাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিবে, আমাদের কচুকাটা করবে। তারা আমাদের বিপক্ষে দলের সাথে থাকবে।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনির ভাই কাউন্সিলর হয়েছে, এটা প্রথম আমি বলেছিলাম কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে। যাই হোক তারপরেও সে যেহেতু তিনবারে ১৮ বছর জনপ্রতিনিধি থেকে একটা অবস্থান করে ফেলেছে, তাই তাকে আমরা পরাজীত করতে পারি নাই। তাকে মদদ কারা দিলো এ প্রশ্ন তুলে আব্দুল হাই বলেন, কারা তাকে মদদ দিলো। সাজনুও তখন নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলো, কিন্তু সাজনুকে ধমক দিয়ে বসিয়ে দেয়া হলো। সে তো আমাদের দলের লোক, সে তো আমার দলের নিবেদিত কর্মী, এভাবে বঙ্গবন্ধুর খুনীর ভাইকে মদদ দেয়া এটা কিন্তু অত্যন্ত গর্হিত অপরাধ।

তিনি আরও বলেন, আমি আওয়ামীলীগ করবো আবার আমি বঙ্গবন্ধুর খুনীর ভাইকে প্রশ্রয় দিবো এটাতো হতে পারে না। আমি বঙ্গবন্ধুর জন্য মায়া কান্না করবো, মিটিংয়ে গিয়ে বক্তব্য দিবো, বঙ্গবন্ধুর বাসায় গিয়েছি, বঙ্গবন্ধুর সাথে এই কথা হয়েছে, সেই কথা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে ছাড়া কিছু বুঝেন না, আবার বঙ্গবন্ধুর খুনির ভাইকে তারা প্রশ্রয় দিবেন, এটা যে কেউই দেক আমি তার ঘোরতর বিরোধীতা করে আসছি এবং করবো।

প্রশাসনের উদ্দেশ্যে এ নেতা বলেন, প্রশাসনে লোকজন আসলে কোনো কিছুর বিনিময়ে কিনা জানিনা একটু তাদের দিকে চলে যায়। এর মূল কারণ হলো নেত্রী পার্লামেন্টে দাড়িয়ে একদিন বলেছিলো না, ওসমান পরিবারকে ভুলে গেলে চলবে না। এটার পর থেকেই দেখা যায়, প্রশাসনের লোকজন নারায়ণগঞ্জে আসলেই তাদের দিকে ঝুকে পড়ে। কিন্তু একমাত্র এসপি হারুন ছিলো ব্যতিক্রম। উনি কিন্তু তার ক্যাডারদের সকলকে জেল খাটাইছে। উনি থাকলে কিন্তু এবারের ইউনিয়ন রেজাল্ট এরকম হতো না। আমরা যারা নিপীড়িত, নির্যাতিত এবং সাধারণ মানুষ তারা কিন্তু সবাইকে এসপি হারুনকে মিস করতো। সাধারণ মানুষ উনার কাছে গেলে বিচার পাইতো। আমি নিজেও দেখেছি উনি উনার অফিস থেকে নামার সময় সিড়ির মধ্যে মানুষের নানা সমস্যার বিষয়ে শুনতেন এবং সংশ্লিষ্ট থানার ওসিদের ব্যবস্থা নিতে বলতেন।

“নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ” দীর্ঘ সময় জেলা-মহানগর যুবলীগের কমিটি হয়না আপনাদের করণীয় কি বা এ কমিটিগুলো করতে কি পদক্ষেপ নিয়েছেন?

“আবদুল হাই” আমরা ইতিমধ্যেই কেন্দ্রকে জানিয়েছি আশা করছি শীঘ্রই বিলুপ্ত বা দীর্ঘ সময় না হওয়া কমিটিগুলো পুনর্গঠন করা হবে।

সর্বশেষে নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, মিডিয়ার প্রতি আমি সবসময় গুরুত্ব দিয়ে থাকি যদি সেখানে ইয়েলো জার্নালিজম না করা হয়। সঠিক সাংবাদিকতা করলে সবসময় স্বাগত জানাই। ইত্তেফাকের মানিক মিয়াকে পর্যন্ত আমি নারায়ণগঞ্জে এনেছি। গাফ্ফার চৌধুরী, গোলাম সারোয়ার সহ সিনিয়র সাংবাদিকদের সাথে আমার ভালো সম্পর্ক ছিলো। আনোয়ার হোসেন মঞ্জু সাহেব এবং আমরা তো একই ইউনিভার্সিটিতে ছিলাম, উনি আমার এক ব্যাচ সিনিয়র ছিলো। ছাত্রজীবনে আমরা একে অপরের খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলাম, যাই হোক সেটা অতীতের কথা।

সেই হিসাবে রফিকুল ইসলাম জীবন ভাই একজন ভালো মানের সাংবাদিক। আমি আশা করি তার উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এ নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করবেন এবং সত্যকে তারা তুলে ধরবেন সেটা যত অপ্রিয়ই হোক না কেন। তাহলেই নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাবে এবং আমরা নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজের সাথে আছি। আগামীতেও যতো সাহায্য-সহযোগীতা দরকার তা পাবে।