যে সকল কারন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বীতা গড়ে তুলবে জামায়াত

76

স্টাফ রিপোর্টার :
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মাওলানা মঈন উদ্দিন আহম্মেদের জয়ের সম্ভাবনা বেড়েছে। বিশেষ করে ঢাকসু নির্বাচনের পর গতকাল সারা দিন ব্যাপী এই বিষয়টি ব্যাপক ভাবে আলোচিত হয়েছে। বিএনপির দিক থেকে দেশের তরুন সমাজ যে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তার প্রমান পাওয়া গেছে ডাকসু, জাকসু এবং চাকসু নির্বাচনে। কারন এই নির্বাচনগুলিতে জামায়াতের অঙ্গ সংগঠন শিবিরের প্রার্থীরা যে ভোট পেয়েছে বিএনপির অঙ্গ সংগঠন ছাত্রদল ভোট পেয়েছে তার অর্ধেক। তাই এসব নির্বাচনের একটি প্রতিফলন সারা দেশে পরবে বলেই নারায়ণগঞ্জের সর্ব স্থরের সাধারন মানুষ মনে করেন। সাধারন মানুষের মতে মূলত তিন কারনে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ছাত্রদলের পরাজয় ঘটেছে। আর এসব কারনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনেও বিএনপির পরাজয় ঘটতে পারে এবং জামায়াত প্রার্থী জিতে যেতে পারেন। বিশেষ করে কয়েকটি কারনে এই আসনে জামায়াত প্রার্থী মাওলানা মঈন উদ্দিন আহম্মেদের জনপ্রিয়তা ক্রমশই বাড়ছে। তবে নারায়ণগঞ্জর অনেক ভোটারের মতে বিএনপি যদি এই আসনে যোগ্য প্রার্থী দিতে পারে তাহলে পরিস্তিতি ভিন্ন হবে। আসনটিতে বিএনপির জনপ্রিয়তা বেশি। এছাড়[া হিন্দু ভোটাররাও এই আসনে একটি বড় ফ্যাক্টর। কিন্তু হিন্দুদের পছন্দের দল আওয়ামী লীগ এবারের এই নির্বাচনে অংশগ্রহন করছে না। তাই হিন্দু ভোটাররা কোন দলকে বেছে নেয় সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে কয়েকটি কারন বিএনপির প্রতি ভোটারদের দূর্বলতা অনেকটা কমেছে বলে মনে করেন আসনটির সাধারন মানুষ। তাই বিএনপিকে এই আসনে অবশ্যই যোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন দিতে হবে বলে তারা মনে করেন। তবে যে সকল কারনে বিএনপির জনপ্রিয়তা কমেছে বলে অনেকে মতামত ব্যাক্ত করেছেন সেই সকল কারন হলো,
১) নারায়ণগঞ্জ শহরে ফুটপাত দখল, ঝুট সন্ত্রাস, জমি দখল, পরিবহনে চাঁদাবাজী সহ সব কিছুর মূলে রয়েছে বিএনপির এক শ্রেনীর নেতা কর্মী। সাধারন মানুষ ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারে না। সারা শহরে যানজট লেগে থাকে। আর এসব কিছুর জন্যই মানুষ বিএনপিকে দায়ী করছে। এছাড়া এই শহরে বিএনপির ভেতরে বেশ কয়েকজন শীর্ষ চাঁদাবাজ রয়েছে। যারা নাকি এই এক বছরে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছে। তাই সাধারন ভোটাররা বিএনপির কোনো প্রার্থীকে ভোট না দিয়ে জামায়াতের প্রার্থীকে বেছে নিতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।
২) বিএনপি ২৪শের গণ আন্দোলনকে ধারন না করে তারা আওয়ামী লীগের ন্যারেটিভকে ধারন করেছে। তারা জুলাই আন্দোলনকে খাটো করে দেখেছে, আর অযথাই ৭১ কে টেনে এনেছে। অথচ এই জুলাই আন্দোলন না হলে খালেদা জিয়া সহ বিএনপির বহু নেতা আজও কারাগারে থাকতো। আওয়ামী লীগের মতো বিএনপি ৭১ এবং রাজাকার শব্দ দুটি ব্যবহার করেছে। অথচ এই ন্যারেটিভ ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ টানা ষোল বছর এবং তার আগে শেখ মুজিবের চার বছর দেশে লুটপাট, খুন, ধর্ষন চালানো হয়েছে। যারাই দেশের স্বার্থে কথা বলেছে তাদেরকেই আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী হিসাবে আখ্যায়িত করে নির্যাতন করেছে। বিএনপিকেও নির্যাতন করতে ছাড়েনি এবং জিয়াউর রহমানকেও পাকিস্তানের দোষর বলেছে। তাই বিএনপি ২৪ এর আন্দোলনকে বড় করে তুলে ধরতে পারতো এবং এর সুফল নিজের ঘরে তুলতে পারতো।
৩) ২৪ এর ৫ আগষ্টের পর বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের কিছু নেতা ভারতের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে এবং পলাতক আওয়ামী লীগের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তারা ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এটা হয়তো তারা আওয়ামী লীগের ভোট পাওয়ার জন্য করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের ভোটাররা বলছে ৫ আগষ্টের পর তারা বিএনপির দ্বারা নির্যাতীত হয়েছে, মামলার আসামী হয়েছে। তাই তারা কোনো মতেই বিএনপিকে ভোট দেবে না। কারন তৃনমূল পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দাবি তারা বিএনপির তৃনমূল দ্বারা নির্যাতীত। ফলে এদের ভোট কিছুটা হলেও জামায়াত প্রার্থীদের পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। বরং মির্জা ফখরুল, সালাউদ্দিন, রুমিন ফারহান এবং ফজলুর রহমানের কারনে বিএনপির বহু সমর্থক এখন জামায়াতে ইসলামীকে সমর্থন করছে।
৪) বর্তমান সময়ে এসে এই আসনের মনোনয়নকে ঘিরে বিএনপির ভেতরে তুমুল বিরোধ ছড়িয়ে পরেছে। দুই জন শিল্পপতি এবং বিএনপির চারজন দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীর মাঝে এই বিরোধ চলছে। তারা একে অপরের বিশোধগার করছে। ফলে বিএনপির প্রার্থীদের এই আচরনের কারনে সাধারন ভোটারদের মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। এতে আসনটিতে বিএনপির জনপ্রিয়তা কমছে। বিশেষ করে বিএনপি যদি যোগ্য প্রার্থী দিতে ব্যার্থ হয় তাহলে দলটির কট্টর সমর্থকদের অনেকে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীকে বেঁছে নিতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
এসব কারনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে জামায়াতের প্রার্থী মাওলানা মঈন উদ্দিন আহম্মেদের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেড়েছে বলেই অনেকে মনে করছেন। আর এই ক্ষেত্রে বিএনপি যদি প্রার্থী নির্বাচনে ভুল করে তাহলে জামায়াত প্রার্থীর জয় কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। কেনোনা এমনিতেই নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে মাওলানা মঈন উদ্দিন আহম্মেদ একজন পরিচিত মুখ। ##