শীঘ্রই নতুন কমিটি গঠনের দাবি তৃণমূল নেতাকর্মীদের

340
শীঘ্রই নতুন কমিটি গঠনের দাবি তৃণমূল নেতাকর্মীদের

নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ:

বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের গঠণতন্ত্র অনুযায়ী আরও ১৪ মাস আগেই শেষ হয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদ। মেয়াদোত্তীর্ণ এ কমিটি ভেঙ্গে দ্রুততর সময়ের মধ্যে এবং সম্মেলনের মাধ্যমে শক্তিশালী কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন পদ-প্রত্যাশী নেতাকর্মীরা।

জানা যায়, জেলা আওয়ামীলীগের এ কমিটি গঠনের পর থেকেই উত্তর-দক্ষিণ মেরুর রাজনৈতিক বিরোধ, সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগ ও অন্যান্য কমিটি গঠনসহ নানা বিষয়ে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ-কোন্দল-গ্রুপিংয়ের কারণে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে কমিটির নেতৃবৃন্দসহ কার্যকরী সদস্য এবং তাদের কর্মী সমর্থকরা। দ্বন্দ্ব এতোটাই প্রখর যে, এক পক্ষ অপর পক্ষের বিরুদ্ধে কেন্দ্রে নালিশও করেছে। তাই এ দ্বন্দ্ব বন্ধ করতে, দলীয় শক্তি বৃদ্ধি করতে এবং সাংগঠনিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে শিঘ্রই নতুন কমিটি গঠন করার দাবী জানিয়েছে তৃণমুল নেতাকর্মীরা।

আরও জানা যায়, দলীয় হাইকমান্ড ২০১৬ সালের ৯ই অক্টোবর আব্দুল হাইকে সভাপতি, নাসিক মেয়র আইভীকে সহ-সভাপতি ও ভিপি বাদলকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা আওয়ামী লীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা দেন। এর ১৩ মাস পর ২০১৭ সালের ২৫ শে নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়।

দলীয় সুত্রে জানা যায়, হাই-বাদলের নেতৃত্বে গঠিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রথমদিকে বেশ প্রশংসা কুড়ালেও কিছুদিন পর থেকেই নেতৃবৃন্দের মাঝে শুরু হয় দ্বন্দ ও কোন্দল। প্রথমে ৬ শূণ্য পদ নিয়ে, পরবর্তীতে সোনারগায়ে ত্যাগী ও পরিশ্রমী নেতাদের বাদ দিয়ে এড. শামসুল ইসলামকে আহ্বায়ক ও নবীন আওয়ামীলীগার ইঞ্জিনিয়ার মাসুমকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ৮ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির অনুমোদনের মধ্য দিয়ে দুই গ্রুপের দ্বন্দ প্রকাশ্যে আসে। পরবর্তীতে এ নিয়ে মেয়র আইভীসহ ৩৮ জন নেতাকর্মী হাই-বাদলের বিরুদ্ধে কেন্দ্রে অভিযোগ করে, যার কারণে নেতাকর্মীরা তাদের উপর আস্থা রাখতে পারছে না বলে জানা যায়।

অপরদিকে, মন্ত্রী-এমপি-মেয়রদের বিরুদ্ধে অযাচিত হস্তক্ষেপের অভিযোগ এনে কেন্দ্র বরাবর চিঠি দেন হাই-বাদল। আর এ অভিযোগের কারণে বর্তমান কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বলেও জানায় তৃণমূল নেতাকর্মীরা। তাদের মতে, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, কেন্দ্র থেকে দু পক্ষকেই তলবসহ বেশ কিছু ইস্যুতে বর্তমান কমিটির নেতৃবৃন্দের মাঝে ঐক্য না থাকায় বিপাকে পড়েছে তৃণমুলের নেতাকমীরা।

তাছাড়া, দীর্ঘ সময় একই কমিটি বহাল থাকলে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হয় না এবং অভ্যন্তরীন দ্বন্দ-কোন্দল বাড়তে থাকে। তাই এ দ্বন্দের অবসান করতে এবং সংগঠনের গতিশীলতা আরো বৃদ্ধি করতে অচিরেই নতুন কমিটি গঠনের পদক্ষেপ নেয়া হতে পারে কেন্দ্র থেকে এমনটাই মনে করে তৃণমুলের নেতাকর্মীরা।

এদিকে, কারা আসতে পারেন নতুন কমিটির নেতৃত্বে তা নিয়েও চলছে নানা বিচার-বিশ্লেষণ। কারো কারো মতে, আবারো আব্দুল হাই থাকলেও বাদল মাইনাস হতে পারেন নতুন কমিটিতে। কারো মতে আবার, প্রভাবশালী মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক), মেয়র ডা: সেলিনা হায়াত আইভী, এমপি শামীম ওসমানসহ প্রভাবশালী কারো কাধে পড়তে পারে কমিটির দায়িত্বভার। অনেকে আবার মনে করে, নতুন নেতৃত্বের হাতে কমিটির দায়িত্ব তুলে দিয়ে চমকও সৃষ্টি করতে পারেন বঙ্গবন্ধু কণ্যা, আওয়ামীলীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতে, দুই মেরুর দ্বন্দ্বের কারণে যারা দু:সময়ে দলের হাল ধরেছেন, হামলা-মামলা, অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছেন, নেতৃত্ব দানের দক্ষতা-যোগ্যতা যাদের আছে এবং ত্যাগী ও পরীক্ষিত, এমন অনেককেই এ কমিটিতে না রাখার অভিযোগ রয়েছে। জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও আওয়ামীলীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য এড. আনিসুর রহমান দিপু, ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ সহ আরো অনেকেই এ কমিটিতে স্থান পাননি বলে জানা গেছে। ফলে, নতুন কমিটিতে যোগ্যদের সঠিক মূল্যায়ন করার দাবি জানান তারা।