ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছে নারায়ণগঞ্জের শিক্ষার্থীরা

777
ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছে নারায়ণগঞ্জের শিক্ষার্থীরা

নারায়ণগঞ্জ ফার্স্ট নিউজ:

সিলিং ফ্যান খুলে পড়ে আহত হয় নারায়ণগঞ্জ আইডিয়াল স্কুলের নার্সারীর দুই ছোট্ট শিক্ষার্থী। এতে এক শিশুর গাল কেটে প্রায় ৫-৭টি সেলাই করা হয়েছে এবং অপরজনের মাথায় আঘাত লেগেছে বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় সারা নারায়ণগঞ্জে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। একইসাথে নারায়ণগঞ্জের সকল স্কুলের শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা এখন সিলিং ফ্যান আতঙ্কে রয়েছে বলেও জানা গেছে। কখন যে কার মাথায় ফ্যান পড়ে দুর্ঘটনা ঘটে সেই ভয়ে অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে চাচ্ছেননা বলেও জানা গেছে।

আইডিয়াল স্কুলে সিলিং ফ্যান খুলে পড়ার পর ক্ষোভ প্রকাশ করেছে নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষ, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। কেননা স্কুলগুলো শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে মাসে মাসে টাকা নিলেও শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা, সুরক্ষার বিষয়ে কোনো কাজই করে না বলে অভিযোগ তাদের।

এদিকে, নারায়ণগঞ্জের সচেতন মহলের মতে, প্রতিটি স্কুল কমিটি কি পরিমাণ অর্থ আয় করে এবং তা থেকে কি পরিমাণ অর্থ কোন খাতে ব্যায় করে তা জানেনা কেউ। এমনকি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটি ছাড়া অন্য শিক্ষকরাও জানে না কোন খাতে কত ব্যায়। তবে, কোনো কোনো স্কুলে অভিভাবকদের নিয়ে লোক দেখানো মিটিং করা হলেও সেইসব মিটিংয়ে কোনো অভিযোগ করতে পারেনা অভিভাবকরা। কেননা কোনো অভিযোগ করলেই বাচ্চাকে অন্য স্কুলে ভর্তির পরামর্শ দেয় স্কুল কমিটি। তাই শত অনিয়মের পরেও কেউ কোনো অভিযোগ করে না।

তবে, দুই শিক্ষার্থী আহত হওয়ার ঘটনায় ফুসে উঠছে অভিভাবকরা। এদিকে, সিলিং ফ্যান পড়ে যদি শিশুটি মারা যেতো তাহলে এর দায়ভার কে নিতো? আর কি দায়ভারই বা নিতো এমন প্রশ্নও অভিভাবকদের। তাছাড়া জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে শিক্ষাখাতে আরোও বেশী সজাগ দৃষ্টি রাখার আহবান জানানা তারা।

এদিকে, নারায়ণগঞ্জ আইডিয়াল স্কুল, আদর্শ স্কুল, হাইস্কুল, মর্গ্যাণ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, গণবিদ্যা নিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়, উজির আলী হাই স্কুলসহ বেশ কয়েকটি স্কুলের শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, স্কুলগুলোর অধিকাংশ কক্ষের সিলিং ফ্যানগুলোরই লক্কর-ঝক্কর অবস্থা। যে কোনো সময় ফ্যান খুলে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তবে এসব বিষয়ে কোনো খেয়াল নেই স্কুল কর্তৃপক্ষের।

অভিভাবকরা আরও অভিযোগ করেন, স্কুলগুলোর খেয়াল শুধু কার কতো টাকা বেতন বকেয়া আছে সেই দিকে। একেকটি স্কুলে কমপক্ষে পাঁচশত টাকা থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন নেয়া হয় একজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে। তাছাড়া ক্লাসনোট, স্কুল কোচিংসহ নিত্যনতুন অজুহাতে টাকা হাতিয়ে নেয়াই স্কুলগুলো মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয় বলে অভিযোগ করেন অভিভাবকরা।

শুধু এ স্কুলগুলোই নয়, জেলার প্রতিটি স্কুলের অবস্থা প্রায় একই। কোনো কোনো স্কুলের পলেস্তার আর ঢালাই খন্ড ধ্বসে পড়ে শিক্ষার্থী আহতের ঘটনা ঘটেছে বলেও জানা গেছে। অনেক স্কুলে তো বিদ্যুৎ চলে গেলে আর চোখেই দেখা যায় না। প্রচন্ড গরমে কিছু স্কুলের কয়েকটি শ্রেণীকক্ষে ফ্যান ছাড়াই চলছে পাঠদান। দু/একটি স্কুল ছাড়া জেলার প্রায় প্রতিটি স্কুলেই শোচনাগারের বেহাল দশা। কিন্তু দেখার যেন কেউ নেই।

এদিকে, আইডিয়াল স্কুলে আহত ঐ শিশু চিকিৎসা নেয় নারায়ণগঞ্জ ৩০০শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে। তখন গাল কেটে যাওয়া ঐ শিশুটি সহ তার বাবা-মা উভয়েই কাঁদতে থাকে। এতে হাসপাতালটিতে এক হৃদয় বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় বলে জানায় চিকিৎসা নিতে আসা অন্য রোগীরা। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা অপর এক ব্যক্তি বলেন, শিশুটির গাল দিয়ে প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হচ্ছিলো। শিশুটির বাবা-মা উভয়েই কান্নাকাটি করছিলো। পরে তাদের শান্ত করে শিশুটির গালে প্রায় ৫-৭টি সেলাই করা হয়।