শাহরিয়ার রহমানের নির্দেশে...

ভুমি দখল করতে হাতের রগ কাটে ডিস বাবু ও ভুট্টো বাহিনী

20

নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ:

নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জ ডালপট্টি এলাকায় হাতের রগ কেটে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভুমি দখলের অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী সন্ত্রাসী ডিস বাবু, শাহরিয়ার রহমান ও মোখলেছুর রহমান ভুট্টো বাহিনী বিরুদ্ধে। রবিবার (০৩ নভেম্বর) সকালে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী বিমল চন্দ্র দাস ও মানিক চন্দ্র সাহা।

লিখিত বক্তব্যে বিমল চন্দ্র দাস বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক হওয়ায় সংখ্যালঘু হিসেবে বিগত আওয়ামী সরকারের আমলেও আমরা নির্যাতিত ছিলাম। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীণ সরকারের আমলেও আমরা নির্যাতিত হচ্ছি। ভালো সেন্টার নামে একটি প্রতিষ্ঠান খুলে মানবসেবার আড়ালে নিতাইগঞ্জ এলাকার উজির ভুইয়ার ছেলে আওয়ামী সন্ত্রাসী, ভুমিদস্যু শাহরিয়ার রহমানের নির্দেশে তার অন্যতম সহযোগী মোখলেছুর রহমান ভুট্টো ও ডিস বাবু বাহিনী আমাদের রেজিষ্ট্রি বায়নাকৃত ডালপট্টি এলাকার নিম্ন তফসিলভুক্ত সম্পত্তি দখলের চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।

২০১৭ সালে মৃত হাফিজ উদ্দিন ভুইয়ার ছেলে আব্দুল কাইয়ুম ভুইয়ার কাছ থেকে আমরা দুইজন (বিমল ও মানিক) এই ভুমি ক্রয় করার লক্ষ্যে রেজিষ্ট্রি বায়না করি। বায়না করার কিছুদিন পরই আব্দুল কাইয়ুম ভুইয়া মারা গেলে উজির ভুইয়ার ছেলে শাহরিয়ার রহমানের নির্দেশে সন্ত্রাসী মোখলেছুর রহমান ভুট্টো ও ডিস বাবু বাহিনী আমাদেরকে সেখানে প্রবেশে বাধা দেয় এবং মারধর করে। একইসাথে কম মূল্যে এই জমি লিখে দিতে হুমকি-ধামকিসহ নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। এক পর্যায়ে আমাকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে তার টর্চাল সেলে আটকে রেখে ব্যাপক নির্যাতন করে আমার বাম হাতের রগ কেটে ফেলে মোখলেছুর রহমান ভুট্টো ও ডিস বাবু গং। এরপর আমার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে মোখলেছুর রহমান ভুট্টো ও ডিস বাবু বলে, তোকে এখন মেরে ফেলবো, কেউ তোকে বাঁচাতে আসবে না। আমি বাঁচার জন্য আকুতি-মিনতি করলে আমাকে বলে, আমরা এখন ভিডিও করবো, তুই বলবি তোর পার্টনার ও তার বাবা তোর হাতের রগ কেটেছে এবং হাতের রগ কাটার অভিযোগে তোর পার্টনার মানিক সাহা ও তার বাবা নির্মল সাহার নামে মিথ্যা মামলা দিবি, তাহলে তোকে আমরা ছেড়ে দিবো। আমার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকলে তারা আমাকে ছেড়ে দেয়। তখন আমি জরুরী সহায়তা নম্বর ৯৯৯ এ ফোন দিলেও কোনো আইনগত সহায়তা পাইনি। সদর থানার তৎকালীণ ওসি সাহেবকে কল দিলে তিনিও কোনো সহযোগিতা করেন নি।

পরবর্তীতে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে এসে ভয়ে আমরা এই জমি অন্যত্র বিক্রি করার চেষ্টা করি। কিন্তু, উপরোক্ত সন্ত্রাসী বাহিনীর অপতৎপরতার কারণে কেউ আমাদের কাছ থেকে ভুমিটি ক্রয় করতে রাজী হচ্ছিলো না। তখন আমরা নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে এসে প্রেসক্লাবে সভাপতি আরিফ আলম দিপু সাহেবের দ্বারস্থ হই এবং তাকে সকল ঘটনা খুলে বলি। তিনি আমাদেরকে অপরাধীদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করতে বলেন। কিন্তু, অপরাধীদের ভয়ে সাহস না পাওয়ায় তখন আমরা সংবাদ সম্মেলন করিনি। তবে, আমরা নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে এসেছি এটা জানতে পেরে, ডিস বাবু কিছুটা পিছু হটে। ফলে, আমরা পুনরায় প্রেসক্লাবে যাই এবং প্রেসক্লাব সভাপতিকে অনুরোধ করি জমিটি পাওয়ার অব অ্যাটর্নী দলিল করে নিতে। কিন্তু তিনি এ বিষয়ে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে, আমরা কয়েক দফায় প্রেসক্লাবে এসে মানবিক কারণে পাওয়ার নেয়ার অনুরোধ জানালে এক পর্যায়ে মানবিক কারণে তিনি পাওয়ার নিতে রাজী হন। এর প্রেক্ষিতে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি আরিফ আলম দিপু এবং সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জীবন সাহেবকে কাইয়ুম ভুইয়ার স্ত্রী ও সন্তানদের কাছ থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নী দলিল করে দেই।

পরবর্তীতে, জমির বৈধ মালিক হিসেবে প্রেসক্লাব সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকবৃন্দ আমাদের এবং সার্ভেয়ারকে সাথে নিয়ে গত ২১ সেপ্টেম্বর জমিটির মাপ নির্ধারন করা হয় এবং মালিকানার স্বপক্ষে একটি সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়। পরে, শাহরিয়ারের নির্দেশে মোখলেছুর রহমান ভুট্টো বাহিনী সেই সাইনবোর্ড ফেলে দিয়ে ডিস বাবুর নামে একটি সাইনবোর্ড লাগায়। ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর ডিস বাবু ও মোখলেছুর রহমান ভুট্টো আত্মগোপনে চলে যায়। ডিস বাবু প্রকাশ্যে না আসলেও কিছুদিন পর মোখলেছুর রহমান ভুট্টো বাহিনী প্রকাশ্যে এসে ডিস বাবুর নামে থাকা ঐ সাইনবোর্ড সরিয়ে, উজির ভুইয়ার নামে নতুন সাইনবোর্ড স্থাপন করে এবং ভুমিতে নির্মাণ কাজ শুরু করে। বিষয়টি প্রেসক্লাব সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে জানালে তারা আদালতে একটি পিটিশন মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ৭৪৯/২৪।

এই মামলার প্রেক্ষিতে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানাকে তদন্তের নির্দেশ দিলে এএসআই কামাল ২৮ অক্টোবর সোমবার বিকেলে ভুমির সামনে আসতে বলেন প্রেসক্লাব সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে। ২৮ অক্টোবর সোমবার বিকেলে আমরা দুইজনসহ প্রেসক্লাব সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সেখানে গেলেও এএসআই কামাল কিছুক্ষণ পর সেখানে আসেন। তিনি আসার আগেই, মোখলেছুর রহমান ভুট্টো র‌্যালি বাগানের মাদক বিক্রেতা অর্ধশত নারী-পুরুষকে সেখানে জড়ো করে রাখে। আমরা কিছু বুঝে উঠার আগেই তারা আমাদের উপর চড়াও হয়। এসময় প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক সদর থানার ওসিকে পুনরায় কল করলে, তিনি এস আই কামাল ও এএসআই কামালকে ফোর্স নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যাওয়ার জন্য বলেন। তারা ফোর্স নিয়ে সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি আরিফ আলম দিপু সাহেব ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জীবন সাহেব, সত্যের জন্য মানবিক কারণে আমাদের পক্ষে লড়াই করতে গিয়ে আজ উল্টো তাদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার করছে সন্ত্রাসী ভুট্টো বাহিনী। এমনকি, তাদের নামে ১০৭ ধারা তথা হুমকি দেয়ার একটি মিথ্যা মামলাও দায়ের করেছে ভুমিদস্যু চক্র। এই অপপ্রচার ও মিথ্যা মামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। একইসাথে, শাহরিয়ার রহমানের সহযোগী মোখলেছুর রহমান ভুট্টো, ইদ্রিস ও তাদের সহযোগী নামধারী সাংবাদিক তথা তথ্য সন্ত্রাসীরা যে অপপ্রচার করছে এবং যে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে এরজন্য তদন্তপূর্বক দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, এতোদিন আওয়ামীলীগের প্রভাবের কারণে এবং উল্লেখিত সন্ত্রাসীরা আওয়ামীলীগের দোসর হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে সাহস পাইনি। আইনগত সহায়তা চেয়ে তিনি বলেন, মোখলেছুর রহমান ভুট্টো ও ডিস বাবু বাহিনীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করবো। প্রশাসন ও আদালতের কাছে আমি এর সঠিক বিচার দাবি করছি।

উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জ ম খন্ড মৌজাস্থ সি এস ৬৪৬ খতিয়ানের ১০৯৯ দাগ, এস এ ৬৮৪ খতিয়ানের ১৩৯৮ দাগ ও আর এস ১৩৭ খতিয়ানের ১৯৫২ দাগে ৯২.৮৫ শতাংশ হইতে ৭ শতাংশ ৪৩ পয়েন্ট ভুমির মালিক হাফিজ উদ্দিন ভুইয়ার ছেলে কাইয়ুম ভুইয়া। নামজারী পর্চা নং-৩০৮২ নিতাইগঞ্জ ডালপট্টি এলাকায় ৭ শতাংশ ৪৩ পয়েন্ট ভুমির মালিক হাফিজ উদ্দিন ভুইয়ার ছেলে কাইয়ুম ভুইয়া। জীবিত থাকা অবস্থায় এই জমির নামজারি করা হয়েছিলো কাইয়ুম ভুইয়ার নামে এবং তার মৃত্যুর পর স্ত্রী ও সন্তানদের নামে নামজারী করা হয়েছে। নামজারি পর্চা নং ৪০২৬। এই নামজারি বাতিল করার আবেদনসহ বিরোধী পক্ষ ৩টি মামলা দায়ের করে, যার সবগুলোতেই আব্দুল কাইয়ুম ভুইয়ার পক্ষ জয়ী হয়। সর্বশেষ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)’র নিকট থেকে ৩১ জুলাই ২০২৪ তারিখেও মামলার রায় পায় বলে জানায় তারা।

এসময় উপস্থিত ছিলেন আব্দুল কাইয়ুম ভুইয়ার ছেলে মোজাম্মেল হোসেন ভুইয়া, মোবাশে^র হোসেন ভুইয়া, মানিক সাহা প্রমুখ।