যে কারনে শিষ্যের কাছে গুরু’র চূড়ান্ত হার

283
যে কারনে শিষ্যের কাছে গুরু’র চূড়ান্ত হার

নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ:

অবশেষে নিজের শিষ্য এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের কাছে চূড়ান্ত ভাবে হেরে গেলেন এডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার। নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, তৈমুর আলমের সীমাহীন লোভ আর অহংকারের কারনেই আজ তার নিজের এবং পরিবারের এই অবস্থা হয়েছে।

তারা মনে করেন, রাজনীতি থেকে একেবারে ছিটকে পরেছেন তৈমুর ও তার পরিবারের সদস্যরা। এমন কি তার সঙ্গে যারা রাজনীতি করেন তারাও কোনঠাসা হয়ে পরেছেন। ফলে তার এই ভুলের খেসারত দিচ্ছেন তার অনুসারী নেতাকর্মীরাও। তবে এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান তাদেরকে বিএনপির কর্মী হিসাবে বুকে টেনে নেবেন নাকি তৈমুরের অনুসারী হিসাবে দূরে ঠেলে দেবেন সেটা বুঝা যাবে আর কয়েকদিন পরে।

বিএনপি নেতাকর্মীদের মতে, এটা নারায়ণগঞ্জবাসী প্রায় সকলেরই জানা সাখাওয়াত একসময় তৈমুরের জুনিয়র আইনজীবী ছিলেন। তবে তিনি ছিলেন স্মার্ট এবং স্বাধীনচেতা। নারায়ণগঞ্জ বার’র নির্বাচনে যতোবার নির্বাচন করেছেন ততোবারই বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন সাখাওয়াত। কিন্তু পরবর্তীতে তাকে সন্দেহ আর হিংসার চোখে দেখতে থাকেন তৈমুর, তার অনুসারী এড. বারী ভুইয়া ও এড. ভাষানী প্রমুখ।

সাখাওয়াত অনুসারীদের দাবি, তবে সাখাওয়াত ছিলেন অনঢ়, অবিচল। তিনি তার মেধা, প্রজ্ঞা এবং বিনয়ী ব্যবহার দিয়ে বিএনপিপন্থীসহ সাধারন আইনজীবীদের মন জয় করে নেন। বিপরীতে এড, তৈমুর ছিলেন অনেকটাই দাম্ভিক এবং লোভীও বটে। কথিত আছে এডভোকেট তৈমুর কেবল নিতে জানেন কিন্তু দিতে জানেন না।

তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতে, বিএনপির রাজনীতি করে তিনি অনেক কিছুই পেয়েছেন কিন্তু বিনিময়ে দলকে দেননি কিছুই। বিপরীতে এডভোকেট সাখাওয়াত দুই হাতে উপার্জন করেছেন আবার দলের জন্য এক হাতে খরচও করেছেন। আর এভাবেই ধীরে ধীরে তিনি তার পায়ের নিচের মাটি মজবুত করেছেন।

জানা গেছে, সাখাওয়াতকে দাবিয়ে রাখার জন্য নারায়ণগঞ্জ বারের সভাপতি পদে বার বার মনোনয়ন দেয়ার কথা বলেও দেননি তৈমুর। ফলে এক পর্যায়ে বিদ্রোহ করতে বাধ্য হন সাখাওয়াত। পরবর্তীতে এক নির্বাচনে তৈমুরের পছন্দের প্রার্থী এড. বারী ভুইয়ার বিপক্ষে নির্বাচন করেন সাখাওয়াত। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন এড. আনিসুর রহমান দীপু। ফলে ত্রিমুখী এ লড়াইয়ে দুই হেভিওয়েট প্রার্থীকে বিপুল ভোটে পরাজীত করে জয়লাভ করেন সাখাওয়াত।

পরবর্তী নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করেন এডভোকেট সাখাওয়াত। বিপুল ভোট পেলেও পরাজীত হন তিনি। তবে বিগত সিটি নির্বাচন বয়কট করে বিএনপি, ফলে সাখাওয়াত নির্বাচন করার চেষ্টাই করেননি।

কিন্তু দলের সিদ্ধান্তের বাহিরে গিয়ে এই নির্বাচনে প্রার্থী হন তৈমুর। অনেকের মতে, একটি মহলের ইন্ধনে, টাকার লোভে নির্বাচনে অংশ নেন তিনি। অথচ বিএনপির কেন্দ্র থেকে বার বার নিষেধ করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে জেলা বিএনপির আহবায়কের দায়িত্বে থেকে এ নির্বাচন করতে পারেননা তিনি। তাকে বহিস্কার করার হুমকিও দেয়া হয়।

তারপরেও তিনি নির্বাচনী মাঠে থাকেন এবং নির্বাচনের আগেই বহিস্কার করা হয় তাকে। আর নির্বাচনেও বিপুল ভোটে হেরে যান। ফলে লোভে পরে আম-ছালা দুটোই হারান এডভোকেট তৈমুর। বিপরীতে তারই এক সময়কার শিষ্য হয়ে রাজনৈতিক সততা, দৃঢ়তা এবং সাহসীকতার সহিত সব কিছু মোকাবেলা করে শেষ পর্যন্ত মহানগর বিএনপির আহবায়কের পদটি বাগিয়ে আনতে সক্ষম হন এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। ফলে বলাই যায়, শিষ্যর জ্ঞান, মেধা আর প্রজ্ঞার কাছে হেরে গেলেন গুরু।