পার্কের রাস্তা-ফুটপাত ভাড়া দেয় স্থানীয় পান্ডারা

237
শেখ রাসেল পার্ক এখন হকারদের দখলে, ভোগান্তিতে জনসাধারণ

নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ:

নগরীর শেখ রাসেল পার্কের ফুটপাত ও রাস্তা ভাড়া দিয়ে টাকা আদায় করছে স্থানীয় পান্ডারা। অভিযোগ মতে, স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এসব পান্ডারা ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে ভাড়া দিচ্ছে হকারদের কাছে। ভাড়া নিয়ে বিভিন্ন পণ্য ও খাদ্য দ্রব্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন হকাররা। এ কারণে পার্কের ফুটপাত দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারছেন না পথচারীরা। ফলে উদ্বোধনের আগেই সৌন্দর্য্য হারাতে বসেছে শেখ রাসেল পার্ক।

জানা গেছে, নগরবাসীর বিনোদনের কথা চিন্তা করে নির্মাণ করা হচ্ছে নগরীর ১৬নং ওয়ার্ডের শেখ রাসেল লেক-পার্কটি। উদ্বোধন না হলেও পার্কের নির্মল বাতাস অনুভব করতে এবং প্রাকৃতিক পরিবেশে কিছুটা সময় কাটাতে প্রচুর লোক সমাগম ঘটে এখানে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে হকারদের কাছে বাড়তি আয় করছে স্থানীয় কতিপয় সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোকজন।

অবৈধ দোকানগুলোর মাঝে কোনো গ্যাপ না থাকায় লেকের ওয়াকওয়েতে মানুষ একবার নামলে উঠতে পারে না অথবা একবার উঠলে আর নামতে পারে না

স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মাণাধীন এ পার্কটি এখন হকার, স্থানীয় কিছু চাঁদাবাজ ও পান্ডাদের কাছে আয়ের বড় উৎস। ৫-৬ ফুট হিসাবে একেকটি দোকান বসিয়ে ৫০ হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত সালামি নেয় স্থানীয় ঐ পান্ডারা। একইসাথে প্রতিমাসে ভাড়া বাবদ নেয়া হয় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। ফলে ফকিন্নির ছেলেরাও নাকি লাখপতি হচ্ছেন ফুটপাতের এ আয় থেকে। এমনকি, লেকের আশেপাশের কিছু বাড়িওয়ালারাও লেকের ফুটপাত-রাস্তা দখল করে দোকান বসিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, পুরো পার্কের সামনের ফুটপাত ও রাস্তা হকারদের দখলে। চারুকলা ইন্সটিটিউটির গেইটের সামনে থেকে শুরু করে শুক্কুর কারী মসজিদের সামনে, সরদার বাড়ির সামনে, খানকা গলির মোড়, পাক্কারোডের মোড়, ২নং বাবুরাইলের মোড়, ১নং বাবুরাইলের মোড় হয়ে জিমখানায় পুরাতন মসজিদ পর্যন্ত প্রায় দুই থেকে তিন শতাধিক টং দোকান রয়েছে।

টং দোকান দিয়ে ফুটপাত দখল করে রাখায় মানুষ বাধ্য হয়ে সড়ক দিয়ে চলাচল করছে

রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ এসব টং দোকানে চা-পান-সিগারেট, চটপটি-ফুচকা, চিকেন ফ্রাই-টিক্কা, কাবাব, লুচি-পরোটা, ফাস্ট ফুড আইটেম, ফলসহ হরেক রকম খাদ্য দ্রব্য ও পণ্য বেচাকেনা চলছে। প্রত্যেক দোকানদার আবার ক্রেতাদের জন্য চেয়ার বসিয়েছে পার্কের ফুটপাতে। ফলে চলাচলের কোনো রাস্তা না থাকায় বাধ্য হয়ে মূল সড়ক দিয়ে হাটতে হচ্ছে পথচারীদের। এতে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। তবে এসব দেখার যেন নেই কেউ।

মাঝে মাঝেই শেখ রাসেল পার্কের ওয়াকওয়েতে হাটতে আসেন সাইফুল ইসলাম। ভোগান্তির বিষয়ে তিনি বলেন, ভোগান্তির কথা কি আর বলবো। আইভী আপা এতো সুন্দর লেক-পার্ক নির্মাণ করে দিলেন নগরবাসীর জন্য। কিন্তু হকারদের কারণে আমরা এর সুফল ভোগ করতে পারছিনা। ওরা যেভাবে দোকান খুলে বসেছে, তাতে আমাদের হাটাচলার কোনো জায়গাই নেই। তাই আমাদের তথা সাধারণ মানুষের দিকে বিবেচনা করে এদিকে নজর দেয়ার জন্য মেয়র মহোদয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

শেখ রাসেল পার্ক হকারদের দখলে, ভোগান্তিতে জনসাধারণ

ফতুল্লাতে তেমন কোনো পার্ক না থাকায় সময় পেলেই পরিবার নিয়ে শেখ রাসেল পার্কে আসেন জাহিদ হাসান। পার্কের পরিবেশ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এককথায় আইভী আপা নারায়ণগঞ্জবাসীকে অত্যন্ত সুন্দর ও চমৎকার একটি স্থান উপহার দিয়েছে। তবে, ফুটপাতের দোকানদারদের কারণে লেকের ওয়াকওয়েতে হাটা মুশকিল। তারা যেভাবে দখল করে রেখেছে কি আর বলবো? তবে, নাসিক কর্তৃপক্ষের উচিৎ পার্কটির দিকে একটু নজর রাখা, যাতে করে এতো সুন্দর একটি স্থান ও পরিবেশ দখলদারিত্বের কারণে হারিয়ে বা নষ্ট না হয়ে যায়।

উল্লেখ, পার্কের সামনে ফুটপাত বসাকে কেন্দ্র করে এর আগে দু দফা মারামারি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তবুও নীরব নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন।